নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫ ০১:৪৩ পিএম
সবজি-মুরগি নাগালে থাকলেও মাছের দামে অস্বস্তি
বাজারে সবজি ও মুরগির দাম অনেকটা কম। সপ্তাহের ব্যবধানে অপরিবর্তিত আছে ডিমের দামও। অন্য মুদি পণ্যগুলোর দামও স্থিতিশীল।
তবে মাছ ও গরুর মাংসের দামের অস্বস্তির মধ্যে পড়েছেন ভোক্তারা। বিশেষ করে ব্রয়লার মুরগির দাম সহনীয় হওয়ায় মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো আমিষের চাহিদা মেটাতে এখন সেদিকেই ঝুঁকছেন। রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে এমনটাই জানা গেছে।
শনিরআখড়া এলাকার এক বিক্রেতা বলেন, ‘গরুর মাংস এখন অনেকেই কিনতে পারছেন না। আগে দিনে ২০-৩০ কেজি বিক্রি করতাম, এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা বেড়েছে দ্বিগুণ।’
বাজারে বর্তমানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, যা অন্যান্য প্রাণিজ প্রোটিনের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী। বেশিরভাগ সবজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পটোল, ঢ্যাঁড়স, চিচিঙ্গা ও কাঁকরোল আছে এই তালিকায়। এছাড়া বরবটি, কচুর লতি, উস্তা, বেগুন, ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকায়।
রামপুরা বাজারের সবজি বিক্রেতা আহাদুজ্জামান বলেন, বাজারে গ্রীষ্মের সবজির প্রচুর সরবরাহ রয়েছে, যে কারণে দাম অনেকটা কম। অনেক এলাকায় বন্যার শঙ্কার কারণে অনেকে ক্ষেতের সবজি তুলে ফেলছেন। গত সপ্তাহের তুলনায় প্রায় প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা করে কমেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম নেমেছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে। কিছু বাজারে দাম ১৭০ টাকা হাঁকলেও দরদাম করলে ওই দামে কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০ টাকা কম। একইভাবে কমে সোনালী মুরগি প্রতি কেজি ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অপরদিকে নগরবাসীর মতে, মাছ ও গরুর মাংসের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে। এক ক্রেতা বলেন, আমরা যারা চাকরিজীবী, আমাদের সীমিত আয়ে গরুর মাংস বা বড় মাছ কেনা এখন বিলাসিতা মনে হচ্ছে।
রাজধানীর মাছ বাজারগুলোতে দেশি মাছের মধ্যে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১,১০০ টাকা, ৭০০–৮০০ গ্রাম ১,৭০০ টাকা এবং এক কেজি ওজনের ইলিশ ২,০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে । চাষের চিংড়ি ৭৫০–৮০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১,০০০–১,২০০ টাকা কেজি। শিং মাছ ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, শোল ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা, পুঁটি ৪০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা প্রতি কেজি ৩২০-৩৬০ টাকা, তেলাপিয়া প্রতি কেজি ২২০-২৪০ টাকা, পাঙাশ প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা, সোনালী ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি ৩২০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মাছ ও মাংসের দামের এই ঊর্ধ্বগতির অন্যতম কারণ হলো- বাজারে সরবরাহ কম ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি। তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় এবং সাশ্রয়ী দামে প্রোটিনের উৎস নিশ্চিত করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রয়লার মুরগি আপাতত সাধারণ মানুষের জন্য সস্তা প্রোটিনের অন্যতম সহজলভ্য উৎস হয়ে উঠেছে। তবে একাধিক স্বাস্থ্যসচেতন নাগরিক জানিয়েছেন, তারা বাধ্য হয়েই ব্রয়লার খাচ্ছেন, যদিও তা স্বাস্থ্যকর নয় বলে অনেকেই মনে করেন।
বর্তমান মাছ ও গরুর মাংসের বাজার পরিস্থিতি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগণের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। সাশ্রয়ী প্রোটিনের উৎস নিশ্চিত করতে বাজার তদারকির পাশাপাশি খামারিদের উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় কমিয়ে আনার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা