জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন
রুবেল খান, চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫ ০৭:১৭ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় এবার পাসের হার কমেছে এবং জিপিএ-৫ বেড়েছে। এবার এই শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭২.০৭ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষার্থী। গতবারের মতোই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ফলাফলে এবারও ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে।
গতবারের তুলনায় এবার চট্টগ্রামে পাশের হার ১০.৭৩ শতাংশ কম। গতবার এই শিক্ষা বোর্ডে পাশের হার ছিল ৮২.৮০ শতাংশ। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাশের হার ছিল ৯১ দশমিক ১২ শতাংশ। এবার পাশের হার কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৪৩ জন শিক্ষার্থী। গতবার পেয়েছিল জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১০ হাজার ৮২৩ জন।
পাশের হার কমলেও সামগ্রিক ফলাফলে সন্তুষ্ট চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ। সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এবার প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে মন্ত্রণালয় থেকে পাশের হার বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হতো। তখন গ্রেস নম্বরও দেয়া হতো। কিন্তু এবার শিক্ষা উপদেষ্টার পক্ষ থেকে প্রকৃত মেধা যাচাই করতে পরীক্ষার খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কোয়ানটিটি নয়, কোয়ালিটির দিকে জোর দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছিল। তাই এবার যারা পাশ করেছে, তারা প্রকৃতই নিজ মেধার যোগ্যতায় পাশ করেছে। আমি এই ফলাফলে সন্তুষ্ট।’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা ছাড়াও কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘বরাবরই চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম জেলার ফলাফল ভালো হয়। কিন্তু শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত অনগ্রসরতাসহ নানামুখী সীমাবদ্ধতার কারণে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশের হার অনেক কম। এ কারণে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার দেশের অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের তুলনায় একটু কম থাকে। এবারও তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারণে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পাশের হার গতবারের তুলনায় কম।’
এই সমস্যা উত্তরণে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো মানের শিক্ষকের যে সংকট রয়েছে, সেটি সমাধানের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে। আসলে ওই পাহাড়ি দুর্গম এলাকায় শিক্ষকদের বদলি করা হলেও তারা বেশিদিন সেখানে থাকতে চান না। এই সমস্যাসহ ওই তিন পার্বত্য জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামগ্রিক সমস্যার সমাধানের জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।’ তিনি জানান, এ বছর থেকে মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের দু’জন করে মোট ছয়জন মেধাবীকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে স্কলারশিপ দেয়া হবে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এক হাজার ১৬৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার মোট এক লাখ ৪০ হাজার ৩৮৮ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ এক হাজার ১৮১ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৪৪ হাজার ৩৫৩ জন এবং ছাত্রী ৫৬ হাজার ৮২৮ জন। পাশের হারের দিক দিয়ে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে রয়েছে। ছেলেদের পাশের হার ৭১.৯৩ শতাংশ আর মেয়েদের পাশের হার ৭২ দশমিক ১৯ শতাংশ। জিপিএ- পাওয়ার ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৩৫৩ জন ছাত্রী আর পাঁচ হাজার ৪৯০ জন ছাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের দিক থেকে এবার বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীদের চেয়ে খারাপ করেছে মানবিক বিভাগের পরীক্ষার্থীরা। মানবিকে পাসের হার ৫৫ দশমকি ০২ শতাংশ, বিজ্ঞানে ৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৭৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এবার শতভাগ পাস করেছে এমন বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৩টি। পাসের হার শূন্য এমন একটি বিদ্যালয় রয়েছে। এই বিদ্যালয়টি হলো, ফটিকছড়ি নারায়নহাট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এবার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুই জন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে অংশ নিয়ে দুইজনই ফেল করেছে। এই বোর্ডের ফেল করা ৩৯ হাজার ২০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ হাজার ৬৬৮ জনই এক বিষয়ে ফেল করেছেন।
ভোরের আকাশ/জাআ