লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৫২ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
অনেকেই দিন শুরু করেন এক গ্লাস টাটকা কমলার রস দিয়ে। সকালের নাস্তায় এটি একপ্রকার ঐতিহ্যেই পরিণত হয়েছে। ভিটামিন ‘সি’-সমৃদ্ধ কমলার রস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বক সুন্দর রাখে, এমনকি হৃদযন্ত্রেরও সুরক্ষা দেয়—এমনটাই সাধারণ ধারণা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সকালে খালি পেটে কমলার রস পান করা কি আসলেই নিরাপদ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরটা এতটা সরল নয়।
কমলার রসে কী কী পুষ্টি থাকে?
কমলার রস পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে আছে ভিটামিন ‘সি’, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ফোলেটসহ নানা প্রয়োজনীয় উপাদান। মার্কিন কৃষি বিভাগ (USDA)-এর তথ্য অনুযায়ী, এক কাপ (প্রায় ২৫০ গ্রাম) কমলার রসে থাকে প্রায় ১২২ ক্যালোরি, ২১ গ্রাম প্রাকৃতিক চিনি, ১.৭ গ্রাম প্রোটিন এবং ৪৪৩ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম।
এই রস কোষের ক্ষতি রোধ করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে, এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। তাছাড়া, যাদের কিডনিতে পাথর রয়েছে, তাদের জন্যও এটি উপকারী হতে পারে—কারণ এটি প্রস্রাবকে কম অ্যাসিডিক করে, যা কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করে।
খালি পেটে কমলার রস খাওয়া কতটা নিরাপদ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে খালি পেটে কমলার রস পান করলে অনেকের হজমে সমস্যা হতে পারে। কারণ এতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়ায়, বিশেষ করে যাদের গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা আছে তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর।
‘Roczniki Państwowego Zakładu Higieny’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কমলা ও আঙুরের রস খালি পেটে পান করলে GERD (গ্যাস্ট্রো-ওইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এতে পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালিতে ফিরে আসে, যা বুক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি তৈরি করে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কি সকালের নাস্তায় কমলার রস খেতে পারেন?
কমলা ফল হিসেবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাধারণত নিরাপদ, কারণ এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স প্রায় ৪৩। কিন্তু কমলার রস খাওয়া একেবারে আলাদা বিষয়। রস বানানোর সময় ফাইবার বাদ পড়ে যায়, ফলে এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুক্টোজ) সরাসরি রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খালি পেটে কমলার রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগী বা ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য ক্ষতিকর।
ফল না রস—কোনটি ভালো?
পুষ্টিবিদদের মতে, পুরো কমলা খাওয়া সব সময়ই রসের চেয়ে বেশি উপকারী। পুরো ফলে ফাইবার থাকে, যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজমেও সাহায্য করে। এছাড়া আস্ত কমলা খেলে পেটও ভালোভাবে ভরে, ফলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের আশঙ্কা কমে যায়।
অতিরিক্ত সেবনের ঝুঁকি
কমলা বা কমলার রস—দুটিই উপকারী, তবে পরিমিত পরিমাণে। অতিরিক্ত সেবনে দেখা দিতে পারে বুক জ্বালাপোড়া, ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, এমনকি দাঁতের এনামেল ক্ষয়ও। নিয়মিত অতিরিক্ত কমলার রস খেলে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি এবং হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তাহলে কীভাবে খাবেন?
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—
খালি পেটে নয়, খাবারের পর বা মাঝেমধ্যে কমলার রস পান করা ভালো।
চিনি ছাড়া টাটকা রসই সর্বোত্তম।
দিনে এক গ্লাসের বেশি না খাওয়াই উত্তম।
কমলার রস স্বাস্থ্যকর হলেও সময়, পরিমাণ ও অভ্যাসের ওপরই নির্ভর করে এটি উপকারী না ক্ষতিকর হবে। খালি পেটে নয়, বরং সঠিক সময়ে পরিমিত পরিমাণে কমলার রস পান করলেই পাওয়া যায় এর আসল উপকারিতা।
ভোরের আকাশ//হর