ছুটিতে কিংবা বর্ষার যেকোনো সময় আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার জেলা। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ যাওয়ার পাকা সড়কটা ধরে চলেছি। একটি অটোরিকশায় চেপে। দুই পাশে চা বাগানের রাজ্যের মাঝখান দিয়ে ছুটেছে গাড়ি। একটু পর গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট পেরিয়ে লাউয়াছড়ার সীমানায় ঢুকে পড়লাম। দুই পাশ থেকে পাখি আর নানা কীট-পতঙ্গের ডাক তারই জানান দিল। তবে এখানেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া মূল রাস্তা বাদ দিয়ে ডানের একটা পথ ধরলাম আমরা। গন্তব্য মাধবপুর লেক। লেবু-আনারসের বাগান পেরিয়ে, লেমন গার্ডেন নামের একটি রিসোর্টকে ডানে রেখে কিছুটা এগুতেই আশ্চর্য সুন্দর এক জগতে চলে এলাম।প্রবেশের পথটা বাঁশ দিয়ে আটকানো ছিল। গার্ডকে বলে ভেতরে ঢুকেতে হলো। এটাও একটা চা বাগান। তবে ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন আর এত সুন্দরভাবে টিলার গায়ে চা গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে, মিলিয়ে দারুণ লাগল। দুটি সুন্দর খরের ছাউনি একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আদর্শ। হালকা ছাটে বৃষ্টি পড়ছে। বাগানে তখনো কাজ করছেন চা শ্রমিকেরা। গল্পটি বেশ কয়েক বছর আগের। প্রথম দেখাতেই আমাকে মুগ্ধ করে নূরজাহান চা বাগান। এরপর যতবার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে গিয়েছি এই বাগানটিতে একবার ঢু মারতে ভুল করিনি।ওই যে মাধবপুর লেকের কথা বললাম ওটাও পড়েছে মাধবপুর চা বাগানের সীমানায়। বর্ষায় ভারি সুন্দর হ্রদটা। ওপর থেকে চারপাশের চা বাগান-পাহাড় মিলিয়ে দারুণ লাগে।শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ গেলে লাউয়াছড়ার জঙ্গলে না গিয়েই বা থাকবেন কীভাবে? বনটির কথা ভাবতে গিয়ে স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসল। ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানার বাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরো অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনোট। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাৎ হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়েরা। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল।যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম, তারপর আবার যখন যেমন হঠাৎ থেমেছিল তেমন আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের, এইচএসসি পাশের পর সিলেট যাচ্ছিলাম শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। ঢাকা ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া। এখন অবশ্য লাউয়াছড়া পর্যটককে রীতিমতো গমগম। এতটাই যে বনের প্রাণীদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। আমার মনে হয় ভোরের দিকে হাজির হতে পারেন। মানুষের ভিড় থাকবে না। নীরবে হাঁটলে বুনোরা বিরক্ত হবে না। এদের অনেকের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। লাউয়াছড়ায় যখনই গিয়েছি পাহাড়ের ওপর খাসিয়া পাড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। অদ্ভুত সুন্দর, স্বচ্ছ জলের এক ছড়া পেরিয়ে পাহাড়ের গায়ে মাটির সিঁড়িপথ ধরে হেঁটে বেশ লাগে পাড়াটায় যেতে। তবে আমার ওই পাড়ার চেয়েও বেশি ভালো লাগে পাড়ায় যাওয়ার পথের ওই ঝিরিটাতে সময় কাটাতে। স্বচ্ছ পানির নিচে বালু দেখতে পাবেন পরষ্কার। আবার ঝিরি ধরে হাঁটতে হাঁটতে দুই পাশের প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়া জঙ্গলের রূপ উপভোগ করতে পারবেন চমৎকার।জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কু ঝিক ঝিক শব্দে চলে যাওয়া রেলগাড়ি দেখাটাও উপভোগ্য।লাউয়াছড়ার কথা যখন এল চাইলে কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর বনে ঘুরে আসতে পারেন। পর্যটকদের চাপ না থাকায় অরণ্যপ্রেমী হলে দারুণ উপভোগ করবেন সন্দেহ নেই। হামহাম জলপ্রপাতটিও খুব দূরে নয়।শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে আরও ঘুরে বেড়াতে পারেন ভারাউড়া লেক, লাল পাহাড়, দার্জিলিং টিলা, শংকর টিলা, গরম টিলা, ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতো জায়গায়। চা বাগানের পাশাপাশি বর্ষায় আনারস আর লেবু বাগানগুলোতে চমৎকার সময় কাটবে। চাইলে পথের ধারে গাড়ি থেকে নেমে আনারস খেতেও পারবেন। অনেক চা বাগানের রাজ্য বলতে শুধু শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জকে বুঝলেও মৌলভীবাজারের জুড়ি, কুলাউড়া আর বড়লেখাও চা বাগানও মন জুড়িয়ে দেবে। জুড়ি থেকে লাঠিটিলার জঙ্গলে যাওয়ার পথে, চা বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গা পাবেন। সবসময় গা বেয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়তে থাকে এমন একটি পাহাড় পেরিয়ে, রাস্তা চলে গেছে একটা সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন।সবুজ টিলায় চা বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে। ওখানটায় বেশ কতকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে আমি যেন পিছিয়ে যাই অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ বছর। মানস চোখে দেখি, জমিতে কয়েকটা গরু চরছে, আচমকা পাহাড়ের গায়ের এক পাথরের আড়াল থেকে বিশালদেহী এক বাঘ প্রবল হুংকারে ঝাঁপিয়ে পড়ল একটার ঘাড়ে! জুড়ির লাঠিটিলা এবং সাগরনাল বনও মুগ্ধ করবে আপনাকে। তেমনি চলে যেতে পারেন একেবারে সীমান্তের ধারে ফুলতলা চা বাগান পর্যন্ত। আর এতদূর যদি এগিয়ে যান বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত না দেখে কী ফিরবেন। এই বৃষ্টিতে জলপ্রপাতটি নাকি রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।ভোরের আকাশ/আজাসা
৩ দিন আগে
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এটি শুধু বাংলাদেশে নয়, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একটি উদ্যান। দেশের ৭টি বন্য প্রাণী এই রণ্য এবং ১০টি জাতীয় উদানের মধ্যে অন্যতম পরিচিতির দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই পাতা ছড়ার অবস্থান এটি এখন বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও পাখির জীবন্ত গবেষণাগার। বিজ্ঞানীদের ভীষণ পছন্দের জায়গা। বিখাত পাখিবিশারদ ডেভিড জনসন ও পন দমসন লাউয়াছড়াকে পৃথিবীর অন্যতম উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলো পেতে মরিয়া এ বনের গাছপালা বেশ উঁচু হায় থাকে। একটা স্যা এই বন এতই ঘন ছিল যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়ত না। উঁচু নিচু টিলাজুড়ে এ ধন বিস্তৃত।বনের ভেতর দিয়ে অনেক পাহাড়ি ছড়া বয়ো গেছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকের জন্য এই বন বিখ্যাত বনের মধ্যে কিছু সময় কাটানেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে।শীত ও বসন্তকালে বেশি লোকসমাগম হয় এই উদ্যানে। এখানে ভ্রমণের জন্য রয়েছে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটাপথ। তিনটি পরে মধ্যে একটি ৩ ঘন্টার, একটি ১ মস্টার এবং অন্যটি ৩০ মিনিটের টিলায় ছড়ানো চায়ের লাগান। অদ্ভুত স্মরণে ধলই চা বাগানে স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়। স্মৃতিসৌধের একদিকে বিজিবি ক্যাম্প, অন্যদিকে চা বাগান।গাইডের সহায়তায় বনের ভেতরে যাওয়া যায়। নাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া খাসিয়াপুঞ্জি।কমলগঞ্জে মাধবপুর লেক মাধবপুর লেকটি চারদিকে উঁচু সবুজ চা-বাগানের মাধ্যখানে অবস্থিত। স্বচ্ছ পানি, প্রকৃতির ভাষা, নিরিবিলি টিলায় ছড়ানো চায়ের লাগান। অদ্ভুত নির্জনতায় লেকটি ঘিরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালি, চা বাগান এবং পাষিদের নিয়ে এক মায়াময় পরিবেশ দক্ষিণ ভারত সীমান্ত। দিয়ে থাকে সব সময় এই আছে বহু প্রজাতির বিশালাকৃতির মাছ ও কাছিম। কমলগঞ্জের হাম হাম জলপ্রপাত কমলগঞ্জ উপজেলার হাম হাম স্মরণে ধলই চা বাগানে স্মৃতি কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়। স্মৃতিসৌধের একদিকে বিজিবি ক্যাম্প, অন্যদিকে চা বাগান। দক্ষিণ ভারত সীমান্ত।এসব ছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলার পদ্ম ছাড়া কোমেলিয়া লেক, পাত্রখোদা লেক, রাম্বোতন লেক, শমশেরনগর গলফ মাঠ শমশেরনগর বিমানবন্দরসহ বেশ কিছু পর্যটনকেন্দ্র ও চা বাগান রয়েছে। পরিবেশ আর শরতে শাপলা ফুল লেকটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলে। সবুজ পাহাড়ের চূড়ায় যতই এগোতে থাকবেন, ততই সবুজ পাতার গন্ধ মন চাঙা করে তুলবে। চারদিকে সবুজ পাহাড়ের পাশাপাশি উঁচু উঁচু টিলা রয়েছে এখানে।মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা ছবি। চা বাগানের সুরু রাস্তা দিয়ে এ লোকে যেতে হয় বেশ কিছু ঝুঁক নিয়ে একেবেঁকে পাহাড়ের ভেতর তার চলা। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। এর জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে থাকে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় জলপ্রপাত আরেকটি দর্শনীয় স্থান। দুর্গম জঙ্গলে ঘেরা এই জলপ্রপাত ২০১০ সালের শেষ দিকে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার পূর্ব দক্ষিণ ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাবাদি রোরোে ৭ হাজার ৯৭০ একর আয়তনের মানটি এলাকার পশ্চিম দিকে চম্পালায় চা-বাগান। এই কুরমা বন নিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেতরে দৃষ্টিনন্দন হাম হাম জলপ্রপাতটি অবস্থিত)।কমলগঞ্জ উপজেলার চৌমোহনা চতুর থেকে শুনামা চেকপোষ্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তা স্থানীয়ভাবে চলাচল করা বাস, জিপ অথবা মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও পাহাড়ি এলাকা বলে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে ঝরনার পানি কম থাকলে ও বর্ষা মৌসুমে পানি বেড়ে যায় জলপ্রপাতটিতে। এখানে হেঁটে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা লাগে। হাম হাম জনপ্রপাত দেখা আসলেই এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মৌলভীবাজার জেলা কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা বাগানের পূর্ণ প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোষ্টে গিয়ে যুদ্ধ করেন। তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিলেন ১৯৭১ সালের অরোবর মাসে হামিদুর রহমান প্রথম ইষ্ট বেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন যুদ্ধে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল, সেখান থেকে বাসে কমলগঞ্জ। রেলপথে ঢাকা থেকে ভানুগাছ কিংবা শমসেরনগরে নেমে বাস অথবা অটোরিকশায় কমলগঞ্জ যাওয়া যায়।ভোরের আকাশ/এসএইচ
১ সপ্তাহ আগে
দেশে এই মুহূর্তে প্রধান পর্যটন গন্তব্য গুলোর মধ্যে একটি হলো মৌলভীবাজার। ছোট-বড় মিলিয়ে এ জেলায় প্রায় ৫০টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ২১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে বসবাস করছেন এখানে। একটি জেলায় একসঙ্গে এত পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রস্থল খুবই কম থাকে। এর মধ্যে জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল হচ্ছে প্রধান দুই পর্যটন কেন্দ্রসমৃদ্ধ উপজেলা। বিশেষ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মণিপুরি সম্প্রদায় অধ্যুষিত উপজেলা কমগঞ্জ পর্যটন আকর্ষণে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসেন এই উপজেলায়। কমলগঞ্জের উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি পর্যটন আকর্ষণের একটি হচ্ছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, আন্তর্জাতিকভাবেও পরিচিত। পরিচিতির দিক থেকে সুন্দর বনের পরেই লাউয়াছড়ার অবস্থান। এ উদ্যানটি কেবল পর্যটন স্থানই নয়, এ পার্ক এখন জীবন্ত প্রাকৃতিক গবেষণাগার, যা প্রাণী ও পাখি বিজ্ঞানীদের একটি রাজ্যও বলা যায়। বিখ্যাত পাখি বিশারদ ডেভিড জনসন ও পল থমসন লাউয়াছড়াকে পৃথিবীর অন্যতম উন্মুক্ত চিড়িয়াখানা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।বাংলাদেশের ৭টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও ১০টি জাতীয় উদ্যানের মধ্যে এটি অন্যতম।কমলগঞ্জ উপজেলার অবস্থিত ১২৫০ হেক্টর আয়তনের বনটি জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯২৫ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার এখানে বৃক্ষায়ন শুরু করলে সেটাই বেড়ে আজকের এই বনে পরিণত হয়। শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলার মৌলভীবাজার ফরেস্ট রেঞ্জের আওতাধীন ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর আয়তনের সংরক্ষিত বন ছিল এলাকাটি। ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী আইন অনুযায়ী ১৯৯৬ সালের ৭ জুলাই জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়।এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। সূর্যের আলোর প্রতিযোগিতার জন্য এ বনের গাছপালা খুব উঁচু হয়ে থাকে। একটা সময় এই বন এতই ঘন ছিল যে মাটিতে সূর্যের আলো পড়ত না। উঁচু-নিচু টিলাজুড়ে এ বন বিস্তৃত। বনের ভেতর দিয়ে দিয়ে অনেক পাহাড়ি ছড়া বয়ে গেছে, যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে।জীববৈচিত্র্যের দিক দিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের সমৃদ্ধতম বনগুলোর একটি। আয়তনে ছোট হলেও এ বন দুর্লভ উদ্ভিদ এবং প্রাণীর এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। বনে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের বন্যপ্রাণী, পাখি এবং কীটপতঙ্গের শব্দ শোনা যায়।এই উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী দেখা যায়। বিলুপ্ত প্রায় উল্লুকের জন্য এ বন বিখ্যাত। বনের মধ্যে কিছু সময় কাটালেই উল্লুকের ডাকাডাকি কানে আসবে। লাউয়াছড়া উদ্যানে পাখির মধ্যে সবুজ ঘুঘু, বন মোরগ, তুর্কি, বাজ, সাদা ভ্রু সাত ভায়লা, ঈগল, শকুন, হরিয়াল, কালো মাথা টিয়া, পেঁচা, ফিঙে, লেজকাটা টিয়া, কালো বাজ, হীরামন, বাদুড় প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য। বনের বিচিত্র পশুপাখির ডাক বানরের ভেংচি আর উল্লুকের ছোটাছুটি পর্যটকদের মনে আনন্দ দেয় প্রতিনিয়ত। দিন দিন এখানে পর্যটক, শিক্ষার্থী, গবেষক, পাখি বিজ্ঞানীর আনাগোনা থাকলেও শীত ও বসন্তের সময় সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হয়। প্রকৃতি ভ্রমণের জন্য রয়েছে তিনটি ট্রেইল বা হাঁটা পথ।লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জী। এ ছাড়া লাউয়াছড়া আরেকটি কারণে বিখ্যাত। ১৯৫০ সালে মাইকেল অ্যান্ডারসন নির্দেশিত হলিউডের বিখ্যাত ছবি ‘অ্যারাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটি ডেজের কিছু দৃশ্য ধারণ করা হয়েছিল লাউয়াছড়ার এই জাতীয় উদ্যানে।মাধবপুর লেককমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর লেকটি চারদিকে সুউচ্চ সবুজ চা বাগানের মাঝখানে অবস্থিত। লেকের ঝকঝকে পানি, প্রকৃতির ছায়া, নিরিবিলি পরিবেশ ও শাপলা ফুলে দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। মাধবপুর লেক যেন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা হয়েছে।খানাখন্দে ভরা চা বাগানের রাস্তা দিয়ে এ লেকে যেতে হয়। মাধবপুর লেকের ঝলমল পানি, ছায়া সুনিবিড় পরিবেশ, শাপলা শালুকের উপস্থিতি মনোমুগ্ধকর অনুভূতি এনে দেয়। বেশকিছু বাঁক নিয়ে এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ভেতর তার চলা। শীতকালে অতিথি পাখির দল আসে এই হ্রদে। হ্রদের জলে গোলপাতার ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নীল শাপলা। হ্রদের দুই পাশে টিলায় টিলায় ছড়ানো চায়ের গাছ।চারপাশে ঘিরে থাকা উঁচু টিলা আর চা বাগান পরিবেষ্টিত মাধবপুর লেকটি পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। প্রতিবছর হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষ, দেশি-বিদেশি পর্যটক, প্রকৃতিপ্রেমিক, দর্শনার্থী, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মনোমুগ্ধকর ও নির্জন লেকটি দেখতে ছুটে আসেন। গভীর এ হ্রদে রয়েছে বহু প্রজাতির বিশালাকৃতির মাছ ও কাছিম।এ লেক ঘিরে রয়েছে দুটি ট্রেইল, যা উঁচু টিলা বেয়ে উঠতে হয়। বর্তমানে লেকটির চারদিকে ঘুরে আসতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। কিছুক্ষণের জন্য হলেও যে কাউকে অন্য পরিবেশে নিয়ে যায়। কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ চৌমুহনা থেকে লেকটির দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্সের যাওয়ার পথের ধারে পড়ে লেকটি। হাম-হাম জলপ্রপাতকমলগঞ্জ উপজেলার হাম-হাম জলপ্রপাত হয়ে উঠেছে আরেকটি দর্শনীয় স্থান। গহীন অরণ্যে অবস্থিত হওয়া এই জলপ্রপাতটি ২০১০ সালের শেষাংশে পর্যটন গাইড শ্যামল দেববর্মার সঙ্গে দুর্গম জঙ্গলে ঘোরা একদল পর্যটক আবিষ্কার করেন। এর পর থেকেই এটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে। কমলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ইসলামপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত রাজাকান্দি রেঞ্জের ৭ হাজার ৯৭০ একর আয়তনের কুরমা বনবিট এলাকার পশ্চিম দিকে চম্পারায় চা বাগান। এই কুরমা বনবিটের প্রায় ৮ কিলোমিটার অভ্যন্তরে দৃষ্টি নন্দন এ হাম-হাম জলপ্রপাতটি অবস্থিত, যা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের প্রায় সীমান্তের নিকটবর্তী।এখানে বর্তমানে সরাসরি পৌঁছবার কোনো সড়ক বা ব্যবস্থা নেই। কমলগঞ্জ উপজেলা চৌমুহনা চত্বর থেকে কুরমা চেকপোস্ট পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার পাকা রাস্তায় স্থানীয় বাস/জিপ/মাইক্রোবাসে করে যেতে পারলেও বাকি পথ পাহাড়ি এলাকা পায়ে হেঁটে যেতে হয়।