নরসুন্দরের ঐতিহ্যের স্মৃতি
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী বাজার। সপ্তাহে একদিন- শনিবার এই বাজারে বসে জমজমাট হাট। হাটের সবচেয়ে চিরচেনা ও ব্যতিক্রমী দৃশ্যটি হল, বিশাল বটগাছের ছায়াতলে একদল নরসুন্দরের কর্মব্যস্ততা। যুগ বদলেছে, শহরের মোড় ঘুরলেই দেখা মেলে ঝলমলে আধুনিক মানের সেলুন। কিন্তু এখানকার অনেকে এখনো ছুটে আসেন এই বটতলার নরসুন্দরের কাছে- চুল-দাঁড়ি কাটাতে।
এই বটগাছের ছায়াতলে নরসুন্দরের কাজে কেউ কেউ পার করেছেন জীবনের অর্ধশতাব্দীও। ত্রিশাল উপজেলার বগারবাজার এলাকার সত্তর বয়সী রায়মন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি পাকিস্তান আমল থেকেই কাজ করছি। তখন হাতে কাজ থাকতো, পকেটে টাকা থাকতো। রায়মন চন্দ্র শীল জানান, এখনো হাটের দিনে এই বটগাছের নিচে কাজ করেন, বাকি দিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। আগে দিনে সাত-আটশ টাকা রোজগার হতো, এখন পাঁচশও হয় না।
ভালুকার তামাট গ্রামের ইন্দ্রমোহন (৭০) প্রায় দেড় যুগ ধরে এই হাটে নরসুন্দর এর কাজ করছেন। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আগে হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হতো, এখন সেই জৌলুস নেই।’
তবে তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ এখনো এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। পাঁচগাঁও হাজিরবাজারের সুমন শীল (২৪) নিজের গ্রামে একটি সেলুন পরিচালনা করেন। তবুও প্রতি শনিবার চলে আসেন মল্লিকবাড়ী হাটে। তার ভাষায়, ‘এখানে একটা টান আছে, খদ্দেররাও পরিচিত। পরিবেশটা যেন আপন হয়ে গেছে।’
স্থানীয় প্রবীণ নরসুন্দর নুর মোহাম্মদ (৭৩) জানালেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে এই বাজারে নরসুন্দর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। আজও এই পেশা ধরে রেখেছি। বললেন, আগে সকাল থেকেই সারি করে খদ্দের বসতো। এখন আর সেই ভিড় নেই, তবে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো টাকা আয় হয়।”
৯০ বছর বয়সী নিয়মিত ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “অনেক বছর ধরেই এখানেই চুল-দাঁড়ি কাটাই। সেলুনে গেলে খরচ বেশি হয়, এখানে কম খরচে ভালো কাজ হয়।”
এই বটগাছ, পুরনো কিছু আয়না আর একজোড়া কাঁচির মধ্যে এখনো টিকে আছে এক ঐতিহ্যবাহী পেশা। মল্লিকবাড়ী বাজারের এই নরসুন্দর হাট শুধু একটি পেশাভিত্তিক কেন্দ্রবিন্দু নয়- এটি একেকটি জীবনের গল্প, লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত স্মারক।
প্রতি শনিবার বসা এই হাট বহু পরিবারের জীবিকার উৎস এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন। ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্য এখনো ধুকে ধুকে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতি, মমতা আর প্রয়োজনের তাগিদ থেকে। এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা।
ভোরের আকাশ/আজাসা
সংশ্লিষ্ট
