তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫ ১০:১০ এএম
বাংলাদেশে চীনের আধিপত্য বাড়ছে
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের বাণিজ্যিক প্রভাব অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো খাতে চীনের সম্পৃক্ততাকে অর্থনৈতিক আধিপত্য হিসেবে দেখাতে চাইছেন কেউ কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চীনের রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে আধিপত্য এখন চীনা পণ্যের। দেশের মোট আমদানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। একই সময়ে ভারত থেকে আমদানি হার ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশটির প্রায় দ্বিগুণ পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করছে চীন।
দেখা গেছে, টেক্সটাইলের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও ভারী যন্ত্রপাতিতে চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে বাংলাদেশের আমদানি বাজারে চীনের আধিপত্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ এসেছে চীন থেকে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় সারে ৫ শতাংশ বেশি।
এর আগে, নভেম্বরে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ পণ্য এসেছে চীন থেকে। আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার সারে ৫ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পণ্য দেশটি থেকে এসেছে। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সারে ৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বাজারে দিন দিন চীনা পণ্যের আধিপত্য বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে রয়েছে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য দেশটির ওপর নির্ভরতা এবং চীনের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও বাণিজ্যিক কৌশল। বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা যেকোন দেশের চেয়ে কম দামে চীন থেকে কাঁচামাল ও শিল্প যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে পারছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজার ধরতে চীন নানা ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। চীনের পর ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার। এর আগে ভারতই বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ছিল।
গত ডিসেম্বরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ দেশের মোট আমদানির ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় যা ২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের তৃতীয় অংশীদার ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ কম। বাংলাদেশে চীনের রপ্তানি বাড়ার পেছনে তিনটি কারণ জানা গেছে। চীনের পণ্য অন্যান্য দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী। পাশাপাশি বিলম্বিত পেমেন্ট সুবিধা রয়েছে দেশটিতে। শিল্পযন্ত্রপাতি ক্রয়ে সুবিধা পায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এছাড়া চীনে বর্তমানে ডিফ্লেশন বা স্ফীতিহ্রাস চলছে। অর্থাৎ এখানে সব পণ্যের দাম পূর্বের তুলনায় কমে গেছে। যে কারণে দেশটির রপ্তানিকারকরা কম দামে বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে পারছেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, চীনে বর্তমানে ডিফ্লেশন চলছে, যার কারণে তাদের রপ্তানি পণ্যের দাম কমেছে। এ সুযোগ নিয়ে তারা বাংলাদেশের বাজারে আধিপত্য দেখাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ হিসেবে সামনে এসেছে। বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগও বাড়ছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এছাড়া দেশটি থেকে বাংলাদেশের নেওয়া ঋণের পরিমাণ সারে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য যেমন সুযোগ এনেছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ককে কিভাবে আরও সমতাভিত্তিক ও টেকসই করা যায় সে বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের
প্রকাশ : ৪ ঘন্টা আগে
আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
বাংলাদেশে চীনের আধিপত্য বাড়ছে
গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চীনের বাণিজ্যিক প্রভাব অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অবকাঠামো খাতে চীনের সম্পৃক্ততাকে অর্থনৈতিক আধিপত্য হিসেবে দেখাতে চাইছেন কেউ কেউ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে চীনের রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে আধিপত্য এখন চীনা পণ্যের। দেশের মোট আমদানির প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি থেকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মোট আমদানির ৩০ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। একই সময়ে ভারত থেকে আমদানি হার ১৫ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশটির প্রায় দ্বিগুণ পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করছে চীন।
দেখা গেছে, টেক্সটাইলের কাঁচামাল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও ভারী যন্ত্রপাতিতে চীনের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
বিবিএসের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শেষ ত্রৈমাসিকে বাংলাদেশের আমদানি বাজারে চীনের আধিপত্য গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর সময়ে বাংলাদেশের মোট আমদানির ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ এসেছে চীন থেকে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় সারে ৫ শতাংশ বেশি।
এর আগে, নভেম্বরে ২৮ দশমিক ১২ শতাংশ পণ্য এসেছে চীন থেকে। আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির হার সারে ৫ শতাংশ। আগের মাস অক্টোবরে ২৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পণ্য দেশটি থেকে এসেছে। ওই মাসে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় সারে ৭ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বাজারে দিন দিন চীনা পণ্যের আধিপত্য বৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে রয়েছে শিল্প খাতের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য দেশটির ওপর নির্ভরতা এবং চীনের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য ও বাণিজ্যিক কৌশল। বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা যেকোন দেশের চেয়ে কম দামে চীন থেকে কাঁচামাল ও শিল্প যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করতে পারছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের বাজার ধরতে চীন নানা ধরনের বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। চীনের পর ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক অংশীদার। এর আগে ভারতই বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ছিল।
গত ডিসেম্বরে ভারত থেকে আমদানির পরিমাণ দেশের মোট আমদানির ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বরের তুলনায় যা ২ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশের তৃতীয় অংশীদার ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানির ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা আগের বছরের তুলনায় ১ শতাংশ কম। বাংলাদেশে চীনের রপ্তানি বাড়ার পেছনে তিনটি কারণ জানা গেছে। চীনের পণ্য অন্যান্য দেশের তুলনায় সাশ্রয়ী। পাশাপাশি বিলম্বিত পেমেন্ট সুবিধা রয়েছে দেশটিতে। শিল্পযন্ত্রপাতি ক্রয়ে সুবিধা পায় বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা। এছাড়া চীনে বর্তমানে ডিফ্লেশন বা স্ফীতিহ্রাস চলছে। অর্থাৎ এখানে সব পণ্যের দাম পূর্বের তুলনায় কমে গেছে। যে কারণে দেশটির রপ্তানিকারকরা কম দামে বাংলাদেশে পণ্য পাঠাতে পারছেন।
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, চীনে বর্তমানে ডিফ্লেশন চলছে, যার কারণে তাদের রপ্তানি পণ্যের দাম কমেছে। এ সুযোগ নিয়ে তারা বাংলাদেশের বাজারে আধিপত্য দেখাচ্ছে। এটা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ হিসেবে সামনে এসেছে। বাণিজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগও বাড়ছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এছাড়া দেশটি থেকে বাংলাদেশের নেওয়া ঋণের পরিমাণ সারে ৭ বিলিয়ন ডলারের মতো।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য যেমন সুযোগ এনেছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। এখন সময় এসেছে এই সম্পর্ককে কিভাবে আরও সমতাভিত্তিক ও টেকসই করা যায় সে বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার।
ভোরের আকাশ/এসএইচ