১২ জেলায় বন্যার শঙ্কা
বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। লঘুচাপটির স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর তাতে বৃষ্টি খানিকটা বাড়তে পারে। এই লঘুচাপের কারণে দেশের চার বন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। বাংলাদেশের ওপর মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় সারাদেশে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ভারতের সীমান্তবর্তী কয়েকটি রাজ্যেও প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ১২টি জেলায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া সতর্কবার্তায় বলা হয়, ভারতের উত্তর অন্ধ্র প্রদেশ এবং দক্ষিণ ওডিশা উপকূলের কাছে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও এর কাছাকাছি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে বুধবার সকাল ৬টায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুর চাপ বেড়ে গেছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। আর এ অবস্থার জন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে থাকা মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আজ সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আকাশ মেঘলা। রাজধানীতে সকালের দিকে সামান্য বৃষ্টিও হয়েছে। তবে এ বৃষ্টি মূলত মৌসুমি বায়ুর কারণেই হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেছা।তিনি বলেন, সাগরের লঘুচাপের প্রভাব এখনো পড়েনি। এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপর খুব পড়বে না বলেই এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। তবে এর প্রভাবে বৃহস্পতিবার দেশের কিছু স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। পরের দুই দিনে অবশ্য বৃষ্টি কমে যেতে পারে। আগামী রোববার থেকে আবার বাড়তে পারে বৃষ্টি।চলতি মাসের শুরুতে আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, এ মাসে একটি লঘুচাপ থেকে নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এবারের লঘুচাপ থেকে যে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে তা মূলত স্থল নিম্নচাপ বলে জানিয়েছেন কাজী জেবুন্নেছা।তিনি বলেন, স্থল নিম্নচাপের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। দেশের ভেতরে অব্যাহত বৃষ্টিপাত এবং উজানের বৃষ্টির পানিতে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং উজানে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর ও মাদারীপুরসহ ১২ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।এর মধ্যে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার এবং রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আজ বৃষ্টিপাত ও নদনদীর পরিস্থিতি নিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর পানি সমতল ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এছাড়া উত্তর-পশ্চিম ও পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে এবং উজানে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ বিভাগ ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে।বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রংপুর বিভাগে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা এ নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তিস্তা নদীর পানি সমতল বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে, অপরদিকে ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।এই সময়ে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম জেলার ওই নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। তবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন নদীগুলোর পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।এদিকে গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল আগামী দুদিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে পরবর্তী তিনদিন পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল আগামী তিনদিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এই সময়ে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, পাবনা, মানিকগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলার পদ্মা নদীসংলগ্ন নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে বলে জানানো হয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে। তবে চতুর্থ ও পঞ্চম দিন পানি সমতল স্থিতিশীল সম্ভাবনা কথাও তুলে ধরা হয়েছে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নদ-নদীর পানি সমতল আগামী তিনদিন বৃদ্ধি পেতে পারে ও সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে; পরবর্তী দুদিন পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে।রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের মহানন্দা, করতোয়া, যমুনেশ্বরি, পুনর্ভবা ও ঘাঘট নদীর পানি সমতল গত ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে আপার আত্রাই, টাঙ্গন নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে বলে তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী তিনবদিন এ নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এ সময়ে আত্রাই নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে সতর্কসীমা প্রবাহিত হতে পারে।সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়েছে, অপরদিকে সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, লুবাছড়া, ঝালুখালি নদীর পানি সমতল হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আর মনু, ধলাই, খোয়াই ও জিঞ্জিরাম নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। এ নদীগুলোরনপানি সমতল আগামী ২৪ ঘণ্টা বৃদ্ধি পেতে পারে ও পরবর্তী দুদিন হ্রাস পেতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সোমেশ্বরী, ভুগাই ও কংস নদীর পানি সমতল সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে বলেও তুলে ধরেছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ার আছে বলে তুলে ধরে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী তিনদিন এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েকদিনের ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তা নদীর পানি আবারো বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) সকাল ৯টার দিকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে এই নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।এদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার দুইটি উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় আছেন এসব এলাকার পাঁচ হাজার পরিবার।পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পানি বৃদ্ধির ফলে ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, খগাখাড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ী এবং জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান জানান, সবচেয়ে বড় চর গ্রাম ঝাড়সিংশ্বরসহ আরো কিছু চরে তিস্তার পানি ঢুকে পড়েছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ হচ্ছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