কক্সবাজার কারাগার
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ মে ২০২৫ ১২:২৫ পিএম
সেবার মানে সন্তুষ্ট বন্দীরা, চাষাবাদেও সাফল্য
কক্সবাজার জেলা কারাগারে সেবার মান পরিবর্তনে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্র ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ নিয়ে বন্দীরাও সন্তোষ প্রকাশ করছেন। কারাগার কতৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় এই প্রথম ভেতরের খালি জমি আবাদ করে চলতি মৌসুমে সাড়ে ৮ হাজার কেজি সবজি উৎপাদন হয়েছে। যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
১২.৮৬ একর জমি নিয়ে কক্সবাজার শহরের অদূরে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে তোলা হয়েছে কক্সবাজার জেলা কারাগার। জেলখানার ভেতরের চার দেয়ালের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে ৮.৯ একর। এর মধ্যে পতিত খালি জমিও রয়েছে বিস্তর। এবার সেখানে প্রথমবারের মতো সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন কারা কতৃপক্ষ। আগামী মৌসুমে আরো পরিকল্পিতভাবে সবজি চাষের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
এদিকে শুধু চাষাবাদ নয়, বন্দীদের সেবায়ও এসেছে পরিবর্তন। প্রতি সপ্তাহে একবার বন্দীরা ৫ টাকায় স্বজনদের সাথে ১০ মিনিট করে কথা বলছেন। বাজারের স্বাভাবিক দামের মতো কারাবন্দিরা পাচ্ছেন নিত্যপণ্য। অবশ্য আগে জেল খানার ভেতর যেসব পণ্য বিক্রি হতো তার দাম ছিল বাজারদরের দ্বিগুণ।
গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন পরবর্তী যোগদান করা চৌকস জেল সুপার জাবেদ মেহেদী ও জেলার আবু মুছা কারাগারের ওই অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা বন্ধ করে দিয়েছেন। কারামুক্ত হয়ে আসা অনেকের সঙ্গে কথা হলে কারাগারের পরিবেশ সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
জানা যায়, বর্তমান জেল সুপার ও জেলারের সুদক্ষ পরিচালনায় কক্সবাজার জেলা কারাগার এখন দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। সম্প্রতি কয়েকজন কারারক্ষীর আচরণে পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হয়েছিল। বন্দীরা সাহস করে জেল সুপার ও জেলারকে এ ব্যাপারে অভিযোগ করেন। কতৃপক্ষ যথাযত তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পর পরিস্থিতি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে যায়। সদ্য জামিনে মুক্ত হওয়া মহেশখালী কালারমারছড়ার বিএনপি নেতা জিয়াউর রহমান মাতব্বরসহ একাধিক কারাবন্দি এ প্রতিবেদককে জানান, আগের সিট বাণিজ্যে হাসপাতালে থাকার সুবিধাদি নেই। জেল কোড অনুযায়ী চলছে জেলা কারাগার।
বিশেষ করে জেল সুপারের নেতৃত্বে কারাগারে শান্তি-শৃংখলা সৃষ্টি, কারা মনিটরিং, অসুস্থ বন্দিদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কারা ক্যান্টিনে ন্যায্যমূল্যের ব্যবস্থা, টেলিফোনে কথা বলা সার্বক্ষণিক তদারকি, বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন, পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সর্বোপরি বন্দীদের মৌলিক চাহিদাসমূহ পৌঁছে দিতে কাজ করছেন কারাগারের সকল কর্মকর্তা- কর্মচারীরা।
চিকিৎসাসেবা দেয়ার জন্য কক্সবাজার কারা হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন। কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল এলাকার জালাল আহমদ জেলে আছেন। তিনি জানান, বর্তমানে কারাগারের পরিবেশ বেশ চমৎকার। কারাগারে
প্রত্যেক বন্দীর সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসছে কারা কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয় মাদকসেবী বা কারবারি অনৈতিক কর্মকান্ড করতে না পারে সেজন্য কারারক্ষীদের সচেতন হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
ডেপুটি জেলার আবদু সোবহান বলেন, আমি যোগদানের পর থেকে কক্সবাজার জেলা কারাগারে কারা বন্দীদের প্রত্যক্ষ সেবা প্রদান করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারাগারে যাতে বন্দীরা সমান ভাবে সুযোগ সুবিধা ও সেবা পায় সেদিকে আমাদের কঠোর নজরদারি রয়েছে এবং কেউ যেন কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।
উল্লেখ্য কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী ধারনক্ষমতা ৮ শ ৩০ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে বন্দী রয়েছেন প্রায় ৩ হাজার। উক্ত কারাগারে মায়ের সাথে বিনা অপরাধে জেল খাটা শিশুদের রোজ দুইবার তরল দুধ দেওয়া হয়। জেলে থাকা এসব শিশুদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার (পরিচর্যা) সেন্টার। শিক্ষকরা রোজ তাদের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কারাভ্যন্তরে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নকারীদের বেশিরভাগই হচ্ছেন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহীরা। কারাগারে ৩০০ জন বন্দি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ৬ তলা ভবন উদ্বোধন হওয়ায় বন্দিদের দূর্ভোগ আরো কমেছে। তাছাড়া আইসিআরসি কর্তৃক কারাগারের বাইরে ২ টি গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছে ইতোমধ্যে।
কারাগারে মশা নিধনের জন্য রয়েছে ফগার মেশিন। জেলার বলেন,কারাগারের সেবার মান বাড়িয়েছি আমরা। যেকোন অভিযোগ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে অধূমপায়ীদের আলাদা ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ধূমপান বিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। শুধু কারারক্ষী নয়, কয়েদী হাজতীদের দ্বারা যেন কেউ নির্যাতিত ও হয়রানীর শিকার না হন সে জন্য বিশেষ নজরদারীর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা