ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫ ১২:৫০ এএম
প্লাস্টিক মানুষের রক্ত ও হৃৎপিণ্ডে জায়গা করে নিচ্ছে : বিশেষজ্ঞরা
ক্ষতিকর প্লাস্টিক এখন শুধু শহরের ড্রেন বা সাগরের পাড়েই নয়, মানুষের খাদ্যচক্রে—এমনকি রক্ত ও হৃৎপিণ্ডেও জায়গা করে নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সাশ্রয়ী ও টেকসই হিসেবে একসময় এই প্লাস্টিক বিশ্বজুড়ে শিল্প, কৃষি, চিকিৎসাসহ সব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নেয়। কিন্তু কৃত্রিম এ বস্তু যখন বিপুল হারে উৎপাদিত হয় এবং ব্যবহার শেষে পরিবেশে মিশতে থাকে, তখন তা বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি করে। তাই মানুষ ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে প্লাস্টিকের নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর পরিবেশ ভবন মিলনায়তনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)সহ ৩৩টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন তারা।
‘প্লাস্টিক দূষণ আর নয়’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান। বাপার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ বলেন, প্লাস্টিকের অব্যবস্থাপনার জন্য ভূ-পরিবেশ দূষণ হয়। এটি মাটি দূষণ করে এবং উর্বরতা ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস করে। ছুড়ে ফেলা প্লাস্টিক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে, যার ফলে বন্যা দেখা দেয়। নদীর তলদেশে প্লাস্টিক জমা হয়ে পানির বহনক্ষমতা হ্রাস করে, পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত ও দূষিত করে। প্লাস্টিক বর্জ্য প্রকৃতিতে খণ্ডিত হয়ে মাইক্রোপ্লাস্টিক এবং ন্যানো প্লাস্টিকে রূপান্তরিত হয়।
বিভিন্ন পণ্যে ব্যবহৃত মাইক্রোপ্লাস্টিক যুক্ত হয়ে তা বিভিন্ন উপায়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, যা এখন বড় সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহারে ঢাকার ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং দূষণ বাড়ছে। দূষণ কমাতে ডিএনসিসির উন্মুক্ত স্থানগুলোতে বৃক্ষরোপণ ও সবুজে আচ্ছাদনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্বাচলসহ উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন খোলা জায়গাগুলোতে বনায়নের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের প্রাক্তন বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা ড. মোবারক আহমদ খান বলেন, প্লাস্টিক বন্ধে ২০০২ সালে আইন করা হলেও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। পাটের তৈরি সোনালি ব্যাগ এখনো দেশে উৎপাদনের অনুমতি পায়নি, যা দুঃখজনক। তিনি পলিথিন-প্লাস্টিক বন্ধে সবাইকে নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা যদি প্লাস্টিক পণ্যকে ক্ষতিকর হিসেবে উপলব্ধি করতাম, তাহলে অনেক আগেই তা বন্ধ হয়ে যেত। প্লাস্টিকের ব্যবহার ও বিপণন নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং বিকল্প পণ্য সহজলভ্য করতে হবে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন এএলআরডির নির্বাহী প্রধান শামসুল হুদা, এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন, বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট তাসলিমা ইসলাম, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচ. এম. জাকির হোসেন প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/হ.র