ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫ ১১:২৫ এএম
প্রতীকী ছবি
ঝিনাইদহে শিশুদের বিষক্রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। যত্রতত্র কীটনাশক ও বিষাক্ত দ্রব্য রাখা, অভিভাবকদের অসচেতনতাকে দায়ী করে চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, সচেতন না হলে তা দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক জটিলতা বৃদ্ধিসহ শিশু মৃত্যুর কারণও হতে পারে। প্রতিমাসে সদর হাসপাতালেই গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঝিনাইদহে শিশুদের কীটনাশক পানের প্রবণতাও লক্ষণীয়। হাসপাতালে দেখা গেছে, কেউ শুয়ে আছে শিশু ওয়ার্ডের ফ্লোরে, কেউ অভিভাবকের কোলে, কারো চলছে স্যালাইন। পাশে স্বজনদের উৎকন্ঠা। খেলার সময় ঘাসমারা কীটনাশক বোতল থেকে নলকূপের পানিতে মিশিয়ে খেয়ে গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ৩ থেকে ৯ বছর বয়সী ছয় শিশু।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ২২ তারিখ বিকালে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাচারীতলা গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। কয়েকদিন পর মে মাসের ৪ তারিখ বিকালে সদর উপজেলার মুরারীদহ গ্রামে তারপিন খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে তিন বছর বয়সী দুই শিশু। এভাবে প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০ জন শিশু বিষক্রিয়াই আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে হাসপাতালে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘরের দরজার পাশে, শিশুদের নাগালের মধ্যে রাখা হচ্ছে কীটনাশক, তারপীন, কেরোসিন সহ বিষাক্ত দ্রব্য। রাস্তার পাশে ও ক্ষেতের ধারে, নলকুপের পাশে যত্রতত্র ফেলে রাখা হচ্ছে কীটনাশকের বোতল। আর কোমল পানীয় ভেবে, বোতলের গায়ের বিভিন্ন রঙে আকৃষ্ট হয়ে শিশুরা খেলার ছলে কিংবা তৃষ্ণার্ত হয়ে তা খাচ্ছে। ফলে শিশুদের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে গরমের মৌসুমে শিশুদের এমন প্রবণতা থাকে বেশী।
কৃষক ও স্থানীয়রা বলছেন, বোতল পাশে রেখে কাজ করার সময় হঠাৎই শিশুরা তারপীন জুস ভেবে খেয়ে ফেলে। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, মাঠের আশপাশে ও রাস্তার ধারে কীটনাশকের বোতল ও প্যাকেট বেশী থাকে। ফলে শিশুরা ঔষধ খেয়ে ফেলতেই পারে অসাবধানতাবশত।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য মতে,২০২৪ সালে হাসপাতালটিতে বিষক্রিয়াই আক্রান্ত হয়ে ২ শ’ ৮৯ জন শিশু এবং ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ১ শ’ ২৩ জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। তবে বিষক্রিয়াই কোন শিশুর মৃত্যু হয়নি এখনও।
মেহেদী হাসান সবুজ নামে এক শিশুর অভিভাবক বলেন, 'শিশুদের বাঁচাতে বাড়িতে কোনো ধরনের বিষাক্ত জিনিসের নিরাপদ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। এমন দুর্ঘটনা আর যেন না ঘটে, সেটাই আমাদের চাওয়া।'
'গ্রামে কীটনাশক প্রায়ই খোলা জায়গায় রাখা হয়। এই অসতর্কতার কারণে শিশুরা সহজেই ভুল করে এগুলো খেয়ে ফেলতে পারে। সকলের উচিত নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা। অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। একইসাথে সরকারিভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে ক্যাম্পেইন করা উচিত বলে দাবি জানিয়েছেন সমাজের সচেতন মহল।'
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সিনিয়র শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ আনোয়ারুল ইসলাম বলেন,'কোমল পানীয়’র বোতল, বিভিন্ন কালারের লেখার কারনে বোতলগুলোর প্রতি শিশুরা আকৃষ্ঠ হচ্ছে। বাচ্চাদের কৌতুহল বেশী থাকে এবং গরমকালে তৃষ্ণার্ত থাকে। ফলে তারা পানী ভেবে বিষাক্ত এসব জিনিস খেয়ে ফেলে। তাই যত্রতত্র না রেখে শিশুদের নাগারে বাইরে এসব রাখতে হবে। কারন বিষক্রিয়া বেশী হলে শিশুর মৃত্যূও হতে পারে বাড়তে পারে শারীরিক জটিলতা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর-এ-নবী বলেন, 'কৃষি কাজে ব্যবহারের পর কীটনাশক যেন সংরক্ষিত স্থানে, শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা হয় সে ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করার চেষ্টা চলছে। মাঠ দিবসে এবিষয়ে কৃষকরা সচেতন করা হচ্ছে।'
ভোরের আকাশ/আজাসা