× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

চার জেলায় আকস্মিক বন্যা

ভোরের আকাশ প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০৯:৩৪ এএম

চার জেলায় আকস্মিক বন্যা

চার জেলায় আকস্মিক বন্যা

গ্রীষ্মকালেই বাংলাদেশের ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ি ঢল, একটানা ভারি বৃষ্টি এবং নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, শেরপুর, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলায় আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হঠাৎ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে সিলেট ও ময়মনসিংহ জেলায় গত কয়েক দিন ধরে ভারি বর্ষণ চলছে। চারটি জেলার অনেক হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে।

গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান জানান, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ও উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদী সমতলের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামী তিন দিন ধরে এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এভাবে রংপুর বিভাগের ধরলা নদী, ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংশ নদী, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আপার আত্রাই, যমুনেশ্বরী-করতোয়া, পুনর্ভবা ও ঘাগট নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, শেরপুর থেকে জানান, শেরপুর জেলার নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত সোমবার রাত ১০টায় পানির উচ্চতা ছিল ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর, যা রাতেই কিছুটা কমে। তবে ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি এবং উজানে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি (নকুগাঁও পয়েন্ট) বিপৎসীমার ৩৭৯ সেন্টিমিটার নিচে, নালিতাবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫৭ সেন্টিমিটার নিচে ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ২০ মে পর্যন্ত জেলার নিম্নাঞ্চলগুলো সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে, যা জনজীবন ও কৃষি খাতে বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জেলা কৃষি বিভাগ ইতোমধ্যে কৃষকদের পাকা ধান দ্রুত কেটে উঁচু স্থানে সংরক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে। পাশাপাশি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে মাইকিং শুরু হয়েছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, বৃষ্টি ও উজানের কারণে পানি বেড়েছে। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং প্রশাসনের সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট থেকে জানান, সিলেটের জাফলংয়ে হঠাৎ করে পাহাড়ি ঢল নেমে পিয়াইন নদীতে প্রবল স্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। গত সোমবার সকাল ১০টার দিকে ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা উজানের ঢল পিয়াইন নদী হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এতে জাফলংয়ের জিরো পয়েন্টসহ আশপাশের এলাকা দ্রুত প্লাবিত হয়। নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ায় শুরু হয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। এতে আশপাশের বসতি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। জাফলংয়ের অধিকাংশ পর্যটন এলাকা ইতোমধ্যেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সব ধরনের পর্যটন কার্যক্রম। নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে সিলেটে। প্রতিরাতেই বইছে ঝড়। এই মাসজুড়েই বৃষ্টি থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এমনকি মাসের শেষ দিকে বন্যাও হতে পারে। গত বছর সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়। এক বছরে টানা ৩ বার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় সিলেট। এবারও বর্ষা আসার আগেই বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের এপ্রিল মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ-চলতি মাসের শেষ দিকে সিলেটে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা হতে পারে। জাফলং ছাড়াও গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং কানাইঘাট উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতেও পানির প্রবল গতি ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। এসব এলাকায় বহু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সিলেট ও ভারতের মেঘালয় অঞ্চলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নদীর পানি আরও বাড়তে পারে এবং বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করে আকস্মিক বন্যা সতর্কতা জারি করেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক দল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এদিকে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এসব নদীর পানি উপচে পড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন থাকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা অনুসরণ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। উদ্ধার কাজের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে নৌকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম।

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়েই চলেছে। জেলার হালুয়াট ও ধোবাউড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে ইতোমধ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। হালুয়াঘাটের বোয়ালমারা গ্রামে থৈ থৈ পানি। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় ধোবাউড়ার নিতাই নদীর পানিতে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। 

এদিকে নেত্রকোনা দুর্গাপুরের সোমেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে গিয়ে নির্মাণাধীন চাপাতলী সেতুর পাশের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করায় আশপাশের কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
শেরপুরে বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

শেরপুরে বাড়ছে নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

 এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ৪ দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ডাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণসহ ৪ দাবিতে অসহযোগ কর্মসূচির ডাক

সংশ্লিষ্ট

বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা

বসবাসের অনুপযোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর, চলে যাচ্ছেন বাসিন্দারা

ঝালকাঠিতে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

ঝালকাঠিতে রাস্তা সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন

এডওয়ার্ড কলেজের তিন হলের নাম পরিবর্তন

এডওয়ার্ড কলেজের তিন হলের নাম পরিবর্তন

আধুনিকতার ভিড়ে বিলুপ্তির পথে ‘হারিকেন’

আধুনিকতার ভিড়ে বিলুপ্তির পথে ‘হারিকেন’