ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২৫ ১২:৪৬ এএম
শূন্য কার্বন নিঃসরণে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে: সিপিডি
শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে সরকার উল্টো পথে হাঁটছে বলে মন্তব্য করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তারা বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত গুরুত্ব পায়নি, বরং ফসিল ফুয়েলের নির্ভরতা আরও বাড়ানো হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত: জ্বালানি রূপান্তরের অগ্রাধিকারের ওপর প্রতিফলন’ শীর্ষক সিপিডির এক আলোচনায় এসব কথা বলা হয়।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী। তিনি বলেন, আমাদের বিভিন্ন জ্বালানির—তেল বা গ্যাসের দাম সমন্বয় করা হচ্ছে। সেটা আমাদের কাছে মনে হয়েছে কিছুটা ভুল উপায়ে মূল্যগুলো সমন্বয় করা হচ্ছে, যাতে আমাদের আর্থিক বোঝার ওপর প্রভাব পড়ছে। সেই আর্থিক বোঝা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক দেনা রয়েছে, যার পেমেন্টগুলো বাকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৮টি সংকট রয়েছে। সেগুলো হলো—নিয়ন্ত্রক সংস্থার আর্থিক সংকট, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ সরবরাহে ব্যর্থতা, ভুল উপায়ে জ্বালানির মূল্য সমন্বয়, জ্বালানি রূপান্তরের গতি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের যে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা তিনটি শূন্য—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ—সেদিক বিবেচনায় আমরা ২.৫০ শূন্যে দাঁড়িয়েছি। কারণ বাজেট জ্বালানি খাতে কয়লার ওপর নির্ভরতার কথা বলছে, এলএনজি আমদানির কথা বলছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে কোনো ধরনের প্রণোদনা দেওয়া হয়নি।
এসব বিশ্লেষণ করে বলা হয়, শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। যেখানে এক পা এগোনোর কথা ছিল, সেখানে এক পা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমরা এগিয়ে যেতে পারতাম যদি বাজেট প্রো-ফসিল ফুয়েল না হয়ে প্রো-রিনিউয়েবল ফুয়েল হতো।
হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী আরও বলেন, বিগত সময়ের মতো এবারের বাজেটও প্রো-ফসিল ফুয়েল রয়ে গেছে। বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিবেচনায় এবারের বাজেট হতাশ করেছে।
তিনি বলেন, বাজেটে এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট অব্যাহতি থাকলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে কোনো প্রণোদনা নেই। বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানির বরাদ্দ কমেছে। এবার মাত্র ৭টি প্রকল্পে নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, গত বছর ছিল ৪টি। সেদিক থেকে সংখ্যা বাড়লেও বরাদ্দ কমে যাওয়ায় তা বিপরীত চিত্র তুলে ধরছে। যদিও বাজেট বক্তব্যে ৭০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিলের কথা এসেছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি।
সংলাপে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা সবাই জানি, এই বাজেটটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এর রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক।
তিনি আরও বলেন, বিগত সরকারের সময় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছিল, যার ফলে প্রাপ্যতা বেড়েছিল, কিন্তু মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ বা টেকসই রূপান্তরের দিকে কোনো অগ্রগতি হয়নি। বরং ওই সময়ে লুটপাট, অর্থের অপচয় ও সুশাসনের অভাব দেখা গেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসনের অভাব চিহ্নিত করবে এবং রূপান্তর ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই নীতিকে গুরুত্ব দেবে।
সংলাপে ভার্চুয়ালি অংশ নেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। আরও উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ পরিচালক ফয়সাল সামাদ, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম প্রমুখ।
ভোরের আকাশ/হ.র