ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫ ০৮:৩১ এএম
তুহিন-মাহমুদুল-তানভীরকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সাবেক ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্যদিকে হাজির হয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরও। এদের মধ্যে তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসান গত মঙ্গলবার হাজির হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এসেছেন। আর গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে গতকালই তলব করেছিল দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদবির বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্যসহ নানাবিধ দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
তদবির বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের ডাকে গতকাল দুদক আফিসে গিয়েছিলেন এনসিপি থেকে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নেতা কাজী সালাউদ্দিন তানভীর। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তিনি জেলে যেতে রাজি বলে জানিয়েছেন।
তানভীরের দাবি, তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এদিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুদক কার্যালয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে।
দুদক কার্যালয় থেকে বের হয়ে সালাউদ্দীন আনভীর বলেন, অভিযোগ অসত্য ও ভিত্তিহীন। এর কারণে আমাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে হেয় হতে হয়েছে। যথাযথ তদন্ত হওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমে এসেছে ১১০ কোটি টাকা, কাগজে ৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতি হয়, এটা হয় কিভাবে? কিছুদিন আগেও ২৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির বিষয়টি এসেছে। যেকোনো অ্যাঙ্গেলে এর হিসাব খতিয়ে দেখা উচিত। এর সঠিকভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে ৬৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ এটা একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে। যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তাহলে তাকে তো মহাশক্তিশালী হতে হবে।
এদিকে ব্যক্তিগত জীবনের ব্যস্ততার কারণে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূর জাহান বেগমের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) ডা. মাহমুদুল হাসান। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অসত্য ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মাহমুদুল। গতকাল বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গণমাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তাকে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মাহমুদুল হাসান বলেন, মূলত গতকাল দুদক তলব করেছিল। আমি চিঠি পাইনি। গণমাধ্যমে জেনে আজ হাজির হয়েছি। অভিযোগও গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। অভিযোগ ছিল তদবির ও অনৈতিক লেনদেন। যা অসত্য। কোটি কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, আমি আসলেই মর্মাহত।
তিনি বলেন, আমি মূলত জুলাই আন্দোলনের আহতদের চিকিৎসার বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছি। ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। আরও আহতদের পাঠানো হবে। আমি পদে থাকি বা না থাকি আহতদের চিকিৎসা নিয়ে কাজ করে যাব।
পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহমুদুল বলেন, ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে আমি পদত্যাগ করতে চাই। আমি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করবো। এরপর তিনিই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন। গত ১৫ মে তাদের তলব করে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে তুহিন ফারাবি ও ডা. মাহমুদুল হাসানকে ২০ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেওয়া হয়। আর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সাময়িক অব্যাহতি পাওয়া যুগ্ম সদস্য সচিব গাজী সালাউদ্দিন তানভীরকে ২১ মে এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনকে ২২ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি দেওয়া হয়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ এপ্রিল উপদেষ্টাদের এপিএস ও পিওর দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করার দাবি নিয়ে দুদকে আসে যুব অধিকার পরিষদ। ‘মার্চ টু দুদক’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা দুদকে আসেন। পরে দলটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল দুদকে স্মারকলিপি জমা দেয়।
এ ছাড়া হাইকোর্টের দুই আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাদিম মাহমুদ ও অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুল ইসলামও প্রায় একই ধরনের অভিযোগ দুদকে দাখিল করেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