হাম-হাম জলপ্রপাতে পর্যটকদের গহীন অরণ্য প্রবেশ করে জলপ্রপাত দেখতে হলে তৈলংবাড়ি বা কলাবন বস্তির আদিবাসীদের সাহায্য নিতে হবে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা, উঁচু-নিচু পথে ট্রেকিং করা খুবই কষ্টের। পিচ্ছিল রাস্তার সতর্ক হয়ে চলাফেরা করতে হয়। ট্রেকিংকালে সবাইকে ভারসাম্য রক্ষর্থে বাঁশের লাঠি হাতে করে নিতে হয়। চলার পথে ডুমুরের গাছ আর বেত বাগানে দেখা মিলবে অগুনতি চশমা বানরের। এ জলপ্রপাতটিতে যেতে পেরোতে হয় দুর্গম পাহাড়ি সরু পথ। জলপ্রপাতের অর্ধকিলোমিটার দূর থেকেই শোনা যায় ঝরনার জলধ্বনী।পায়ে হেঁটে জলপ্রপাতটিতে পৌঁছাতে প্রায় ৩ ঘণ্টা সময় লাগে। ধারণা করা হয়ে থাকে, বাংলাদেশে অবস্থিত অন্যান্য জলপ্রপাতের তুলনায় এটি প্রশস্ততম। প্রায় ৩০ ফুট প্রশস্ততাবিশিষ্ট এবং ১৩৩ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট এ জলপ্রপাতটি। দিন দিন রোমাঞ্চকর অভিযাত্রীদের এক তীর্থভূমি হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত পর্যটক সংখ্যা বাড়ছেই। ইতোমধ্যে সরকারও যাতায়াত ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। পদ্মছড়া লেককমলগঞ্জ উপজেলায় গেলে দেখা মিলবে পদ্মছড়া লেক। চারদিকে পাহাড় আর পাহাড়। উঁচু-নিচু টিলার সমাহার। সবুজের নান্দনিকতা রয়েছে লেকটি ঘিরে। এটি ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মাধবপুর চা বাগানের ফাঁড়ি চা বাগান পদ্মছড়া চা বাগানে অবস্থিত। এই অপরূপ লেকটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।বলা হয়ে থাকে কমলগঞ্জ প্রকৃতির এক জীবন্ত জাদুঘর। এখানে প্রকৃতি নিজেকে এতটাই মেলে ধরেছে যে, পদ্মছড়া লেকটি এখনো অনেকের কাছে অজানা-অচেনা। পাহাড়ের বুকে সৌন্দর্য বিলিয়ে যাচ্ছে এটি। পলকেই মন চাঙা হয়ে উঠবে।দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে বাসে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল নামতে হবে। রেলপথে গেলে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর ট্রেনে করে নামতে হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ভানুগাছ কিংবা শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে। শ্রীমঙ্গল থেকে বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা করে পদ্মছড়া লেকে যাওয়া যায়। আবার ভানুগাছ ও শমশেরনগর নামলে অটোরিকশায় করে যাওয়া যায়।বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধমৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হচ্ছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি কমপ্লেক্স। মোহাম্মদ হামিদুর রহমান সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন। তিনি কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবরে অসম বীরত্ব দেখানো এই মুক্তিযোদ্ধা হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন। তার স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত কমপ্লেক্সটিতে ভানুগাছ-মাধবপুর সড়ক দিয়ে যেতে হয়। এ কমপ্লেক্সে যাওয়ার কালে সড়ক পথের দুই দিকের পরিবেশও যেকোনো পর্যটককে মুগ্ধ করে। পথেই পড়ে শিববাজার জোড়া মন্দির যেখানে মণিপুরিদের সবচেয়ে বড় রাস উৎসবের স্থান রয়েছে।এ ছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলায় পদ্মছড়া লেক, ক্যামেলিয়া লেক, পাত্রখোলা লেক, বাম্বোতল লেক, শমশেরনগর গল্ফ মাঠ, শমশেরনগর বিমানবন্দরসহ বেশকিছু পর্যটন কেন্দ্র ও সবুজ চা বাগান রয়েছে। দৃষ্টিনন্দন ক্যামেলিয়া লেকমৌলভীবাজারের চা বাগানের শ্রমিকদের কাছে যে লেকের নাম বিসলার বান। তবে এর প্রকৃত নাম হলো ক্যামেলিয়া লেক। কমলগঞ্জের শমশেরনগরে ব্রিটিশ কম্পানি ডানকান ব্রাদার্সের মালিকানাধীন শমশেরনগর চা বাগানে দৃষ্টিনন্দন এ লেকের অবস্থান। এ বাগানের আয়তন প্রায় ৪৩২৬ দশমিক ৪৭ একর।