তথ্য প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
ডিজিটাল যুগে এখন অনেকেই শারীরিক সমস্যার সমাধান খুঁজতে গুগলের বদলে সরাসরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআইয়ের শরণাপন্ন হন। কেউ কেউ সামান্য জ্বর, মাথাব্যথা বা পেটব্যথা দেখা দিলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এআই চ্যাটবটে লিখে জানতে চান রোগের কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি।
কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, সব সমস্যায় এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া মোটেও নিরাপদ নয়। অনেক ক্ষেত্রে এটি ভুল বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিতে পারে, যা রোগীর মানসিক চাপ বাড়ায় এবং চিকিৎসা নিতে দেরি করিয়ে বিপদের ঝুঁকি বাড়ায়।
ভারতের গ্লিনিগলস হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইন্টারনাল মেডিসিন) ডা. মঞ্জুষা আগরওয়াল বলেন, “এআই এখন চিকিৎসা তথ্যের বড় উৎস হলেও কিছু ক্ষেত্রে এর পরামর্শ নেওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ এতে সুস্থ হওয়ার বদলে উল্টো পরিস্থিতি জটিল হয়ে যেতে পারে।”
তিনি জানান, এআই কখনো শারীরিক পরীক্ষা করতে পারে না, প্রয়োজনীয় ডায়াগনস্টিক টেস্ট করাতে পারে না, রোগীর সম্পূর্ণ চিকিৎসা ইতিহাস জানে না এবং ভুল বা আতঙ্ক সৃষ্টিকারী পরামর্শ দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ছয়টি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় কখনোই এআইয়ের পরামর্শ নেওয়া ঠিক নয়—
১. বুকের ব্যথা
হঠাৎ বুকব্যথা শুরু হলে এক মুহূর্তও দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এটি হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে, যা দ্রুত চিকিৎসা ছাড়া প্রাণঘাতী হতে পারে।
২. স্ট্রোকের লক্ষণ
মাথা ঘোরা, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাত বা পা অবশ হয়ে যাওয়া, জড়ানো কথা বলা বা দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হওয়া—এসব স্ট্রোকের ইঙ্গিত। চিকিৎসকরা বলেন, “স্ট্রোকে প্রতিটি সেকেন্ড অমূল্য।” তাই এআইয়ের পরামর্শে সময় নষ্ট না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।
৩. তীব্র পেটব্যথা
হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা দেখা দিলে তা অ্যাপেন্ডিসাইটিস, পিত্তথলিতে পাথর কিংবা অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের লক্ষণ হতে পারে। এআই সাধারণ পরামর্শ দিতে পারে, কিন্তু প্রকৃত কারণ নির্ণয় করতে পারবে না। তাই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই সঠিক সিদ্ধান্ত।
৪. উচ্চজ্বরের সঙ্গে অজ্ঞান ভাব বা খিঁচুনি
উচ্চ জ্বরের সঙ্গে বিভ্রান্তি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বা খিঁচুনি দেখা দিলে এটি মেনিনজাইটিস বা অন্য কোনো গুরুতর সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এ অবস্থায় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না নিলে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
৫. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া বা দীর্ঘদিনের ক্লান্তি
অকারণে ওজন কমে যাওয়া বা দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি অনেক সময় বড় রোগের ইঙ্গিত দেয়—যেমন থাইরয়েড সমস্যা, ডায়াবেটিস কিংবা ক্যানসার। এআই এসব উপসর্গ দেখে সাধারণ ডায়েট বা জীবনযাত্রার টিপস দিতে পারে, কিন্তু সঠিক মেডিকেল বিশ্লেষণ দিতে অক্ষম।
৬. শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
হঠাৎ শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দিলে একদমই সময় নষ্ট করা উচিত নয়। এটি অ্যাজমা, ফুসফুসে সংক্রমণ বা হার্ট ফেইলিওরের লক্ষণ হতে পারে, যেখানে দ্রুত চিকিৎসা না নিলে জীবনঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
তাহলে কখন এআইয়ের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে?
ডা. আগরওয়ালের মতে, এআই সাধারণ জীবনধারা, সুষম খাদ্যাভ্যাস, ফিটনেস বা প্রাথমিক পরীক্ষার রিপোর্ট বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে কোনো চিকিৎসা সম্পর্কিত পদক্ষেপ নেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
ভোরের আকাশ//হর