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার মল্লিকবাড়ী বাজার। সপ্তাহে একদিন- শনিবার এই বাজারে বসে জমজমাট হাট। হাটের সবচেয়ে চিরচেনা ও ব্যতিক্রমী দৃশ্যটি হল, বিশাল বটগাছের ছায়াতলে একদল নরসুন্দরের কর্মব্যস্ততা। যুগ বদলেছে, শহরের মোড় ঘুরলেই দেখা মেলে ঝলমলে আধুনিক মানের সেলুন। কিন্তু এখানকার অনেকে এখনো ছুটে আসেন এই বটতলার নরসুন্দরের কাছে- চুল-দাঁড়ি কাটাতে।এই বটগাছের ছায়াতলে নরসুন্দরের কাজে কেউ কেউ পার করেছেন জীবনের অর্ধশতাব্দীও। ত্রিশাল উপজেলার বগারবাজার এলাকার সত্তর বয়সী রায়মন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমি পাকিস্তান আমল থেকেই কাজ করছি। তখন হাতে কাজ থাকতো, পকেটে টাকা থাকতো। রায়মন চন্দ্র শীল জানান, এখনো হাটের দিনে এই বটগাছের নিচে কাজ করেন, বাকি দিন গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন। আগে দিনে সাত-আটশ টাকা রোজগার হতো, এখন পাঁচশও হয় না।ভালুকার তামাট গ্রামের ইন্দ্রমোহন (৭০) প্রায় দেড় যুগ ধরে এই হাটে নরসুন্দর এর কাজ করছেন। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আগে হাটের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হতো, এখন সেই জৌলুস নেই।’তবে তরুণ প্রজন্মের কেউ কেউ এখনো এই ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। পাঁচগাঁও হাজিরবাজারের সুমন শীল (২৪) নিজের গ্রামে একটি সেলুন পরিচালনা করেন। তবুও প্রতি শনিবার চলে আসেন মল্লিকবাড়ী হাটে। তার ভাষায়, ‘এখানে একটা টান আছে, খদ্দেররাও পরিচিত। পরিবেশটা যেন আপন হয়ে গেছে।’স্থানীয় প্রবীণ নরসুন্দর নুর মোহাম্মদ (৭৩) জানালেন, মাত্র ১০ বছর বয়সে এই বাজারে নরসুন্দর হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। আজও এই পেশা ধরে রেখেছি। বললেন, আগে সকাল থেকেই সারি করে খদ্দের বসতো। এখন আর সেই ভিড় নেই, তবে প্রতিদিন গড়ে পাঁচশো টাকা আয় হয়।”৯০ বছর বয়সী নিয়মিত ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “অনেক বছর ধরেই এখানেই চুল-দাঁড়ি কাটাই। সেলুনে গেলে খরচ বেশি হয়, এখানে কম খরচে ভালো কাজ হয়।”এই বটগাছ, পুরনো কিছু আয়না আর একজোড়া কাঁচির মধ্যে এখনো টিকে আছে এক ঐতিহ্যবাহী পেশা। মল্লিকবাড়ী বাজারের এই নরসুন্দর হাট শুধু একটি পেশাভিত্তিক কেন্দ্রবিন্দু নয়- এটি একেকটি জীবনের গল্প, লোকজ সংস্কৃতির জীবন্ত স্মারক।প্রতি শনিবার বসা এই হাট বহু পরিবারের জীবিকার উৎস এবং অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বপ্ন। ডিজিটাল যুগে আধুনিকতার ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসা এই ঐতিহ্য এখনো ধুকে ধুকে বেঁচে আছে মানুষের স্মৃতি, মমতা আর প্রয়োজনের তাগিদ থেকে। এমনটাই মনে করেন স্থানীয়রা। ভোরের আকাশ/আজাসা
রাজশাহীতে চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। এই প্রচণ্ড গরমে পথচারী ও জনসাধারণের মুখে ঠান্ডা স্বস্তির ছোঁয়া এনে দিচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী ফল তালের চোখ। শহরের অলিগলি, রাস্তার মোড় কিংবা পাড়া-মহল্লার সর্বত্রই এখন দেখা মিলছে ভ্রাম্যমাণ ঠেলাগাড়িতে বিক্রি হওয়া এই মৌসুমি ফলের।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোদের তাপমাত্রা যত বাড়ছে ততই চাহিদা বাড়ছে এই ফলের। পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও তৃষ্ণায় স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের চোখ। তালের চোখ শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। তালের চোখ থাকা জলীয় অংশ শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। এছাড়া, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ ও ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘বি’ রয়েছে ফলটিতে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একই সঙ্গে রক্তশূন্যতা দূর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচিও বাড়ায় তালের চোখ। এক চোখ ৫ টাকা, হালি ২০ টাকা এই দামে বিক্রি হচ্ছে তালের চোখ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, কাটাখালি, বোয়ালিয়া, শালবাগান, ভদ্রা, সাগরপাড়া, কাদিরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় ক্রেতাদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের তালের তালের চোখ খেতে দেখা গেছে। আবার অনেককেই পরিবারের জন্য ফলটির চোখ কিনে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।সাহেববাজার মোড়ে তালের চোখ বিক্রি করছেন মতিন (৩৫)। তিনি বলেন, এই গরমে মানুষ ঠান্ডা কিছু খুঁজে। তালের চোখ বরফ ঠান্ডা করে দিলে বিক্রি আরও বেড়ে যায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দুই-তিন শত হালি অনায়াসে বিক্রি করি।কাটাখালির বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম জানান, পাইকারি বাজার থেকে আনছি। দাম একটু চড়া হলেও বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। মানুষ খেয়ে খুশি। কেমিক্যাল নেই, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ঠান্ডা ফল।শালবাগান এলাকার গৃহবধূ রোজিনা বেগম বলেন, তালের চোখ খেয়ে শৈশবের কথা মনে পড়ে। এখন শহরেই সহজে পাওয়া যাচ্ছে, ভালো লাগছে।রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, ফ্রিজের পানীয় বা আইসক্রিমের চেয়ে তালের চোখ বেশি স্বাস্থ্যকর ও স্বস্তিদায়ক।বিশেষজ্ঞদের মতে, তালের চোখে প্রাকৃতিক গ্লুকোজ, মিনারেল ও পানি রয়েছে, যা শরীরকে ঠান্ডা রাখে, ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে এবং হজমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।প্রচণ্ড গরমে যখন সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করছে, তখন রাজশাহীর মানুষকে স্বস্তি দিতে যেন আশীর্বাদের মতো হাজির হয়েছে তালের চোখ। শহরের প্রতিটি কোনায় কোনায় যেন চলছে এই প্রাকৃতিক ফলের এক নীরব উৎসব।ভোরের আকাশ/এসআই
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার নাগোরী ইউনিয়নের একটি গ্রাম ‘বিরতুল’। গ্রামটি ছোট্ট হলেও দেশ-বিদেশে রয়েছে এর সুখ্যাতি। এই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল হলেও এখানকার নারীরা প্রায় সবাই স্বাবলম্বী। তারা এখন আর স্বামীর সংসারে বোঝা নন। কারণ তাদের হাতের ছোঁয়ায় বিরতুল গ্রামটিকে সবাই দোলনার গ্রাম হিসেবেই চেনে। বিরতুলের নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন সুযোগ আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে বদলে দেওয়া যায় যেকোনো গল্পের গতি। জানা গেছে, বিরতুল গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বালু নদী। নদীর পাশে কৃষি নির্ভর বিরতুল গ্রামটি সবুজ-শ্যামলে ভরপূর। এখানে শত শত পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাঁশের ফ্রেমে হাতে বানানো দোলনা তৈরি করে আসছে।দোলনা তৈরিতে উপকরণ হিসেবে মূলত বাঁশ, রঙিন সুতা, প্লাস্টিক চেইন ব্যবহার করা হয়। তবে কালের পরিক্রমায় এখন আর বাঁশ ব্যবহার করা হয় না। এটি শহুরে সৌখিন মানুষদের কাছে অতিরিক্ত চাহিদা থাকার কারণে বাঁশের বদলে এখন ব্যবহার করা হয় লোহার রড।শুধু বিরতুল গ্রামই না পার্শ্ববর্তী ধনুন, বাগদী, বিন্দান ও সেনপাড়া গ্রামের নারীরাও এই দোলনা শিল্পে জড়িত। পাঁচ গ্রামের প্রায় ৩শ পরিবারের নানা বয়সী সহস্রাধীক নারী দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, বিরতুল ও আশপাশের গ্রামের নারীদের তৈরি দোলনা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন নামিদামি বিপনী-বিতানসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরবরাহ হয়। কেউ কেউ আবার বিদেশেও রফতানি করছেন।দোলনা তৈরির নারী কারিগররা জানান, বিরতুল গ্রামের নারীরা এক সময় পরিবার চালানোর জন্য পুরোপুরি স্বামীর ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিš‘ এখন আর তাদের টাকার জন্য কারও কাছে হাত পাততে হয় না।ওই গ্রামের উদোক্তারা জানান, দোলনার দাম কমে গেছে, বেড়েছে কাঁচামালের দাম। অভাব রয়েছে সরকারি সহায়তা বা প্রশিক্ষণের। সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ নেই বলে অনেকেই বড় পরিসরে কাজ করতে পারছেন না।উপজেলার নাগরী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ফারজানা তাসলিম বলেন, ইতিমধ্যে বিরতুল গ্রামের দোলনা তৈরির উদ্যোক্তারা বিভিন্ন নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স সংগ্রহ করেছেন। কলীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তনিমা আফ্রাদ বলেন, বিরতুল গ্রামের দোলনা শিল্পীদের উৎসাহিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাদের সহযোগীতায় ছিল সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। ভোরের আকাশ/আজাসাা
গ্রীষ্মের অন্যতম আকর্ষণ আম বাজারে এসেছে। রাজশাহীতে গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে আম নামানো। ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ অনুযায়ী প্রথম দিন গুটি জাতের আম বাজারে আনার কথা ছিল। কিন্তু আমের বাজার প্রথম দিনই দখলে নিয়েছে গোপালভোগ। গাছে আম পেকে যাওয়ায় চাষিরা বাজারে নিয়ে এসেছেন বলে জানা গেছে। তবে এবারও চাষিরা আড়ৎদারদের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। চাষিদের কাছ থেকে তারা ৪৮ কেজিতে এক মণ হিসেবে আম কিনছেন। কোথাও কোথাও ৫২ কেজিতে মণ ধরা হচ্ছে। অথচ আড়ৎদাররা বিক্রি করছেন ৪০ কেজিতে মণ। প্রথম দিনেই বানেশ্বর আমবাজারের দখল ছিল গোপালভোগ আমের। অথচ ঘোষিত ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ২২ মে থেকে গোপালভোগ আম বাজারে আসার কথা।এ ব্যাপারে কথা হয় ‘দেশজপণ্য’ নামের অনলাইন পোর্টালের মালিক ব্যবসায়ী মনিরুল বেলালের সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় গাছগুলোতে আগেই আম পেকে যায়। গত বুধবার তিনি গোদাগাড়ীর কাঁকনহাটের একটি বড় গাছ থেকে আম ভেঙেছেন। সব আম পেকে গেছে।তিনি বলেন, ‘ঠান্ডা ঘরে বসে গরমের আমের ক্যালেন্ডার করলে এ রকমই হবে। ২২ মে গোপালভোগ আম নামানোর দিন ধার্য করা হয়েছে। অথচ ওই সময় আসতে আসতে গোপালভোগ আম শেষ হয়ে যাবে।’সরকারি নির্দেশনা মানছেন না ব্যবসায়ীরা: জানা গেছে, ১০ মে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় একটি নির্দেশনা জারি করে। এতে বলা হয়েছে, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁ জেলায় কেজি দরে আম কেনাবেচা করতে হবে। সাধারণত আমচাষিরা তাদের উৎপাদিত আম মোকামে গিয়ে আড়ৎদার বা কোনো ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা ৪০ কেজিতে মণ হিসেবে আম না কিনে অঞ্চলভেদে ৪৫ থেকে ৫২ কেজি পর্যন্ত প্রতি মণ ধরেন। এই ব্যবসায়ীরাই আবার বিক্রির সময় প্রতি মণ ৪০ কেজি দরে বিক্রি করেন। এতে আমচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। রাজশাহীর বড় আমের সবচেয়ে বাজার বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। এই বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কোনো ব্যবসায়ীই কেজি দরে আম কেনাবেচা করছেন না। তারা ৪৮ কেজিতে মণ হিসাব করে আম কিনছেন।