সীতাকুণ্ডে হারিয়ে যাচ্ছে তালগাছ
তালপাতায় বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা বাতাসে দুলে-দুলে গভীর মুগ্ধতা ছড়িয়ে আদিকাল থেকেই তালগাছ বাড়িয়ে আসছে সীতাকুণ্ডের গ্রাম-বাংলার শোভা ও ঐতিহ্য। আর চিরকাল ধরেই তালগাছ বজ্রপাতজনিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে সীতাকুণ্ডবাসিকে রক্ষা করে আসছে।
এ উপজেলায় পরিবেশবান্ধব তালগাছের বিলুপ্ততায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত মৃত্যূঝুঁকি। ৯টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত সীতাকুণ্ড উপজেলায় রয়েছে ১২০টি গ্রাম। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠা ব্যাপক শিল্প-কারখানায় তালগাছের নিবিড় বনায়নে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব পড়লেও সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়ীয়া ও কুমিরায় আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি-সারি তালগাছের সেই নিবিড় বনায়ন এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি।
বজ্রপাত থেকে রক্ষায় উঁচু তালগাছের কোন বিকল্প নেই। উন্নত জাতের তালগাছ লম্বায় সত্তর থেকে আশি ফুট পর্যন্ত হয়। এ গাছের জীবনকাল প্রায় একশত থেকে একশত পঞ্চাশ বছর। তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহানি। রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিও।
গত আষাঢ়ে ১নং সৈয়দপুরের মহানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো, মাসুদের ৩টি গরু বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় মারাত্বক হতাশা নেমে আসে সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারে। গত বর্ষায় বজ্রপাতে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নস্থ কাজীপাড়ায় দরিদ্র কৃষক মো. হাশেমের ৩টি ও মুরাদপুর, সৈয়দপুরে আরো ৪টি গরু এবং ১টি মহিষের মৃত্যূতে কৃষক পরিবারে বাড়ছে আহাজারি।
৬নং বাশঁবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ছালামত উল্লাহ সালাম জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারি ভাবে তালগাছ রোপনের উদ্যোগে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো উপজেলায় হারিয়ে যাওয়া তালগাছের পুনঃ বনায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমুদ্র-পাহাড়ে অপরূপ উপজেলার প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে, রাস্তার ধারে, বেড়ীবাঁধ, অনাবাদি কিংবা পতিত জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালগাছ রোপনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
পৌরসভার পন্থিছিলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোঃ জহির উদ্দিন বাবর জানান, প্রাচীনকাল থেকেই তালগাছ তার রস, ফল ও বীজের শাঁস দিয়ে ভোজনরসিক সীতাকুণ্ডবাসীর রসনাবিলাস করে আসছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম সাইফুল আলম জানান, তালে রয়েছে ভিটামিন এ.বি ও সি, রয়েছে জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ অনেক খনিজ উপাদান। তালের রস দিয়ে গুড়, পাটালি, মিছরি, পায়েস এবং তাড়িসহ ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
সীতাকুণ্ডে জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়ে কাঁচা তালের শাঁস খাওয়ার জন্য গ্রাম বাংলায় চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। শ্রাবণ মাসে পাকা তালের হলুদ রসে তালের পিঠা, তালের রুটি, তালসত্ব এবং তালের বড়াসহ আরো কতো বাহারি রকম পিঠা স্বাদে-গন্ধে কদর দেশব্যাপী আদি ও অকৃত্রিম। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় সমাধান, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি, সু-স্বাস্থ্য রক্ষা, হজম শক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠ্য-কাঠিন্য দুর, হাড়কে শক্তিশালী করাসহ পাকা তালের রসে রয়েছে বহু পুষ্টিগুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য হতে রক্ষা করা ছাড়াও তালপাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, পুতুল, বিভিন্ন কুটির শিল্প ও হাতপাখা তৈরিতে রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। আর তালের কান্ড দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের খুঁটি, ভেলা ও নৌকা।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. কমল কদর জানান, তালগাছ অন্যতম পরিবেশবান্ধব, জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষাকারী পরমবন্ধু। এক সময় গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ বাড়ী-ঘর, রাস্তার দু-পাশ, পুকুরপাড়, বেড়িবাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর তালগাছ ছিল। তখন দুর থেকে কোন বাড়ী বা স্থান চেনাতে তালগাছের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে সেই দিন আর নেই। কালের পরিক্রমায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। তালগাছের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পাতায় বাসা তৈরি করে অবস্থান করা হাজার হাজার বাবুই পাখির কিচির-মিচির ডাকের মনোরম দৃশ্য।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরী ছোট বড় নৌকা (কোষা) মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কাঠ মিস্ত্রিরা। মাদারীপুরের শিবচরে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কর্মে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এসকল দিন মজুরেরা। এসব খেটে খাওয়া মানুষেরা বর্ষা মৌসুম ছাড়াও অন্য পেশায় শ্রম দিয়ে থাকেন। বর্ষা মৌসুমের আগেই তারা বিভিন্ন ধরনের ছোট বড় নৌকা বা ‘কোষা’ তৈরীতে ব্যস্ত থাকেন।শিবচর নদী বিধৌত এলাকা হলেও নদী শাসনের ফলে পানি প্রবেশের দ্বার দিয়ে চাহিদা পরিমাণ বর্ষার মৌসুমে জোয়ারের পানি ডুকছে না। পানি না থাকায় নৌকার চাহিদা কম,তবুও নৌকার দাম বাড়তি।বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুরে উপজেলার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ঘুরে এসব নৌকা তৈরীর কারিগরদের নৌকা বানাতে ব্যস্ত দেখা যায়,উপজেলার কাঁওড়াকান্দি পুরাতন ফেরিঘাট, চরজানাজাত, মাদবরেরচর হাটের পদ্মাপাড়ে, আড়য়াল খা নদীর পাড়, উতরাইল, চর শ্যামাইল, শেখপুর বাজার, পাঁচ্চর, উপশহর এলাকায়সহ শিবচরের বেশ কিছু জায়গায় এই নৌকা মেরামতে কর্ম ব্যস্ত দেখা যায় সাধারণ দিন মজুরদের। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এসব কোষা বানিয়ে আয় রোজগার করছে সাধারণ কাঠ মিস্ত্রীরা।স্হানীয় লোকজন বলেন, আজকাল দেশের অনেক অঞ্চলেই সেই ৯০ দশকের মত পানি তেমন বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে না বিধায় নৌকার প্রচলন দিন দিন অনেকটাই কম দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে বিল এলাকা ও নদী এলাকায় কিছু নৌকা দেখা গেলেও এসব নৌকা দিয়ে খেয়া ঘাটে সল্প পরিসরে যাত্রী পারাপার,সল্প দুরে বিল থেকে কাটা ধান,পাটসহ যে কোনো বর্ষা মৌসুমের ফসল বয়ে নেওয়ার কাজে লাগছে।এছাড়াও নদী,বিলের মাছ ধরার কাজসহ এই নৌকা ব্যবহার করছে অনেকেই। বিশেষ করে কৃষকদের কাজে বেশি ব্যবহিত করছে।আবার অনেকেই শখের বসে এই নৌকা ব্যবহার করছে।৯০ দশকের তুলনায় নৌকার চাহিদা কিছুটা কম। কারণ আগের মত জোয়ারের পানি বিভিন্ন খাল বিলে তেমর প্রবেশ করছে না। ‘পদ্মা বেড়িবাঁধ’ নদী শাসনের ফলে অনেক শাখা নদীর মুখ বন্ধ রয়েছে দেওয়া হয়েছে কালবাট।তাই চাহিদা অনুযায়ী পানি ডুকছে না। যতটুকু পানি আসে তাও বেশি দিন স্হায়ী থাকছে না। তাই দিন দিন নৌকার চাহিদা কমছে।নৌকার চাহিদা কম থাকলেও বাড়ছে নৌকার দাম।একাধিক শ্রমজীবী বলেন,এখন আর আগের মত পানি ও হয় না। পদ্মা বেড়িবাঁধের কারনণ বিভিন্ন খাল,বিলে পানি ডুকছে না। পানির অভাবে নৌকার চাহিদা কম। তবুও আমরা পেটের দায়ে রোজ মায়না হিসাবে কাজ করছি।কাজের মজুরী হিসাবে রোজ ৮ থেকে ১২ শত টাকা মায়না পাই।কোন মতে দিনকাল পার করছি। বর্ষার মৌসুম ছাড়া কাম কম থাকে। তখন ঘর বাঁধার কাজ করে থাকি। এসব নৌকা তৈরী করতে অনেক পরিশ্রম হয়।এসব নৌকা তৈরী করতে বিভিন্ন গাছের কাঠ,লোহার পেরাক,পাতাম,বিট ফোম,আলকাতরা,ধুপ কাঠের আঠাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নৌকা বানিয়ে থাকি।সাধারণত একটি নৌকা মেরামত করতে আমাদের কমপক্ষে ২ থেকে ৩ দিন সময় লাগে।বিভিন্ন নকশি আকারে এই নৌকা বানিয়ে থাকি।দাম বৃদ্ধির এব্যাপারে মহাদেব নামে এক মহাজন বলেন, প্রতিবছর আমরা নৌকা তৈরী করে থাকি।তবে বর্ষা মৌসুমে আষাঢ়,শ্রাবণ,ভাদ্র এই তিন মাসে আমরা নৌকা তৈরীতে একটু বেশি ব্যস্ত থাকি।ছোট,বড় ও মাঝারি ধরতেন কোষা বানিয়ে পাইকারি ও খুচরা বিক্রী করছি। গাছ ও মজুরীর দামের উপর ভিত্তি করে নৌকার দামের তারতম্য হয়।এছাড়াও কি কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরী করছি,সেটার উপর বিবেচনা করে দাম কম বেশি নিয়ে থাকি।নৌকার দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে দিলীপ বাবু বলেন,সাধারণত চাম্বুল গাছের নৌকার দাম সবচেয়ে কম,চাম্বুল গাছের ৮ হাতের একটি নৌকা ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা কঁড়াই গাছের ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা এবং মেহেগুনী গাছের একই হাতের একটি নৌকা ৫ হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি।এছাড়াও পরি সূত্র দর বলেন, ১০ হাত একটি নৌকা ভালো কাঠের ৯ হাজার,১১ হাতের একটি নৌকা ১০ হাজার এবং ১২ হাতের একটি নৌকা ১১ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রী হয়ে থাকে।এসব নৌকা খুচরা হিসাবে বাজারে আরো কম বা বাড়তি দামেও বিক্রি করে থাকি।ভোরের আকাশ/আজাসা
তালপাতায় বাবুই পাখির শৈল্পিক বাসা বাতাসে দুলে-দুলে গভীর মুগ্ধতা ছড়িয়ে আদিকাল থেকেই তালগাছ বাড়িয়ে আসছে সীতাকুণ্ডের গ্রাম-বাংলার শোভা ও ঐতিহ্য। আর চিরকাল ধরেই তালগাছ বজ্রপাতজনিত প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে সীতাকুণ্ডবাসিকে রক্ষা করে আসছে। এ উপজেলায় পরিবেশবান্ধব তালগাছের বিলুপ্ততায় বাড়ছে প্রাকৃতিক দূর্যোগজনিত মৃত্যূঝুঁকি। ৯টি ইউনিয়ন ও ১ পৌরসভা নিয়ে গঠিত সীতাকুণ্ড উপজেলায় রয়েছে ১২০টি গ্রাম। উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠা ব্যাপক শিল্প-কারখানায় তালগাছের নিবিড় বনায়নে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব পড়লেও সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, সীতাকুণ্ড পৌর সদর, মুরাদপুর, বাঁশবাড়ীয়া ও কুমিরায় আকাশ ছুঁই ছুঁই সারি-সারি তালগাছের সেই নিবিড় বনায়ন এখন শুধুই স্মৃতি আর স্মৃতি। বজ্রপাত থেকে রক্ষায় উঁচু তালগাছের কোন বিকল্প নেই। উন্নত জাতের তালগাছ লম্বায় সত্তর থেকে আশি ফুট পর্যন্ত হয়। এ গাছের জীবনকাল প্রায় একশত থেকে একশত পঞ্চাশ বছর। তালগাছ হারিয়ে যাওয়ায় উপজেলায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুহানি। রেহাই পাচ্ছে না পশু-পাখিও। গত আষাঢ়ে ১নং সৈয়দপুরের মহানগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক মো, মাসুদের ৩টি গরু বজ্রপাতে নিহত হওয়ার ঘটনায় মারাত্বক হতাশা নেমে আসে সীতাকুণ্ডের কৃষক পরিবারে। গত বর্ষায় বজ্রপাতে ৭নং কুমিরা ইউনিয়নস্থ কাজীপাড়ায় দরিদ্র কৃষক মো. হাশেমের ৩টি ও মুরাদপুর, সৈয়দপুরে আরো ৪টি গরু এবং ১টি মহিষের মৃত্যূতে কৃষক পরিবারে বাড়ছে আহাজারি। ৬নং বাশঁবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. ছালামত উল্লাহ সালাম জানান, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সরকারি ভাবে তালগাছ রোপনের উদ্যোগে দেশের অন্যান্য এলাকার মতো উপজেলায় হারিয়ে যাওয়া তালগাছের পুনঃ বনায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সমুদ্র-পাহাড়ে অপরূপ উপজেলার প্রকৃতির জীব-বৈচিত্র্য রক্ষায় বাড়ীর আঙ্গিনার পাশে, রাস্তার ধারে, বেড়ীবাঁধ, অনাবাদি কিংবা পতিত জমি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তালগাছ রোপনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পৌরসভার পন্থিছিলার বাসিন্দা চট্টগ্রাম জজ আদালতের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মোঃ জহির উদ্দিন বাবর জানান, প্রাচীনকাল থেকেই তালগাছ তার রস, ফল ও বীজের শাঁস দিয়ে ভোজনরসিক সীতাকুণ্ডবাসীর রসনাবিলাস করে আসছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস. এম সাইফুল আলম জানান, তালে রয়েছে ভিটামিন এ.বি ও সি, রয়েছে জিংক, পটাসিয়াম, আয়রন ও ক্যালসিয়াম সহ অনেক খনিজ উপাদান। তালের রস দিয়ে গুড়, পাটালি, মিছরি, পায়েস এবং তাড়িসহ ইত্যাদি তৈরি করা হয়।সীতাকুণ্ডে জৈষ্ঠ্য-আষাঢ়ে কাঁচা তালের শাঁস খাওয়ার জন্য গ্রাম বাংলায় চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায়। শ্রাবণ মাসে পাকা তালের হলুদ রসে তালের পিঠা, তালের রুটি, তালসত্ব এবং তালের বড়াসহ আরো কতো বাহারি রকম পিঠা স্বাদে-গন্ধে কদর দেশব্যাপী আদি ও অকৃত্রিম। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যায় সমাধান, স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি, সু-স্বাস্থ্য রক্ষা, হজম শক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠ্য-কাঠিন্য দুর, হাড়কে শক্তিশালী করাসহ পাকা তালের রসে রয়েছে বহু পুষ্টিগুন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা পরিবেশের ভারসাম্য হতে রক্ষা করা ছাড়াও তালপাতা দিয়ে ঘর ছাওয়া, চাটাই, মাদুর, আঁকার পট, পুতুল, বিভিন্ন কুটির শিল্প ও হাতপাখা তৈরিতে রয়েছে অপরিসীম ভূমিকা। আর তালের কান্ড দিয়ে তৈরি হচ্ছে ঘরের খুঁটি, ভেলা ও নৌকা। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. কমল কদর জানান, তালগাছ অন্যতম পরিবেশবান্ধব, জনপ্রিয়, ঐতিহ্যবাহী ও প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে রক্ষাকারী পরমবন্ধু। এক সময় গ্রাম-বাংলার অধিকাংশ বাড়ী-ঘর, রাস্তার দু-পাশ, পুকুরপাড়, বেড়িবাঁধ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রচুর তালগাছ ছিল। তখন দুর থেকে কোন বাড়ী বা স্থান চেনাতে তালগাছের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে সেই দিন আর নেই। কালের পরিক্রমায় আজ হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব ঐতিহ্যবাহী তালগাছ। তালগাছের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে পাতায় বাসা তৈরি করে অবস্থান করা হাজার হাজার বাবুই পাখির কিচির-মিচির ডাকের মনোরম দৃশ্য।ভোরের আকাশ/আজাসা
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা ধুলাসার-ডাবলুগজ্ঞ ইউনিয়নের খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর সাঁকোটির এক পাড়ে তারিকাটা-নয়াকাটা ও অপর পাড়ে সুরডগি-কাজিকান্দা গ্রাম। প্রতিবছর নিজেদের টাকায় সাঁকো মেরামত করছেন তারা। বর্তমানে সাকোঁটির বাঁশ, দড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি পাকা সেতু গ্রামবাসীর দাবি হলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। খাপড়াভাঙ্গা নদের এই সাঁকো দিয়েই দৈনিক পারাপার হচ্ছে ১৫ গ্রামের মানুষ। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী। বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সাঁকোর বদলে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর সেতু নির্মাণ হয় না। একটি পাকা সেতু হলে ওই দু’ইউনিয়নের চিত্র বদলে যেতো। একবিংশ শতাব্দীর এই আত্যানিক যুগেও মাত্র নড়বড়ে সাঁকো হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র উপায়। খাপড়াভাঙ্গা নদের দৈর্ঘ্য ৫কিলোমিটার ও প্রস্থ ২৯০ফুট।দুই গ্রামের মানুষ ছাড়া ও দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। নদীর উত্তর পাড়ের তারিকাটা, নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বৌলতলী গ্রাম, বৌলতলীপাড়া, মুসলিমপাড়া, খেচাউপাড়া, বেতকাটা, বেতকাটাপাড়া, বেতকাটাচর, সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া, নদীর দক্ষিণপাড়ে কাজিকান্দা, সুরডগি, বরকুতিয়া, খাপড়াভাঙ্গা, মনসাতলীসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষকে এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় রাখাইন মন্দির মিশিপাড়া ও লক্ষèীর বাজার এবং শিববাড়ীয়াবাজার যেতে পার হতে হয় এই বাঁশের সাঁকো। এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে স্কুল-মাদরাসা-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা হিমশিম খায়। অসুস্থ ও গর্ববতী মায়েদের নিয়ে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। এত ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে ঘটেছে অহরহ দুর্ঘটনা।নড়বড়ে সাঁকো পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার ও ইউনিয়ন ভুমি অফিস কার্যালয়ে, থানায়, কৃষি ব্যাংক যাতায়াত করেন তারিকাটা, নয়াকাটা, নয়াকাটা দিওর, বৌলতলী গ্রাম, বৌলতলীপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা। জনপ্রতিনিধিরা একাধিকবার তারিকাটা ও কাজিকান্ধা গ্রামের মাঝামাঝি পয়েন্টে খাপড়াভাঙ্গা নদের ওপর পাকা সেতু নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতি খাপড়াভাঙ্গা নদের পারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন শ ফুট চওড়া নদীর ওপর দুটি বাঁশ দিয়ে তৈরি বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার করছে আশপাশের এলাকার মানুষজন। এ সময় কথা হয় হয় বংশাল গ্রামের বাসিন্দা রোসাংগিরিি বদ্যালয়ের শিক্ষক জালাল উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে বুক কাঁপে। আমারই যখন এই দশা, তখন শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হবে বুঝতেই পারছেন।’ তারিকাটা পয়েন্টে একটি সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ বছরের পর বছর ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী একটি সেতুর জন্য বিভিন্ন মহলে আবেদন নিবেদন করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ২০০৫ সালে এলাকার লোকজনের উদ্যোগে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে বাঁশ পচে নষ্ট হয়ে যায়। আবার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদা তুলে সাঁকোটি মেরামত করা হয়। বর্তমানে সাঁকোটির অবস্থা খুবই খারাপ। এলাকাবাসী সূত্র জানায়, প্রায় ২৮ বছর ধরে এলাকাবাসীর চাঁদায় নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে নদেও পাড়ে দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একম মানুষ ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। সাঁকোটির পাশেই তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা, মিশ্রিপাড়া ফাতেমা হাই মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে নদীর এপার-ওপারে যেতে হয়। বাঁশের সাঁকো পাড় হয়ে মহিপুর থানা, কৃষি ব্যাংক, ভুমি অফিস, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এখানে সপ্তাহের একদিন শনিবার ও বৃহস্পতিবার এই হাট বসে। দূরদুরান্ত থেকে কৃষিপণ্য ও মালামাল মাথায় করে এলাকাবাসীকে এ সাঁকো পার হয়ে হাটে যেতে হয়। নদের ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি প্রায় দুই যুগের। কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় সেতু না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য এই সাঁকোই ভরসা। সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। যান চলাচলের ব্যবস্থা না থাকায় অসুস্থ মানুষকে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা নিয়ে আসতে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ওই নয়াকাটা গ্রামের স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য নোয়াব আলী হাওলাদার বলেন, দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই বাঁশের সাঁকো। এত বড় ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হয়ে স্কুল-মাদরাসা-কলেজগামী ছাত্রছাত্রীরা হিমশিম খায়। অসুস্থ ও গর্ববতী মায়েদের নিয়ে কষ্টের কোনো শেষ থাকে না। এত ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে ঘটেছে অহরহ দুর্ঘটনা।সুরডগি/ বরকুতিয়া গ্রামের ৭ম শ্রেণির /১০ম শ্রেনির শিক্ষার্থী রুবেল ও তামান্না বলেন, সরু নড়বড়ে বাঁশের সেতু পার হয়ে তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসায় যাতায়াত করতে হয়। কেবল এই দুই শিক্ষার্থী নয়, খাপড়াভাঙ্গা নদের তীরের দু’টি ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ এমন ঝক্কি পোহাচ্ছেন।তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মো. শামসুল হক বলেন, নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন তারিকাটা দাখিল মাদ্রাসা ছাত্রÑছাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। অনেক জায়গা বাঁশ নেই। তা ধরে আসতে মাদ্রাসা আসতে ভোগ পেতে হয়। তারপর ছাত্রÑছাত্রীরা পড়াশুনা কথা চিন্তা মাদ্রাসায় আসে। ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল রহিম জানান, জনস্বার্থে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করা উচিত। আমি কয়েক মাস আগে পাকা সেতুর জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি)স্কিম করে গেছে। এখন কবে বরাদ্ধ তা জানি না। ডাবলুগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো.হেদায়েত উল্লাহ জানান, আগামি মাসিক মিটিং নড়বড়ে সেতুটি আলোচনা করা হবে।কলাপাড়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে(এলজিইডি)উপসহকারী প্রকৌশলী মো.আবুল হোসেন বলেন, আগামী তালিকায় ওই বাঁশের সাকোটি তালিকা পাঠানো হবে। ভোরের আকাশ/আজাস
ছুটিতে কিংবা বর্ষার যেকোনো সময় আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য হতে পারে চায়ের রাজ্য মৌলভীবাজার জেলা। শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ যাওয়ার পাকা সড়কটা ধরে চলেছি। একটি অটোরিকশায় চেপে। দুই পাশে চা বাগানের রাজ্যের মাঝখান দিয়ে ছুটেছে গাড়ি। একটু পর গ্র্যান্ড সুলতান রিসোর্ট পেরিয়ে লাউয়াছড়ার সীমানায় ঢুকে পড়লাম। দুই পাশ থেকে পাখি আর নানা কীট-পতঙ্গের ডাক তারই জানান দিল। তবে এখানেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া মূল রাস্তা বাদ দিয়ে ডানের একটা পথ ধরলাম আমরা। গন্তব্য মাধবপুর লেক। লেবু-আনারসের বাগান পেরিয়ে, লেমন গার্ডেন নামের একটি রিসোর্টকে ডানে রেখে কিছুটা এগুতেই আশ্চর্য সুন্দর এক জগতে চলে এলাম।প্রবেশের পথটা বাঁশ দিয়ে আটকানো ছিল। গার্ডকে বলে ভেতরে ঢুকেতে হলো। এটাও একটা চা বাগান। তবে ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন আর এত সুন্দরভাবে টিলার গায়ে চা গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে, মিলিয়ে দারুণ লাগল। দুটি সুন্দর খরের ছাউনি একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আদর্শ। হালকা ছাটে বৃষ্টি পড়ছে। বাগানে তখনো কাজ করছেন চা শ্রমিকেরা। গল্পটি বেশ কয়েক বছর আগের। প্রথম দেখাতেই আমাকে মুগ্ধ করে নূরজাহান চা বাগান। এরপর যতবার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে গিয়েছি এই বাগানটিতে একবার ঢু মারতে ভুল করিনি।ওই যে মাধবপুর লেকের কথা বললাম ওটাও পড়েছে মাধবপুর চা বাগানের সীমানায়। বর্ষায় ভারি সুন্দর হ্রদটা। ওপর থেকে চারপাশের চা বাগান-পাহাড় মিলিয়ে দারুণ লাগে।শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ গেলে লাউয়াছড়ার জঙ্গলে না গিয়েই বা থাকবেন কীভাবে? বনটির কথা ভাবতে গিয়ে স্মৃতিকাতরতা পেয়ে বসল। ঢাকা থেকে সিলেট যাচ্ছিলাম আন্তঃনগর পারাবত এক্সপ্রেসে। পথেই পড়ে আমার নানার বাড়ির স্টেশন হরষপুর। ওই স্টেশন পেরিয়ে আরো অন্তত ঘণ্টা দেড়েক চলার পর হঠাৎ একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়ল ট্রেন। জানালা দিয়ে তাকিয়ে ছিলাম বাইরে, ট্রেন ভ্রমণে এই কাজটাই সবচেয়ে আনন্দ নিয়ে করি। চমকে উঠলাম, আশ্চর্য সুন্দর এক পৃথিবীতে চলে এসেছি। এই অচেনা রাজ্যে ঘন গাছপালার ঠাসবুনোট। হাত দশেক দূরে একটা গাছ ভেঙে কাৎ হয়ে আছে আরেকটার ওপর। এক ডাল থেকে আরেক ডালে উড়ে যাচ্ছে পাখি। ওদের সঙ্গে সমান তালে ডাকছে পোকামাকড়েরা। এ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নেই লোকজনের বিরক্তিকর কোলাহল।যতটা সময় ট্রেনটা দাঁড়িয়ে ছিল মোহাচ্ছন্ন হয়ে ছিলাম, তারপর আবার যখন যেমন হঠাৎ থেমেছিল তেমন আচমকা ছেড়ে দিল, তখনই বাস্তবে ফিরলাম। ঘটনাটা বহু বছর আগের, এইচএসসি পাশের পর সিলেট যাচ্ছিলাম শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে। ঢাকা ফিরে আসার পর জানতে পারি ওটাই লাউয়াছড়া। এখন অবশ্য লাউয়াছড়া পর্যটককে রীতিমতো গমগম। এতটাই যে বনের প্রাণীদের ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। আমার মনে হয় ভোরের দিকে হাজির হতে পারেন। মানুষের ভিড় থাকবে না। নীরবে হাঁটলে বুনোরা বিরক্ত হবে না। এদের অনেকের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। লাউয়াছড়ায় যখনই গিয়েছি পাহাড়ের ওপর খাসিয়া পাড়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেছি। অদ্ভুত সুন্দর, স্বচ্ছ জলের এক ছড়া পেরিয়ে পাহাড়ের গায়ে মাটির সিঁড়িপথ ধরে হেঁটে বেশ লাগে পাড়াটায় যেতে। তবে আমার ওই পাড়ার চেয়েও বেশি ভালো লাগে পাড়ায় যাওয়ার পথের ওই ঝিরিটাতে সময় কাটাতে। স্বচ্ছ পানির নিচে বালু দেখতে পাবেন পরষ্কার। আবার ঝিরি ধরে হাঁটতে হাঁটতে দুই পাশের প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়া জঙ্গলের রূপ উপভোগ করতে পারবেন চমৎকার।জঙ্গলের ভেতর দিয়ে কু ঝিক ঝিক শব্দে চলে যাওয়া রেলগাড়ি দেখাটাও উপভোগ্য।লাউয়াছড়ার কথা যখন এল চাইলে কমলগঞ্জের রাজকান্দি রেঞ্জের আদমপুর বনে ঘুরে আসতে পারেন। পর্যটকদের চাপ না থাকায় অরণ্যপ্রেমী হলে দারুণ উপভোগ করবেন সন্দেহ নেই। হামহাম জলপ্রপাতটিও খুব দূরে নয়।শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জে আরও ঘুরে বেড়াতে পারেন ভারাউড়া লেক, লাল পাহাড়, দার্জিলিং টিলা, শংকর টিলা, গরম টিলা, ডিনস্টন ওয়ার সিমেট্রি, হরিণছড়া গলফ মাঠ, চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতো জায়গায়। চা বাগানের পাশাপাশি বর্ষায় আনারস আর লেবু বাগানগুলোতে চমৎকার সময় কাটবে। চাইলে পথের ধারে গাড়ি থেকে নেমে আনারস খেতেও পারবেন। অনেক চা বাগানের রাজ্য বলতে শুধু শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জকে বুঝলেও মৌলভীবাজারের জুড়ি, কুলাউড়া আর বড়লেখাও চা বাগানও মন জুড়িয়ে দেবে। জুড়ি থেকে লাঠিটিলার জঙ্গলে যাওয়ার পথে, চা বাগান ঘেরা আশ্চর্য সুন্দর এক জায়গা পাবেন। সবসময় গা বেয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়তে থাকে এমন একটি পাহাড় পেরিয়ে, রাস্তা চলে গেছে একটা সেতু হয়ে ছড়ার ওপর দিয়ে। গাড়িটা ওখানে দাঁড় করাবেন।সবুজ টিলায় চা বাগান, সমতলের ধানি জমি, মাঝখানের এই রাস্তা সব মিলিয়ে রীতিমতো দিশেহারা হয়ে পড়বেন সৌন্দর্যে। ওখানটায় বেশ কতকটা সময় দাঁড়িয়ে থাকলে আমি যেন পিছিয়ে যাই অন্তত ত্রিশ-চল্লিশ বছর। মানস চোখে দেখি, জমিতে কয়েকটা গরু চরছে, আচমকা পাহাড়ের গায়ের এক পাথরের আড়াল থেকে বিশালদেহী এক বাঘ প্রবল হুংকারে ঝাঁপিয়ে পড়ল একটার ঘাড়ে! জুড়ির লাঠিটিলা এবং সাগরনাল বনও মুগ্ধ করবে আপনাকে। তেমনি চলে যেতে পারেন একেবারে সীমান্তের ধারে ফুলতলা চা বাগান পর্যন্ত। আর এতদূর যদি এগিয়ে যান বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত না দেখে কী ফিরবেন। এই বৃষ্টিতে জলপ্রপাতটি নাকি রীতিমতো ফুলে-ফেঁপে উঠেছে।ভোরের আকাশ/আজাসা