ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫ ০৪:৪৯ এএম
ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের তৈলকূপ গ্রামে বেগবতি নদী পারাপারে বাঁশের সেতু
ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোয় ভোগান্তি ও জীবণের ঝুঁকি নিয়ে বছরের পর বছর চলছে ৪ ইউনিয়নের ৫ গ্রামের হাজারো মানুষ । ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়নের তৈলকূপ গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেগবতি নদী। দীর্ঘদিন আগে এ গ্রামের মানুষের জন্য একটি বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হলেও আজও তারা অবহেলিত। তৈলকূপ গ্রামটি এমনই এক গ্রাম, যে গ্রামকে এক বেগবতি নদীই তিন দিক দিয়ে প্রবাহিত। শুধুমাত্র নলডাঙ্গার বাজারের পাশে উন্মুক্ত যে কারণে ভারী কোনো ফসল বা অন্যান্য মালামাল পরিবহন করতে হলে অনেকটা পথ ঘুরে যেতে হয় জেলা ও উপজেলা শহরের হাট-বাজারে। এজন্য চলাচলের জন্য প্রতি বছর চাঁদা তুলে নির্মাণ করা হয় বাঁশের সাঁকো। প্রতি বছরই সাঁকো নির্মাণে খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা।
এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন বয়সের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সময়মতো কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে না পারায় বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হন এই অঞ্চলের কৃষকেরা। পরিবহন খরচ বাড়ে দ্বিগুণ। ডোঙ্গায় পারপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীর পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা তাদের বই পুস্তক নিয়ে নদীর পারাপার হতে গিয়ে অনেকেই নদীতে পড়ে যায়। ফলে তাদের বই খাতা ভিজে যাওয়ায় স্কুল ও মাদ্রাসায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এদিকে, অনেকেই ক্ষোভ নিয়ে জানান, জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুলতান আহম্দে জানান, ডিজিটাল যুগেও বাঁশের সাঁকো এটি বড়ই বেমানান।
তৈলকূপী গ্রামের আবুল কাশেম জানান, থেকে ২৫ বছর আগে আমার শ্যালক অল্প কিছু কৃষিপণ্য নিয়ে উপজেলা শহর কালীগঞ্জে যাওয়ার জন্য এই সাঁকো ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান এবং সাঁকোর বাঁশে লেগে তার এক চোখে মারাত্মক আঘাত পায়। পরে বিভিন্ন ডাক্তার দেখিয়ে তার চোখ ভালো হয়নি। পরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। আবুল কাশেম আরও জানান, ৪ বছর আগে আমার স্ত্রী স্ট্রোক করলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার জন্য সাঁকোর উপর দিয়ে যাওয়ার সময় সাঁকো ভেঙে নিচে নদীর পানিতে পড়ে যান। সেখান থেকে তুলে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছি।
তৈলকূপী গ্রামের নদি পাড়ের নুরজাহান বেগম জানান, বর্ষার সময় তালের ডোঙ্গা দিয়ে পার হতে হয়।
স্কুল শিক্ষক ফুলছার আলী বলেন, কোনো কারণে যদি এখানে সেতু নির্মাণ করা সম্ভব না হয় তাহলে গোয়ালবাড়ি ঘাটে সেতু নির্মাণ করা হলেও আমাদের সমস্যা সমাধান হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সৈয়দ শাহরিয়ার আকাশ বলেন, তৈলকূপী গ্রাম এবং রাজবাড়ির পাশে যে পুরাতন সেতুটি আছে সেখানে আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখে নতুন করে একটি সেতু নির্মাণের জন্য টেন্ডার দিবো কিন্তু দু’পাড়ের বসতিরা জায়গা দিচ্ছে না এজন্য টেন্ডার করাতে পারছিনা। সেতুটির ডিজাইন আছে ১৮ ফুট, সেখানে আমার জায়গা লাগবে ২৪ ফুট। কিন্তু নদির ওপারে দুই পাকা বাড়ি আছে তারা জায়গা দিচ্ছেন না। এ কারণে সেখানে সেতুর নির্মাণ করার প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ভোরের আকাশ/আজাসা