ভ্যাপসা গরমে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকবেন
ঢাকার দুপুর মানেই ভ্যাপসা গরম আর আর্দ্রতার চাপা যন্ত্রণা। মাথার ওপরে সূর্যের খরতাপ, গলিতে বাতাস নেই বললেই চলে, চারপাশ ঘোলাটে হয়ে ওঠে উত্তাপে। এমন দিনে বাইরে বের হওয়া যেন প্রতিদিনের এক যুদ্ধ।অফিসযাত্রী থেকে শুরু করে শ্রমজীবী মানুষ, কেউই রেহাই পান না এই গরমের দাপট থেকে। আর এই ভ্যাপসা গরম শুধু অস্বস্তি নয়, বরং শরীরের জন্য এক মারাত্মক ঝুঁকি। পানিশূন্যতা, হিট এক্সেশন কিংবা প্রাণঘাতী হিট স্ট্রোকের মতো সমস্যা যে কারও হতে পারে। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী নারী, প্রবীণ ও অসুস্থ মানুষের জন্য এই সময়টা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।চিকিৎসকরা বলছেন, গরমে শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য ঘাম ঝরায়। কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি হলে সেই ঘাম দ্রুত শুকায় না, ফলে শরীর ঠাণ্ডা হতে পারে না। এতে তাপ জমে শরীর ভেতর থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলেই দেখা দেয় হিট হিট এক্সেশনের লক্ষণ, অতিরিক্ত ঘাম, মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, পেশিতে খিঁচুনি এবং দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস। আর যদি তা দ্রুত সামলানো না যায়, তবে তা পরিণত হয় প্রাণঘাতী হিট স্ট্রোকে। এ সময় শরীরের তাপমাত্রা এত দ্রুত বাড়ে যে মস্তিষ্ক, কিডনি, লিভারসহ একে একে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে। বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে পড়া, অস্বাভাবিক আচরণ কিংবা ত্বক শুকনো ও গরম হয়ে যাওয়া হলো হিট স্ট্রোকের প্রধান লক্ষণ।বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় প্রতিরোধই সবচেয়ে বড় ওষুধ। কিছু নিয়ম মেনে চললে বড় বিপদ এড়ানো সম্ভব। আসুন জেনে নেই গরম কিছুটা প্রতিরোধ করার উপায়-১। সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন।২। তৃষ্ণা না পেলেও বারবার পানি পান করুন। যারা চিকিৎসকের পরামর্শে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করছেন, তারা নির্দেশ অনুযায়ী পানি পান করবেন।৩। হালকা, ঢিলেঢালা, সুতি ও হালকা রঙের পোশাক পরুন। বাইরে গেলে সানগ্লাস, সানস্ক্রিন, ছাতা বা টুপি এবং আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।৪। প্রচণ্ড গরমে ভারী কাজ বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।৫। বাইরে যাওয়া অনিবার্য হলে ছায়ায় থাকুন এবং সঙ্গে পানি রাখুন।৬। অ্যালকোহল, চা, কফি এবং কার্বনেটেড সফট ড্রিংকস এড়িয়ে চলুন।৭। অতিরিক্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার এবং বাসি খাবার এড়িয়ে চলুন।৮। ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করুন বা পা ভিজিয়ে রাখুন।৯। শিশু বা পোষা প্রাণীকে কখনোই গরম গাড়িতে রেখে যাবেন না।১০। অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।এছাড়া গরমের দিনে কিছু বাড়তি সতর্কতাও জরুরি। যেমন রান্নাঘরের ভেতরের তাপমাত্রা অনেক সময় ঘরের অন্য কক্ষের চেয়ে বেশি থাকে, তাই রান্নার সময়ও শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে।ভ্যাপসা গরমকে আমরা থামাতে পারি না, কিন্তু একটু সচেতন হলেই এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের ও প্রিয়জনকে রক্ষা করা সম্ভব। তৃষ্ণা মেটানো, হালকা পোশাক, সঠিক সময়ে বাইরে যাওয়া আর প্রয়োজনে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই, ভ্যাপসা গরমের দিনগুলো অনেকটা স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠবে।ভোরের আকাশ/তা.কা