ফাইল ছবি
দেশে বর্তমানে খাদ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত সন্তোষজনক, দাবি করে খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, বোরো মৌসুমে আশা অনুরূপ ফলন হয়েছে। যদি আমন মৌসুমেও ভালো ফলন হয়, তাহলে বিদেশ থেকে আর চাল আমদানির প্রয়োজন হবে না। গতকাল শুক্রবার পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় খাদ্য অধিদপ্তরের পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, চলতি বোরো মৌসুমে পটুয়াখালী জেলায় ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন ও ৫ হাজার ৬৯৫ মেট্রিক টন। ইতোমধ্যে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৯২৫ মেট্রিক টন ধান এবং ৪ হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বরগুনা জেলার লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ মেট্রিক টন ধান ও ১ হাজার ৫১৩ মেট্রিক টন চাল। এর বিপরীতে ৫০০ মেট্রিক টন ধান এবং ১ হাজার ৩৪৯ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। বরগুনার ছয়টি এলএসডির (স্থানীয় সংগ্রহ কেন্দ্র) সম্মিলিত ধারণক্ষমতা ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেছেন, আমরা যে ভালো অবস্থানে আছি, তা বলছি ঠিকই; তবে এ অবস্থান রক্ষা করা কঠিন। কারণ, খাদ্য ক্রমাগত খরচ হচ্ছে, আবার ক্রমাগত সংযোজনও হচ্ছে। এজন্য নিয়মিত তদারকি জরুরি। তিনি জেলা প্রশাসকদের স্থানীয় পর্যায়ে খাদ্য সংগ্রহ ও বিতরণ কার্যক্রম ‘ক্লোজ মনিটরিং’ করার নির্দেশ দেন।
উপদেষ্টা বলেন, এই বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান এবং ১৪ লাখ টন চাল কেনা হবে। কৃষকদের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ধানের দাম প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ও চালের দাম ৪৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় কেজি প্রতি ৪ টাকা বেশি। বোরো সংগ্রহ কার্যক্রম চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে। চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।
সভায় জানানো হয়েছে, ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বাড়িয়ে ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হচ্ছে, যা চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ছিল ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অন্তর্বর্তী সরকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে ওএমএস ও টিসিবি কার্যক্রম সম্প্রসারণ করেছে।
আগামী অর্থবছরে ওএমএস কার্যক্রমের আওতায় উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে। প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল ১৫ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করা হবে। বর্তমানে এ কার্যক্রম বছরে পাঁচ মাস চালু থাকলেও আগামী অর্থবছর থেকে তা ছয় মাস কার্যকর থাকবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। উপস্থিত ছিলেন বরিশাল বিভাগের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
সংস্কার ইস্যুতে কয়েকমাস ধরে দফায় দফায় আলোচনার পরও মৌলিক অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ ২০টি বিষয়ের মধ্যে ৫টিতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। এ মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ চূড়ান্ত করার আশা করছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। ঘোষিত সময়ের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে ৩ আগস্ট জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের ঘোষণা দিয়েছে গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া দল এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি)। তবে জুলাই সনদ আসলে কী, কেন এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতবিরোধ, জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্রের মধ্যে পার্থক্য কী- এসব প্রশ্ন এখন আলোচনায় আসছে।কমিশন দাবি করছে, কয়েক দফার আলোচনায় এরই মধ্যে বেশকিছু সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। এখনো আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা, জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল বা এনসিসি গঠনসহ বেশকিছু সাংবিধানিক সংস্কার প্রস্তাবে দলগুলোর মধ্যে নানা মতবিরোধও দেখা দিচ্ছে।ঐকমত্য কমিশন বলছে, জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ দুটি একেবারেই আলাদা বিষয়। কেননা সব দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে সনদ বা সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরি হবে, সেটি জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ। জুলাইয়ের ঘোঘণাপত্র তৈরির কাজ ঐকমত্য কমিশনের নয়, সেটি সরকার ও রাজনৈতিক দল মিলে করবে। শুধু জুলাই সনদ প্রস্তুত করবে ঐকমত্য কমিশন।জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩১ ডিসেম্বর জুলাই প্রোক্লেমেশন বা গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চেয়েছিল। পরে অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের আশ্বাসে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে শিক্ষার্থীরা। পরে সরকারের পক্ষ থেকে জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল।জুলাই সনদ কী : গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘জুলাই সনদ হলো একটি প্রতিশ্রুতি। একটা জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছে, সেগুলোর মধ্য থেকে রাজনৈতিক দলগুলো যে কটিতে একমত হয়েছে, তার তালিকা থাকবে এই সনদে।’অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্র সংস্কারে যে ১১টি কমিশন গঠন করে, সে সব কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে গত কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ধারাবাহিক সংলাপ করছে ঐকমত্য কমিশন। এতে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার সংক্রান্ত ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর ধারাবাহিক বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য কমিশনের সাথে ধারাবাহিক এই আলোচনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, এসব প্রস্তাবনার মধ্যে ৮০টিরও বেশি প্রস্তাবনায় সামগ্রিকভাবে ঐকমত্যে পৌঁছেছে রাজনৈতিক দলগুলো। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ আরো ২০টির মত প্রস্তাবনা চিহ্নিত করে সেগুলো নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে।ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘ওই ২০টির মধ্যে এখন পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে। বাকি প্রায় ছয় থেকে সাতটি বিষয় আমরা আলোচনা করেছি যেগুলো এখন পর্যন্ত আমরা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি’।কমিশন বলছে, গুরুত্বপূর্ণ এসব প্রস্তাবে বড় রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজী করানোর পর এগুলো নিয়েই তৈরি হবে জুলাই সনদ।ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের এখন কতগুলো মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য দরকার। তা না হলে আবারো স্বৈরাচারের পুনরুত্থান আমরা ঠেকাতে পারবো না’।অবশ্য ঐকমত্য কমিশন চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবকে আপাতত জুলাই সনদ বললেও শেষ পর্যন্ত এটির নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিতও দিয়েছে।অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, ‘এটা আসলে জাতীয় সনদ। আবার জুলাই সনদ এই অর্থে, যাতে জুলাই সনদ বললে আগামীতে বোঝা যাবে ২০২৪ জুলাইয়ে কি ঘটেছিল, যার প্রেক্ষিতে এই সনদ করতে হয়েছে। জাতীয় কিংবা জুলাই সনদ যে নামই থাকুক না কেন এই সনদ আগামী দিনে দেশের রাজনীতিতে মাইলফলক হিসেবেই থাকবে।’রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য এই সনদকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের দালিলিক ভিত্তি হিসেবেই দেখছেন। বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জুলাই আমাদের যে বার্তা দিল, সেটার একটা দলিল থাকা দরকার। সে জন্য জুলাই সনদ থাকা জরুরি।’রাজনৈতিক ঐকমত্য নিয়ে প্রশ্ন: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় যে পাঁচটি প্রস্তাবে সব দল একমত হয়েছে, সেগুলো হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিত্ব, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমা সম্পর্কিত বিধান সংশোধন করা এবং হাইকোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ।অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, এই আলোচনায় এখন গুরুত্বপূর্ণ ছয় থেকে সাতটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় এখন পর্যন্ত আমরা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি। তবুও সেগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয় দফার ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে ভিন্ন ব্যক্তির নিয়োগ নিয়ে প্রস্তাবনা ছিল ঐকমত্য কমিশনের।এছাড়াও জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ বা এনসিসি গঠন করে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, সরকারি কর্ম কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগের বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে। কিন্তু এসব বিষয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল এখনো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বদিউল আলম মজুমদার।ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দফার দ্বিতীয় দিনের আলোচনা শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘সব বিষয়েই যদি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শতভাগ একমত হতে হয়, তবে আলোচনার কী প্রয়োজন ছিল?’ এই প্রশ্নে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, তার মানে এই নয় যে এ নিয়ে আমরা কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারিনি বা এগুলো বাতিল হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে পরে আরো আলোচনা হবে। আমরা যথেষ্ট রকম আশাবাদী।’রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করছেন, সব ইস্যুতে সবাই একমত হবে বিষয়টি এমন নয়। আমরা দেখেছি সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে ঐকমত্য হচ্ছে না। কারণ সবাই নিজেদের ‘বুলি’ এই সনদে দেখতে চায়। এটা করতে গেলে ঐকমত্য হবে না।