আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫ ০২:১২ এএম
অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে ‘তরল সোনা’, খনিজ দখল ঘিরে বাড়ছে উত্তেজনা
বিশ্বের সবচেয়ে শীতল, শুষ্ক ও প্রায় প্রাণহীন মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকার বরফের নিচে লুকিয়ে থাকতে পারে পৃথিবীর বৃহত্তম তেলের ভান্ডার। এমন দাবির পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। রুশ ভূতাত্ত্বিকদের বরাতে সম্প্রতি এমন তথ্য উঠে এসেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে।
রাশিয়ার গবেষকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টার্কটিকার ওয়েডেল সাগর অঞ্চলে সম্ভাব্যভাবে প্রায় ৫৫ হাজার ১১০ কোটি ব্যারেল তেলের মজুদ রয়েছে। যা উত্তর সাগরে গত ৫০ বছরে উত্তোলিত তেলের প্রায় ১০ গুণ বেশি।
ব্রিটিশ অধিকৃত অঞ্চল দাবি, রুশ অনুসন্ধানে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা বিশ্ব
ওয়েডেল সাগরের যেই অঞ্চলটিতে খনিজ তেলের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তা ব্রিটেনের দাবি করা "অধিকৃত অঞ্চল"-এর মধ্যে পড়ে। চিলি ও আর্জেন্টিনাও একই অঞ্চল নিয়ে দাবি জানিয়েছে। ফলে এই ‘তরল সোনা’ ঘিরে শুরু হতে পারে নতুন ভূরাজনৈতিক সংঘাত।
উল্লেখ্য, ১৯৫৯ সালের অ্যান্টার্কটিক চুক্তি অনুযায়ী এই মহাদেশে খনিজ সম্পদের উত্তোলন, সামরিক কার্যক্রম ও বাণিজ্যিক শোষণ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। তবে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনেকেই বর্তমানে অঞ্চল দখলের জন্য পরোক্ষ প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
রাশিয়া অ্যান্টার্কটিকায় ইতিমধ্যে পাঁচটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করেছে। একইসঙ্গে তারা চীনের সঙ্গে কৌশলগত চুক্তিও করেছে। এসব কার্যক্রম পশ্চিমা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাশিয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, দাবি করছে— বিজ্ঞান গবেষণার ছদ্মাবরণে রাশিয়া খনিজ দখলে আগ্রহী।
অন্যদিকে চিলি ও আর্জেন্টিনা তাদের দাবিকে জোরদার করতে অ্যান্টার্কটিকায় স্কুল ও গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলছে। ভূ-রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অ্যান্টার্কটিকার ভূমিকা আগামী দশকে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং হরমুজ প্রণালীর নিরাপত্তা পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বজুড়ে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে অ্যান্টার্কটিকার সম্ভাব্য তেল মজুদ রাশিয়ার জন্য এক কৌশলগত অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।
তবে রাশিয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, এই খনিজ অনুসন্ধান নিছক বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ এবং বর্তমানে কোনো বাণিজ্যিক ব্যবহার হচ্ছে না।
ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অ্যান্টার্কটিকার এই বিশাল সম্পদ ভবিষ্যতের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে, ঠিক তেমনি এটি হতে পারে আন্তর্জাতিক সংঘাতের নতুন কেন্দ্রবিন্দু।
ভোরের আকাশ//হ.র