ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫ ০৬:৩৮ এএম
যানজট ও জলজটে নাকাল রাজধানীবাসী
যানজট ও জলজটে নাকাল রাজধানীবাসী। রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। আর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত সড়কে দিনভর অবস্থান করেন ইশরাক সমর্থকরা।
শাহবাগ ও মৎস্য ভবন এলাকা অবরোধের কারণে সৃষ্ট যানজটের তীব্রতার প্রভাব আশপাশের এলাকাগুলোতেও গিয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দুর্ভোগের শিকার হয়েছে নগরবাসী। এর মধ্যে এক ঘণ্টার বৃষ্টি এবং সাময়িক জলাবদ্ধতা যেন যানজটে নগরবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সাত ঘণ্টার বেশি সময় ধরে রাজধানীর শাহবাগ মোড় থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এ কারণে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে। সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে শতাধিক নেতাকর্মী প্রথমে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। পরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়েও অবস্থান নেন।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। তাদের দিনভর অবস্থানের কারণে শাহবাগ মোড়সংলগ্ন সড়কগুলোয় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন ইশরাক সমর্থকরা। সড়ক বন্ধ করে বিক্ষোভের কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রী ও পথচারীরা। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১১টায় ইশরাকের পক্ষে হাইকোর্টের রায় আসার পর নেতাকর্মীদের উপস্থিতি আরও বাড়তে থাকে।
খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে কর্মসূচিতে শামিল হন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। একপর্যায়ে যমুনা থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত পুরো রাস্তা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। পুরো রাস্তা দখল করে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা স্লোগান দিচ্ছেন। ইশরাকের মেয়র পদে বসার পথ সুগম হলেও এবার তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ চেয়ে স্লোগান দিতে থাকেন।
দুপুরে ইশরাক হোসেন তার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়তে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। এরপরই নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ক্রমেই বাড়ছে। যমুনার সামনে থেকে কাকরাইল, হেয়ার রোড, সার্কিট হাউজ ও মৎস্য ভবন মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে মৎস্য ভবন মোড়েও একই চিত্র। সেখানে মাঝ রাস্তায় বসে পড়েন কয়েক হাজার সমর্থক। সেই চাপ শিল্পকলা একাডেমি পর্যন্ত ঠেকেছে। মৎস্য ভবন মোড় দিয়ে প্রবেশ করতে না পারা গণপরিবহনগুলো সেগুনবাগিচা দিয়ে কাকরাইল মোড় দিয়ে যেতেও বিপাকে পড়েছে। সর্বত্রই একই অবস্থা। দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকা থেকে বিরক্ত হয়ে অনেকে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যের দিকে।
শিকড় পরিবহনের যাত্রী স্বপন রায় বলেন, তিনি শেওড়াপাড়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। গুলিস্তান থেকে প্রেসক্লাবের সামনে আসতেই যানজটের কবলে পড়েন। গাড়ি মৎস্য ভবন মোড় দিয়ে না গিয়ে সেগুনবাগিচা দিয়ে ঢুকলেও রেহাই মেলেনি। রাস্তার সেই দশা এখনও একই।
বৃষ্টি বিড়ম্বনা
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ জেলায় মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টার বৃষ্টিতে চরম দুর্ভোগে পড়ে নগরবাসী। সকাল থেকেই কালো মেঘে ঢাকা ছিল ঢাকার আকাশ। ঘড়ির কাঁটায় ১০টা বাজার কিছুক্ষণ পরই নামে ঝুম বৃষ্টি। টানা প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলা সেই বৃষ্টিতে নগরীর অনেক সড়ক ও অলিগলি ডুবে যায়। বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে সকাল সকাল ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ।
সরেজমিনে রাজধানীর মগবাজার, ওয়ারলেস মোড়, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া, কাকরাইল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভোগান্তির চিত্র। ওয়ারলেস রেলগেট এলাকায় হাঁটুপানি ডিঙিয়ে অফিস-আদালত ও গন্তব্যে ছুটতে দেখা গেছে অনেককে। জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা। মগবাজার ওয়ারলেস মোড়ে কথা হয় বেসরকারি চাকুরিজীবী রবিউল আলমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, খানিক সময় বৃষ্টি হলেই এই এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। হাঁটু সমান পানি মাড়িয়ে বাসার গলি থেকে বের হয়েছি। অফিসে যাবো, এখন গাড়িও পাচ্ছি না।
মালিবাগের বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আমাদের ভোগান্তির শেষ থাকে না। সামান্য বৃষ্টিতেই এলাকার অলিগলি রাস্তাগুলো ডুবে যায়। পুরো এলাকা পানিতে থৈ থৈ করে। এর কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঠিক না হলে এই দুর্ভোগ থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
এদিকে, বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে নগরীর মানুষকে পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় ঘটে দুর্ঘটনা। জমে থাকা বৃষ্টির পানির কারণে ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।
ভুক্তভোগীরা বলেন, বেশিরভাগ সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে। ফলে ড্রেনেজ পাইপের মুখে ময়লা-আবর্জনা, মাটি ও ইট-সুড়কি জমে থাকায় বৃষ্টির পানি দ্রুত সরতে না পারায় এ জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত বেহাল। ড্রেনগুলো সময়মতো পরিষ্কার না করা ও রাস্তাঘাট ঠিক না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের সড়কগুলো পানিতে সয়লাব হয়। এই সুযোগে নগরীর অলিগতিতে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট পরিবহন চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