নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫ ১০:০৭ পিএম
ফাইল ছবি
মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা সারা দেশে সক্রিয়। এতে মঙ্গলবার রংপুর বিভাগ ছাড়া প্রায় সারা দেশেই বৃষ্টি বেড়েছে। রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলেই কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে মঙ্গলবার। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হয়েছে। ফেনীতে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে যা এখন পর্যন্ত জেলায় একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। এছাড়া ঝোড়ো হাওয়ার আশঙ্কায় তিন সমুদ্রবন্দর ও কক্সবাজারে ৩ নম্বর সতর্কসংকেতও বহাল রয়েছে।
অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধ্বসের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে ভারি বর্ষণে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনা মহানগরীর কোথাও কোথাও অস্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। ভারি বৃষ্টিতে ফেনী, খুলনা, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতাও তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বুধবারও (৯ জুলাই) দেশে বৃষ্টি বেশি থাকতে পারে। তবে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কিছুটা কমতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে সারা দেশে বৃষ্টি অনেকটাই কমতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। অন্যদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ফেনী জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
পাউবো জানিয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ফেনী জেলার মুহুরি নদীর পানি পরশুরাম পয়েন্টে বিপৎসীমার ১১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। অন্যদিকে সিলোনিয়া নদীর পানি জেলার সুবার বাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
বুধবার ভোর ৫টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করতে পারে। তবে এর পর থেকে পানি স্থিতিশীল থেকে ক্রমান্বয়ে কমতে পারে। এতে আজই জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, 'ফেনী জেলায় অতি ভারি বা অনেক বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মূলত অভ্যন্তরীণ বৃষ্টিপাতের প্রভাবে নদীর পানি বেড়ে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে ৮৯ মিলিমিটার বা এর বেশি বৃষ্টি হলেই তা অতি ভারি বৃষ্টিপাত। ফেনী ছাড়াও অতি ভারি বৃষ্টি হয়েছে দেশের আরো অন্তত ১১টি অঞ্চলে যার সব কয়টির অবস্থানই দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীতে ২৪৮ মিলিমিটার ও দক্ষিণ-পূবের জেলা লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ২২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া নোয়াখালীর মাইজদীকোর্ট এলাকায় ১৮৯ মিলিমিটার, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে ১৬৬ মিলিমিটার, ভোলায় ১৫৪ মিলিমিটার ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় ১৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় এসময় ২৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
আকস্মিক এত বেশি বৃষ্টিপাতের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, 'মৌসুমি বায়ু বা বর্ষা স্থলভাগে সক্রিয় অবস্থায় ছিল এবং দক্ষিণ-পুর্ব দিক থেকে বাতাস ছিল। সেই সঙ্গে লঘুচাপের প্রভাবও ছিল। লঘুচাপটি এখনও (গতকাল সন্ধ্যায়) গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপের ডান পাশে মূলত বৃষ্টি হয়। গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের ডান পাশেই বাংলাদেশের অবস্থান। সব মিলিয়েই বৃষ্টিপাতের তীব্রতা অনেক বেশি ছিল।'
এদিকে বুধবারও দেশের চার বিভাগের জন্য ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সক্রিয়তার কারণে বুধবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারি (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটার বা বেশি) বর্ষণ হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বুধবার রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় এবং রংপুর বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণও হতে পারে।
তবে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) থেকে সারা দেশে বৃষ্টি অনেকটাই কমতে পারে। এতে দিন ও রাতের তাপমাত্রাও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
ভোরের আকাশ/আজাসা