নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫ ১০:১৩ এএম
কী হবে ঐকমত্যের কমিশনের
বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পরস্পরবিরোধী অবস্থান দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য ও মন্তব্যের ভাষা ও ধরন হয়ে উঠছে আক্রমণাত্মক। দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের এমন সম্পর্কের নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে।
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ বা প্রস্তাবের বিষয়ে দলগুলো একমত হলেও ক্ষমতার ভারসাম্যসহ মৌলিক প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে মতপার্থক্য রয়ে গেছে। এবার শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা। কিন্তু মৌলিক প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে বিএনপি ও এনসিপির মতপার্থক্য থাকলে বিপাকে পড়তে পারে ঐকমত্য কমিশন।
গত এক সপ্তাহ ধরে বাগযুদ্ধের পাশাপাশি মাঠে শোডাউন অব্যাহত রেখেছে বিএনপি ও এনসিপি। অনেকদিন ধরেই বিএনপির জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবির বিপরীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দাবি করে আসছে এনসিপি। এর মধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে উৎখাত, শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণসহ এনসিপির বেশ কিছু ইস্যু বাস্তবায়নের আহ্বানে একাত্ম প্রকাশ করেনি বিএনপি।
সর্বশেষ বিএনপির নেতাকর্মীরা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র করার দাবি সামনে রেখে মাঠে নামলে বিরোধিতামূলক মন্তব্য করেন এনসিপির নেতারা। এরপর এনসিপি কর্মসূচি দেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে। এখানেও এনসিপির জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিটি সরাসরি বিএনপির জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়াকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে বলে দেখছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিরা বলছেন, বিএনপি ইশরাকের ইস্যুতে জয়ী হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি ধাক্কা দিতে চায়- যার চূড়ান্ত লক্ষ্য দ্রুত জাতীয় নির্বাচন আদায় করা। পাশাপাশি এনসিপির ওপরও একটা রাজনৈতিক চাপ তৈরি করতে চায়। কারণ বিএনপির নেতারা মনে করেন- এনসিপি একের পর এক ইস্যু সামনে এনে নির্বাচন পেছাতে চায়। অন্যদিকে ইশরাক ইস্যুতে আন্দোলনে বিস্তৃতি বাড়ার পর জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) পাল্টা চাপ তৈরির লক্ষ্যে কর্মসূচি নিয়েছে। তারা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তোলে। পরে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতি অনাস্থা জানিয়ে কমিশন পুনর্গঠনের দাবিতে নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে।
ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিকে ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে টানা কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিপির নেতারা মনে করছেন, বিএনপি মৌলিক সংস্কার পাশ কাটিয়ে তড়িঘড়ি করে নির্বাচন চায়। তারা ইশরাক হোসেনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দ্রুত নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে চাইছে। এর পাল্টা বিএনপির ওপর পরোক্ষ চাপ তৈরি করতে ইসির সামনে বিক্ষোভ করে এনসিপি।
ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার জন্য বিএনপির নেতারা সরকারকে দায়ী করছেন। গত বুধবার সকালে নির্বাচন ভবনের সামনে এনসিপির কর্মসূচির কয়েক ঘণ্টা আগে ইশরাক হোসেন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া (স্থানীয় সরকার) ও মাহফুজ আলমের (তথ্য ও সম্প্রচার) পদত্যাগ দাবি করেন।
পরবর্তীতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কাকরাইল মোড়ে আন্দোলনস্থলে এসে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে চলমান অন্দোলন আপাতত স্থগিত করেন তিনি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের আন্দোলনের নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও জানান ইশরাক। পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
তিনি ইসির সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতায় সরকারের তিনজন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ দাবি করে হুঁশিয়ারি জানান, সংস্কারের সুপারিশ বাস্তবায়িত না হলে তাদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে শিক্ষার্থীদের দুই প্রতিনিধিকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) সরাতে চাইছে। এর প্রতিক্রিয়ায় এনসিপিও অন্য তিন উপদেষ্টাকে ‘বিএনপিপন্থী’ আখ্যা দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। অথচ আগামীর বাংলাদেশের মূল চালিকাশক্তি এই ঐক্যকে বজায় রেখে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতার অবস্থান বজায় রাখার কথা ছিল।
কিন্তু লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, কোনো কোনো মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়ন করাই যেন সরকারের কর্মপরিকল্পনার অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বক্তব্য আমরা বারবার উচ্চারণ করেছি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।
ঐকমত্য কমিশন : ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ের আলোচনার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দলগুলোর সঙ্গে শিগগিরই দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। এ পর্যায়ে মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবগুলো আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা আছে, সেগুলো নিয়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হবে।
পবিত্র ঈদুল আজহার (জুনের প্রথম সপ্তাহ) আগে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হতে পারে। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হবে। আগামী জুলাই মাসে এ সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে ঐকমত্য কমিশনের। মৌলিক যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব আছে, সেগুলো মূলত সংবিধানসম্পর্কিত।
সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের যেসব উদ্দেশ্যের কথা উল্লেখ করেছে, তার অন্যতম হলো ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান রোধ এবং রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ- নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এনসিপি জোর দিচ্ছে মৌলিক সংস্কারে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে এবং এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা যাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে না যায়, সে জন্য সংবিধানে বেশ কিছু সংস্কার আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানো; এক ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না; একই ব্যক্তি একাধারে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলের প্রধান হতে পারবেন না; সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের জন্য জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন; আইনসভা (সংসদ) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করা এবং উচ্চকক্ষে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব-পদ্ধতিতে (একটি দল সারাদেশে যত ভোট পাবে, সে অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন পাবে) নির্বাচন; অর্থবিল ছাড়া নিম্নকক্ষের সদস্যরা তাদের দলের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা পাবেন ইত্যাদি।
এসব প্রস্তাবের মধ্যে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় সব দলই একমত হয়েছে; কিন্তু নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে মতভিন্নতা আছে। অন্য প্রস্তাবগুলোর ক্ষেত্রে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির মতপার্থক্য বেশি। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিশনের প্রস্তাবের সঙ্গে অনেকটা কাছাকাছি অবস্থানে আছে। এনসিপি জোর দিচ্ছে মৌলিক সংস্কারে। সংস্কার বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়েও দলগুলোর মধ্যে বড় ধরনের মতভিন্নতা আছে। অবশ্য সংস্কার বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া নিয়ে এখনো দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় এ বিষয় আসতে পারে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে এ কমিশন।
ঐকমত্য তৈরির অংশ হিসেবে পুলিশ সংস্কার কমিশন ছাড়া সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে স্প্রেড শিটে (ছক) রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মতামত নেয় ঐকমত্য কমিশন। যেসব সুপারিশের বিষয়ে আংশিক একমত বা ভিন্নমত ছিল, সেগুলো নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
গত ২০ মার্চ শুরু করে গত সোমবার দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে। দুই মাসে ৩৩টি দলের সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্য কমিশন। এর মধ্যে বিএনপি তিন দিন, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি দুই দিন করে প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অংশ নেয়।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা ও বিচার বিভাগ-রাষ্ট্রের এই তিনটি অঙ্গের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল’ (এনসিসি) গঠন করার প্রস্তাব ছিল সংবিধান সংস্কার কমিশনের।
তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর প্রধানদের এবং বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নিয়োগের জন্য এই কাউন্সিল রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠাবে। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়োগ দেবেন। বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে অন্য যে কোনো কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী করতে হয়। এনসিসি গঠন করা হলে সাংবিধানিক পদগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমবে। তবে এ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি একমত নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এনসিসি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির জোরালো আপত্তি আছে। তারা মনে করে, এ বিধান করা হলে সরকার দুর্বল হবে। সংবিধানের মূলনীতি, জরুরি অবস্থা জারির বিধান, সংবিধান সংশোধনপ্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতিসহ কিছু প্রস্তাব নিয়েও এখনো মতপার্থক্য আছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। একই ব্যক্তি একাধারে প্রধানমন্ত্রী, দলের প্রধান ও সংসদ নেতা হতে পারবেন না। এই দুটি প্রস্তাবে এনসিপি একমত। তবে এ দুটি প্রস্তাব নিয়ে ভিন্নমত জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি চায় কোনো ব্যক্তি টানা দুবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিরতি দিয়ে আবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এমন বিধান। আর দলের প্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদ নেতা কে হবেন, তা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়।
সংবিধানের মূলনীতি, জরুরি অবস্থা জারির বিধান, সংবিধান সংশোধনপ্রক্রিয়া, আন্তর্জাতিক চুক্তি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনপদ্ধতি, সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচনপদ্ধতিসহ কিছু প্রস্তাব নিয়েও এখনো মতপার্থক্য আছে।
এদিকে গত বুধবার এক সাক্ষাৎকারে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পদে একজন ব্যক্তি কতবার দায়িত্ব পালন করতে পারবেন, সংসদ কত কক্ষবিশিষ্ট হবে, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হবে, নির্বাচন কী পদ্ধতিতে হবে, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল, ৭০ অনুচ্ছেদ প্রভৃতি বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পুরোপুরি ঐকমত্য হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে ঐকমত্যে পৌঁছার।
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের এসব ইস্যুতে সব রাজনৈতিক দলকে একই প্ল্যাটফর্মে আনতে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করব। যদি না পারি, দায়িত্ব থেকে চলে যাওয়ার আগে জনগণকে সব জানিয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ছয় কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কয়েকশ প্রস্তাব পেয়েছি। এসব প্রস্তাব থেকে বাস্তবায়নযোগ্য ১৬৬ প্রস্তাব বাছাই করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে। আলোচনা চলবে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজের অগ্রগতিতে আমি সন্তুষ্ট।
ভোরের আকাশ/এসএইচ