আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ জুলাই ২০২৫ ০৬:০৫ এএম
গণতন্ত্র ব্যর্থ, পশ্চিমা সভ্যতা ভেঙে পড়েছে: শতবর্ষে মাহাথির মোহাম্মদ
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ শততম জন্মদিনে এসে সমকালীন রাজনীতি ও বিশ্বব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মালয়েশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতাদের একজন মাহাথির বলেছেন, “গণতন্ত্র ও আধুনিক সভ্যতা—দুটিই ব্যর্থ হয়েছে।”
বার্তা সংস্থা আনাদোলুকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ১০০ বছর বয়সী এই প্রবীণ নেতা বলেন, “গণতন্ত্র মানুষের তৈরি একটি পদ্ধতি। এটি নিখুঁত নয়। একে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা না গেলে ভালো কিছু আশা করা যায় না।”
মাহাথির বলেন, “বহুদলীয় গণতন্ত্র বরং দুর্বলতা তৈরি করে। মাত্র দুটি দল থাকলে একটি জিতবে, একটি হারবে—এভাবে শক্তিশালী সরকার গঠন করা সম্ভব। কিন্তু সবাই নেতা হতে চায়, ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়। ফলে সরকার গঠনের মতো শক্তি কেউই পায় না, এবং তাতেই গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে পড়ে।”
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে মাহাথির সরাসরি অভিযোগ করেন, গাজায় ইসরায়েলের সাম্প্রতিক অভিযান একটি “গণহত্যা”, আর যুক্তরাষ্ট্র সেই হামলার পৃষ্ঠপোষক।
তিনি বলেন, “একটি জাতিকে ধ্বংস করতে ক্ষুধা ও যুদ্ধ ব্যবহার করা হচ্ছে। পশ্চিমা সভ্যতা আজ মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলেছে। মানুষ হিসেবে আমরা যেন আবার বর্বরতায় ফিরে গেছি।”
মাহাথিরের মতে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে না এবং বিশ্ব নেতৃত্বের যোগ্যতাও হারিয়েছে।
১৯২৫ সালের ১০ জুলাই ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ার কেদাহ রাজ্যে জন্ম নেন মাহাথির মোহাম্মদ। পেশায় একজন চিকিৎসক হলেও মাত্র ২১ বছর বয়সেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি এবং টানা ২২ বছর দেশ পরিচালনা করেন। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করে।
২০১৮ সালে আবারও ক্ষমতায় ফিরে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নজির গড়েন। তবে দুই বছর পর রাজনৈতিক জোট ভেঙে পড়ায় তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
শতবর্ষ পার করা মাহাথির নিজের দীর্ঘজীবনের রহস্য সম্পর্কে বলেন, “অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া করি না। নিয়মিত শরীরচর্চা করি, মস্তিষ্কের ব্যায়াম করি—পড়ি, লিখি, বিতর্ক করি, নিজেকে সক্রিয় রাখি।”
নিজের স্ত্রী সিতি হাসমাহকে (৯৮ বছর) স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি পাশে ছিলেন। তিনি আমার শক্তির উৎস।”
মালয়েশিয়ার ভবিষ্যত সম্পর্কে মাহাথির বলেন, “দেশের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সুশাসন জরুরি। জনগণকে শিক্ষিত করতে হবে, যাতে তারা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।”
ফিলিস্তিন সংকটসহ নানা আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মুসলিম দেশগুলোর নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে মাহাথির বলেন, “ওআইসি সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, কারণ সর্বসম্মতির নীতির কারণে এক দেশের আপত্তিতেই সব থেমে যায়।”
নিজের অর্জন নিয়ে মূল্যায়ন করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি কী করেছি তা ইতিহাস বলবে। তবে নিজের দেশের জন্য কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।”
ভোরের আকাশ//হ.র