জুলাই সনদের বাস্তবায়ন কীভাবে: রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হবে, সেটি কিভাবে বাস্তবায়ন হবে- এই প্রশ্নও বেশ গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সামনে আসছে। কেননা এ নিয়েও ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর।সংস্কার প্রস্তাবগুলো যখন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে উপস্থাপন করা হয়, তখন সেটি বাস্তবায়নের জন্য ছয়টি আলাদা বিকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এক্ষেত্রে নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে, গণপরিষদের মাধ্যমে, নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে।ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের একমাত্র পথ হিসেবে জাতীয় সংসদের কথা বলেছে বিএনপি, সিপিবি-বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অন্যদিকে, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে সংস্কার প্রস্তাব বা জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে রয়েছে এনসিপির অবস্থান।তবে, জামায়াত ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল রাজনৈতিক ঐকমত্য পর্যন্ত অপেক্ষা করছে। তাদের অবস্থান হলো, যদি শেষ পর্যন্ত সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ চূড়ান্ত হয়, সব দলগুলো যদি তাতে স্বাক্ষর করে তাহলে আগামী নির্বাচিত সংসদে তা বাস্তবায়ন সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোর এই দ্বিধা-বিভক্ত অবস্থান জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথে বাধা হবে কী-না, সেই প্রশ্নও সামনে আসছে। তবে এই প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন খুব বেশি চিন্তিত নয় বলে জানিয়েছেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।তিনি বলেন, ‘বিষয়ের দিক থেকে কি পরিবর্তন করা দরকার, সেটা আমরা চূড়ান্ত করে দিতে পারি। কিন্তু কিভাবে বাস্তবায়ন হবে সেই বিষয়টি আমরা নির্ধারণ করে দিতে পারি না। সেটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও রাজনৈতিক দল মিলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে’। ‘হোয়াট’ অ্যান্ড ‘হাউ’ এর মধ্যে আমরা হোয়াট’কে লক্ষ্য করে কাজ করছি। যদি ঐকমত্যে এনে একটা সনদ আমরা করতে পারি, তখন রাজনৈতিক দলগুলো পারষ্পারিক আলোচনার ভিত্তিতে তা বাস্তবায়নের একটা পথ নিশ্চয়ই তৈরি করতে পারবে।’ভোরের আকাশ/এসএইচ
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের মাধ্যমে পক্ষপাতহীনভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ কথা জানান তিনি। বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করে মুক্তিযুদ্ধের বিভ্রান্তিকর ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব অবকাঠামোতে রণাঙ্গনের কোনো বিস্তৃত বর্ণনা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের বর্ণনা নেই, কেবলমাত্র একটি পরিবারের ছবি-সরঞ্জাম দিয়ে অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পে ২৩ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কোটি টাকা মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে গেলেও তারা তেমন কোনো গবেষণা করেনি।’মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে থাকা সম্পত্তি কীভাবে সদ্ব্যবহার করা যায় এবং ট্রাস্টের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো যায়, এ বিষয়টি নিরূপণের জন্য অতিদ্রুত একজন পরামর্শক নিয়োগ এবং পরবর্তী সময়ে একটি কমিটি গঠনে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।তিনি বলেন, কল্যাণ ট্রাস্টের কাজ কী কী হবে, তাদের আওতাধীন সম্পত্তিগুলোতে কী কী এন্টারপ্রাইজ হতে পারে; এ বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই ট্রাস্টকে আবার জীবন্ত করতে হবে।আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পের মধ্য দিয়ে যেন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস উঠে আসে, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।ভোরের আকাশ/জাআ
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মোঃ মাহফুজ আলম বলেছেন, জুলাই শহিদদের প্রেরণা অনুসরণ করতে পারলে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ সম্ভব। যেখানে রাষ্ট্র হবে সবার এবং সকলের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।সোমবার (৭ই জুলাই) তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শাহবাগে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র 'শ্রাবণ বিদ্রোহ'-এর প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত সবাইকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের ভূমিকা জনস্মৃতিতে রাখতে তথ্যচিত্র 'শ্রাবণ বিদ্রোহ' প্রদর্শনীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান প্রজন্মের দায়িত্ব কী, তা স্মরণ করে দেওয়ার জন্য জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহিদদের অবদান জনস্মৃতিতে রাখা প্রয়োজন। তিনি শহিদদের আত্মত্যাগ স্মরণে রেখে সবাইকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, জুলাই কখনো বেহাত হবে না। জুলাইয়ের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার চলছে, বিচার দৃশ্যমান। এই বিচার গ্রহণযোগ্য করতে হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে খুনিদের বিচার সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, ফ্যাসিবাদ বারবার ফিরে আসার চেষ্টা করে, তাকে দমন করতে হয়। ফ্যাসিবাদ যেন আর কখনো মাথাচাড়া দিতে না পারে, সেজন্য তিনি সকলকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান।প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, রাজনৈতিক ঐকমত্য থাকলে দেশে আর ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে না। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে উদ্দেশ্যে শহিদরা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শহিদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন এবং শহিদ সাংবাদিক তাহির জামান প্রিয়-র মা শামসি আরা জামান। তাঁরা তাঁদের শহিদ সন্তানসহ গণঅভ্যুত্থানে সকল শহিদের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচার দাবি করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা। প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্বজন, গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে তথ্যচিত্র ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’। জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে আন্দোলনের পটভূমি, ঘটনাপ্রবাহ এবং ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ-চেতনার গতিপথ। তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে শহিদদের স্বজন, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রনেতা, শিক্ষার্থী এবং সমাজের বিশিষ্টজনদের আন্দোলনকালীন স্মৃতিকথা ও নির্যাতনের চিত্র। ৩০ মিনিটের এই তথ্যচিত্রে আন্দোলনকালীন দুর্লভ ভিডিওচিত্র, স্থিরচিত্র ও গ্রাফিতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জীবন্ত দলিল। তথ্যচিত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ঠুরতা এবং তৎকালীন স্বৈরশাসকের দমন-পীড়নের চিত্র কখনো প্রত্যক্ষ দৃশ্যায়নে, কখনো অ্যানিমেশনের সাহায্যে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। ‘শ্রাবণ বিদ্রোহ’ শুধু একটি তথ্যচিত্র নয়, এটি সময়ের দলিল—যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানাবে এক সফল গণঅভ্যুত্থানের গল্প।ভোরের আকাশ/জাআ
দেশের শীর্ষস্থানীয় টেলিযোগাযোগ অবকাঠামোগত সেবাদাতা সংস্থা ইডটকো বাংলাদেশ সম্প্রতি পরিচ্ছন্ন যানবাহন ও জ্বালানি উদ্ভাবনের পথিকৃৎ টাইগার নিউ এনার্জি লিমিটেডের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে।এই চুক্তির মাধ্যমে সারাদেশে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থা এবং সকলের জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে টেকসই জ্বালানি ব্যবস্থা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।এই অংশীদারিত্ব টেলিকম অবকাঠামোতে প্রচলিত জ্বালানির পরিবর্তে একীভূত নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবস্থার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সূচনা করছে। এটি শুধু নিরবচ্ছিন্ন টেলিকম পরিষেবা নিশ্চিত করবে না, বরং কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে এবং সবার জন্য জ্বালানির সমান সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও ভূমিকা রাখবে।এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, উভয় প্রতিষ্ঠান একসাথে পরীক্ষামূলকভাবে কিছু নতুন উদ্ভাবনী পরিষেবা চালু করবে। যেমন- ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম, সোয়াপিং স্টেশন এবং চার্জিং স্টেশন সিস্টেম। এসব উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমানো এবং বৃহত্তর জনগণের জন্য জ্বালানি ব্যবস্থার সুযোগ বাড়ানো। এটি ইডটকোর টেকসই উপায়ে নিরবচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক সংযোগ নিশ্চিতকরণ এবং সকলকে ক্ষমতায়নের অঙ্গীকারের অংশ।চুক্তির আওতায় নেওয়া উল্লেখযোগ্য উদ্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যাটারি-এজ-আ-সার্ভিস (বিএএএস), এটি হলো সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক ব্যাটারি ব্যাকআপ সিস্টেম, যা গ্রিডে বিদ্যুৎ না থাকলেও টেলিকম টাওয়ারে নিরবচ্ছিন্নবিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করবে। ফলে নেটওয়ার্ক সংযোগ সবসময় একইরকম থাকবে।আরও রয়েছে ব্যাটারি সোয়াপিং স্টেশন (বিএসএস)। এর মাধ্যমে ইডটকোর টাওয়ার সাইটগুলোতে স্থাপিত সোয়াপ পয়েন্ট, যা বৈদ্যুতিক যানবাহন, বিশেষ করে দুই ও তিন চাকার বাহনের চলাচলকে সহজতর করবে, চার্জিংয়ের সময় কমাবে এবং শেয়ারযোগ্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবস্থার সহায়ক হবে।এছাড়াও রয়েছে ব্যাটারি চার্জিং স্টেশন সিস্টেম (বিসিএসএস)। সহজে ব্যবহারযোগ্য চার্জিং পয়েন্ট, যা রিকশা ও ইজিবাইকের মতো বাহনগুলোকে বিদ্যুৎ চার্জ দেওয়ার সুযোগ দেবে, যা সকলের জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানিকে সহজলভ্য করে তুলবে।বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো নেওয়া এই ধরনের উদ্যোগ ইডটকোর টেকসই টেলিকম অবকাঠামোর নেতৃত্বকে আরও জোরদার করছে। অবকাঠামোকে পরিবেশগত দায়িত্বের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের জন্য একটি সহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং জলবায়ু-সচেতননেটওয়ার্ক সংযোগ যুগের সূচনা করছে।ভোরের আকাশ/জাআ