আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫ ০৬:০৭ এএম
সাগরপথে আগত অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন স্থগিত করল গ্রিস
উত্তর আফ্রিকা থেকে সাগরপথে গ্রিসে প্রবেশ করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছে গ্রিস সরকার। বুধবার (১০ জুলাই) দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোতাকিস পার্লামেন্টে এক ভাষণে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী মিতসোতাকিস এই পরিস্থিতিকে "জরুরি অবস্থা" হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “এটি এমন এক পরিস্থিতি, যা জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি রাখে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, উত্তর আফ্রিকা থেকে সমুদ্রপথে আসা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন গ্রহণ সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে।”
এই স্থগিতাদেশ কেবলমাত্র গ্রীসের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ গাভদোস এবং ক্রিটে পৌঁছানো অভিবাসীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে। সরকার জানিয়েছে, এই অঞ্চলে অনিয়মিতভাবে প্রবেশকারী অভিবাসীদের আটক করা হবে।
গত কয়েকদিনে লিবিয়া থেকে নৌকায় করে গাভদোস এবং ক্রিট দ্বীপে অন্তত দুই হাজার অভিবাসী পৌঁছেছেন। অথচ গাভদোস দ্বীপের স্থায়ী জনসংখ্যা মাত্র একশ জন এবং সেখানে কোনো স্থায়ী আবাসন ব্যবস্থা নেই। পাশের দ্বীপ ক্রিটও আশ্রিত অভিবাসীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, আশ্রয় স্থগিত সংক্রান্ত আইন বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে ক্রিটে অভিবাসীদের জন্য একটি আটক কেন্দ্র নির্মাণের চিন্তাভাবনাও করছে গ্রিক সরকার।
সমুদ্রপথে অভিবাসন ঠেকাতে গ্রিক নৌবাহিনীর জাহাজ মোতায়েনেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। মঙ্গলবার হেলেনিক কোস্টগার্ড গাভদোস উপকূলে সংকটাপন্ন একটি নৌকা থেকে ৬৭ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করে। তাদের সবাই পুরুষ এবং সুস্থ রয়েছেন।
আরও একটি ঘটনায়, কুয়েতি পতাকাবাহী একটি জাহাজ ক্রিট উপকূল থেকে আরও একদল অভিবাসীকে উদ্ধার করে এবং তাদের স্থানীয় বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
৭ জুলাই গাভদোস উপকূল থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গ্রিক কর্তৃপক্ষ পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এক মিশরীয় ও দুই সুদানি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় ১৯,৭৯০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী গ্রিসে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে সাত হাজারই এসেছেন ক্রিটে। চলতি সপ্তাহে আরও অন্তত দুই হাজার নতুন অভিবাসী সেখানে পৌঁছানোর পর চাপ বেড়েছে দ্বীপটিতে।
গ্রিসের জনপ্রিয় পর্যটন দ্বীপ ক্রিটে গ্রীষ্ম মৌসুমের ভিড় শুরু হয়েছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক অভিবাসী আগমনের খবর ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অনেক পর্যটক তাদের নির্ধারিত ছুটি বাতিল বা স্থানান্তর করছেন বলেও জানা গেছে।
ক্রিটে আসা অধিকাংশ অভিবাসনপ্রত্যাশী পূর্ব লিবিয়া থেকে যাত্রা করছেন। ওই এলাকা সামরিক শাসক খলিফা হাফতারের নিয়ন্ত্রণে, যিনি জাতিসংঘ-স্বীকৃত ত্রিপোলি সরকারের বিরোধী।
ইইউ অভিবাসন কমিশনার মাগনুস ব্রুনার সম্প্রতি লিবিয়ার সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে গ্রিস, মাল্টা ও ইতালির প্রতিনিধিদের নিয়ে দেশটি সফর করেন। ত্রিপোলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সফল আলোচনার পর পূর্ব লিবিয়ার কর্মকর্তারা কোনো সাক্ষাৎ না করেই প্রতিনিধি দলকে দেশ ছাড়তে বলেন, যা কূটনৈতিক টানাপোড়েন তৈরি করেছে।
২০১৫ সাল থেকে ইউরোপীয় কমিশন (ইসি) লিবিয়াকে অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে আসছে। ট্রাস্ট ফান্ড ফর আফ্রিকা প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৪৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো বরাদ্দ দেওয়া হয়। ২০২১–২০২৭ মেয়াদে আরও ৬ কোটি ৫০ লাখ ইউরো এবং প্রত্যাবাসন সহায়তায় অতিরিক্ত আড়াই কোটি ইউরো বরাদ্দ করেছে ইইউ।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতে, এই সহায়তা অভিবাসী ও শরণার্থীদের সুরক্ষা, স্থানীয় জনগণের সহায়তা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং মানবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে কাজে লাগবে।
ভোরের আকাশ//হ.র