ব্যবসায়ী মানিক লাল বলেন, আম পাকার পর মণে তিন কেজি ওজন কমে যায়। আর পচা-ফাটা বাদ যাবে আরও চার কেজি আর এক কেজি আম আড়ৎদার নেবে। তাতে ঘাটতি হয়, সে জন্যই তারা ৪৮ কেজি মণ হিসাবেই আম কিনছেন।ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বললেন, ‘বানেশ্বর বাজারের আড়ৎদার বা বণিক সমিতির এটা নিয়ম। আমরা কিনছি ওইভাবে। দিচ্ছিও ওইভাবেই।’আমি চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, আড়ৎদাররা দেখে-শুনেই দাম ধরেন। এরপর ফাটা-পচার অজুহাতে প্রতিমণে বেশি নেন ৮ কেজি। চাষিরা পচা-ফাটা আম বাজারে আনেন না। তারা অতি যত্নের সাথে আম পাড়েন। তারপর বাছাই করেই সেগুলো বাজারে আনেন। এরপরও মণপ্রতি ৮ কেজি বাড়তি দিতে হচ্ছে। এক কেজি আমের দাম ৭০ টাকা ধরলে প্রতি মণে বেশি দিতে হচ্ছে ৫৬০ টাকার আম। এ যেন ব্যবসার নামে গলাকাটা। তিনি প্রশাসনকে বাজারে অভিযান চালানোর অনুরোধ করেন।জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কেজিতে ৮-১০ কেজি বেশি নেওয়া একটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এই অনিয়মকে তারা নিয়ম মনে করছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই নিয়ম ভাঙতে হবে। প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। আম কেজি হিসেবে কিনতে হবে এবং কেজি হিসেবেই বিক্রি করতে হবে। অন্যায় সহ্য করা হবে না।অভিযান চালানোর ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এই অন্যায় বন্ধ করতে চাষিদের সহযোগিতার প্রয়োজন। তাদের অভিযোগ করতে হবে। তারা অভিযোগ করলে কারা বেশি নিচ্ছেন, তা জানা সহজ হবে।এ বিষয়ে এক চাষি বলেন, সব আড়ৎদার বেশি নিচ্ছেন। এটা সমিতির সিদ্ধান্ত। এটা তো গোপন কিছু না। সুতরাং প্রশাসনের সদিচ্ছা প্রয়োজন। তারা যেকোনও সময় এলেই প্রমাণ পাবেন। শুধু নির্দেশনা জারি করলেই অনিয়ম বন্ধ হবে না। কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। কুরিয়ারের ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণ: যতগুলো কুরিয়ারের পার্সেল সার্ভিস আছে, সব কটিই বানেশ্বর বাজারে। তাদের কাছে আম যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দর দ্বিগুণ হয়ে যায়। এবার প্রতি কেজি আম পাঠানোর খরচ পড়ছে ১২ থেকে ২০ টাকা। ঢাকায় ১২ টাকা, ঢাকার বাইরে দূরত্ব অনুযায়ী ২০ টাকা পর্যন্ত। কুরিয়ার ভেদে এই খরচ কমবেশি রয়েছে। একজন ব্যবসায়ী জানান, তিনি সারা বছর কুরিয়ারের মাধ্যমে তেল পাঠিয়ে থাকেন। ঢাকায় ছয় টাকা কেজি হিসাবে খরচ পড়ে। কিন্তু তাদের দাঁড়িপাল্লায় আম ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ৬ টাকা হয়ে যায় ১২ টাকা।এ ব্যাপারে বাজারের জননী কুরিয়ার সার্ভিসের বানেশ্বর শাখার ব্যবস্থাপক ইয়াসিন আরাফাত বলেন, আম কাঁচামাল। এক দিন রেখে দেওয়া যায় না। গাড়ি না ভরলেও পাঠাতে হয়। তখন খরচ বেশি পড়ে যায়। আবার অনেক সময় আম নষ্ট হয়ে গেলে জরিমানাও দেওয়া লাগে।ক্ষোভ প্রকাশ করে এক ব্যবসায়ী বলেন, সবাই একটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর দুপয়সা কামিয়ে নেওয়ার সেই সময় ও সুযোগ হলো আম। সারা বছর কুরিয়ারে ঢাকায় জিনিসপত্র পাঠাই ছয় টাকা কেজি হিসেবে। আম শুনলেই খরচ লাগে ১২টাকা। এ থেকে পরিত্রাণের কোনও সুযোগ নেই।ভোরের আকাশ/এসএইচ