চা বাগান কর্তৃপক্ষ প্রাকৃতিক এ লেকটিতে কিছুটা কৃত্রিমতা জুড়ে দিয়েছে। ইট-সিমেন্টের কিছু কৃত্রিম কাজ লেকটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। লেকটির পানির ওপরে একটি পাটাতন তৈরি করা হয়েছে। এখন ‘বিসলার বান’ বা ‘ক্যামেলিয়া লেক’ হয়ে উঠেছে অসাধারণ এক পর্যটন স্পট। লেকটির পাশে রয়েছে চা শ্রমিকদের কাছে ‘ক্লাব ঘর’। এ ঘরে বা গাছের ছায়ায় পর্যাপ্ত সময় কাটানো সম্ভব। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি একেবারে নতুন গন্তব্য। তাই সেখানে যেতে হলে একা নয়, গ্রুপ করে যাওয়াই ভালো। তবে লেকটি যেহেতু চা বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত, তাই যাওয়ার আগে চা বাগান কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নিলে ভালো হয়।পাথারিয়া পাহাড়মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায় পাথারিয়া পাহাড় অঞ্চল অবস্থিত। এই পাহাড়েই রয়ে মনোমুগ্ধকর মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। প্রায় ২০০ ফুট ওপর থেকে আছড়ে পড়া জলের স্রোত। এ ছাড়া এই পাহাড়ের বুক জুড়ে রয়েছে আরও অসংখ্য ছোট ছোট ঝরনা। যেগুলোর মধ্যে সন্ধানী, মায়াবন, মায়াকানন অন্যতম। যেই দুর্গম ঝরনাগুলোতে বর্ষার মৌসুমে যাওয়াটা বেশ দুষ্কর। বড় বড় পাথর, ক্ষীণ জলস্রোত আর প্রশান্তিদায়ক সবুজে ঘেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে প্রায় সারা বছরই থাকে পর্যটকদের আনাগোনা। মৌলভীবাজার হতে বড়লেখাগামী গাড়ি করে বড়লেখা পৌঁছার আগে কাঁঠালতলী নামক বাজারে নামতে হবে। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার পূর্বে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও পাথারিয়া বন বিভাগ অবস্থান। বাইক্কা বিলএকাধারে পাখি ও মাছের অভয়ারণ্য এবং গাছগাছালি ভরা বাইক্কা বিল মূলত হাইল হাওরের একটি অংশ। অগভীর এই হ্রদটিতে বিভিন্ন গাছপালার দেখা মেলে। সেই সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় জলাভূমিও। বিলের ঘেরাটোপে প্রবেশ করতেই পাখিদের মন মাতানো কলকাকলিতে মন ভরে উঠবে। শ্রীমঙ্গল পৌর শহর থেকে মৌলভীবাজার আসার মাঝ পথে বরুনা নামক এলাকায় এলে পশ্চিম দিকে বাইক্কা বিল যাওয়ার সড়ক।বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র-বিটিআরআইশ্রীমঙ্গল উপজেরা একটি পর্যটন অঞ্চল হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। শ্রীমঙ্গলের প্রকৃতি পর্যটকদের জন্য সমৃদ্ধ সম্ভার সাজিয়ে রেখেছে। বৃহত্তর সিলেটের ১৩৮টি চা বাগানের মধ্যে এই একটি উপজেলাতেই ৩৮টি চা বাগান, আশপাশের সব মিলিয়ে এই সংখ্যা ৬০-এর কম নয়। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে যেকোনো দিকে বের হলেই চা বাগানের সবুজ হাতছানি। বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র (বিটিআরআই) শহর থেকে দুই কিমি দূরে। রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করলে চমৎকার ফুলের বাগান, রয়েছে বহু বছরের পুরোনো চা গাছ, চা ফ্যাক্টরি, টেস্টিং ল্যাব ইত্যাদি।নীলকণ্ঠ সাত রঙ্গা চাবিটিআরআই থেকে বের হলেই মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের আরেক আকর্ষণ নীলকণ্ঠ চা কেবিন। চা শ্রমিক রমেশ রাম গৌড় এখানে বিক্রি করেন পাঁচ, সাত, আট রংয়ের চা। শ্রীমঙ্গল শহরে বেশ কয়েক জায়গায় সাত রঙ্গা চা পাওয়া গেলেও সবচেয়ে ভালো মানেরটা হলো এই নীলকণ্ঠ।সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাশ্রীমঙ্গল শহরের প্রান্তে অবস্থিত সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায়। ভালুক, হরিন, বানর, বন মোরগ, অজগর সাপ, বিভিন্ন ধরনের অতিথি পাখি, কথা বলা ময়না, বিভিন্ন রকম বিড়াল। পাখি দিয়ে সাজান ব্যক্তিগত এই চিড়িয়াখানাটি ভালো লাগবে। এখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা আর শহর থেকে রিকশা নিয়েই যাওয়া যায়, ২০ টাকা ভাড়া। তা ছাড়া রাস্তার দুই পাশে অজস্র চা বাগান, আপনার পরিবহনের ড্রাইভারকে বলে যেকোন চা বাগানে নেমে যেতে পারেন এবং ইচ্ছেমতো ছবি তুলতে পারেন। রিসোর্টশান্ত প্রকৃতি ও আবহাওয়া। বাঁশ ও ছন দিয়ে তৈরি ছোট ছোট ঘর। চারপাশে সবুজ গাছ আর পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ। মৌলভীবাজার অসংখ্য ইকো রিসোর্টগুলোকে সাজানো হয়েছে এভাবেই। প্রাকৃতিক বিভিন্ন স্থানগুলোর পাশাপাশি পর্যটকদের মন কেড়ে নেয় বিভিন্ন পাঁচ তারকা ও ইকো রিসোর্টগুলো। সুলভমূল্য থেকে শুরু করে বিলাসবহুল সব রিসোর্ট গড়ে উঠেছে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ। যার মধ্যে রয়েছে গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন, বালিশিরা রিসোর্ট, নভেম ইকো রিসোর্টে, ওয়াটারলিলি, টি হ্যাভেন ও টিলাগাঁও ইকো ভিলেজ, অরণ্য নিবাস ইকো রিসোর্ট অন্যতম। এ ছাড়া মৌলভীবাজার জেলা শহরের পাশেই রয়েছে দুসাই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা, মুক্তানগর রিসোর্ট ও রাঙাউটি রিসোর্ট।ভোরের আকাশ/আজাসা
১ সপ্তাহ আগে
গাজীপুর সাফারি পার্কের ক্ষতিগ্রস্থ সীমানা প্রাচীর, কোর সাফারির বেষ্টনীর গেইট সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত বাঘ সিংহের কোর সাফারি দর্শনার্থীদের জন্য ১৪ দিনের জন্য পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বনসংরক্ষক এসিএফ মো. রফিকুল ইসলাম। ২১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত কোর সাফারি দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে।বৃহস্পতিবার গাজীপুর সাফারি পার্কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ শ্রমিকরা কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে কোর সাফারির বাঘ সিংহ ও ভালুক বেষ্টনীর সংস্কার কাজ করছেন। কাজের তদারকি করছেন পার্কের কমকর্তারা। পার্কে আসা দর্শনার্থীরা কোর সাফারি গেটের সামনে এসে ঘুরে যাচ্ছে।সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পার্কের কোর সাফারির সীমানা প্রাচীর অনেক জায়গায় জরাজীর্ণ। কোর সাফারির বাঘ, সিংহ, ভালুক বেষ্টনীর পকেট গেইটগুলো খুবই জরাজীর্ণ। এগুলো অনেকটাই নিচে দেবে গেছে। যার কারণে গেটগুলো খুলতে ও লাগাতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে । গেইট সংলগ্ন স্থানের জায়গায় মাটি দেবে যাওয়ার কারণে মিনিবাস চলাচলের সময় সমস্যা হয়। এসকল কারণে উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশনায় সাফারি পার্কের কোর সাফারি দর্শনার্থীদের জন্য ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছে।বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, ২১ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত সাফারি পার্কের কোর সাফারির সংস্কার কাজের কারণে বন্ধ থাকে। ৩ জুন সাফারি পার্কের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে ৪ জুন যথারীতি সাফারি পার্কের কোর সাফারি দর্শনার্থীদের জন্য খোলে দেয়া হবে।ভোরের আকাশ/এসআই
৩ সপ্তাহ আগে