নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৫ ০১:১৭ পিএম
ফাইল ছবি
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রণীত নিয়োগ নীতিমালা মানা হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে ড. মো. শফিউল্লাহর নিয়োগকে কেন্দ্র করে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় গত ২৯ জুন ড. মো. শফিউল্লাহকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. শফিউল্লাহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. মো. সোলাইমানের ছোট ভাই। এই পারিবারিক সম্পর্কের জেরে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির জমাকৃত তথ্য অনুযায়ী, ড. শফিউল্লাহ ১৯৯৮ সালে দাখিল, ২০০১ সালে আলিম পাশ করেন। এরপর ২০০৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে এল.এল.বি (অনার্স) সিজিপিএ ৩.২৮ এবং ২০০৯ সালে এল.এল.এম সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলো তাঁর পূর্ববর্তী পদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা।
অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে ‘সিনিয়র লেকচারার’ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ইউজিসি নিয়োগ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়া, গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাধিকবার সংশোধন আনা হয়, যার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউজিসি’র নীতিমালা অনুযায়ী, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ এর মধ্যে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে (৪.০০ এর মধ্যে)। তবে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে প্রথম বিভাগ বা ৫৫% মার্কস যুক্ত করেছেন, অথচ সিজিপিএধারীদের জন্য এমন কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রত্যেক বিভাগে পরিকল্পনা কমিটি গঠনের সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও অভিযোগ রয়েছে, অনেক বিভাগে এই কমিটি গঠনে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। এমনকি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই আইন অনুষদের ডীন পদ দখলে রেখে পরিকল্পনা কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য যে, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ইং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে থাকতে পারবে না। নোবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ইসমাইলের কারসাজির মাধ্যমে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সোলাইমান নোবিপ্রবি ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং নিজের ছোট ভাইকে ইউজিসির নিয়োগ নীতিমালা ও বিজ্ঞপ্তিতে চাহিত ফলাফলের চেয়ে কম (সিজিপিএ ৩.২৮) এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার পদকে সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। এইসব অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল অবিলম্বে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবির ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’
নোবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ তামজিদ হোসন চৌধুরীর এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ‘নীতিমালা অনুযায়ী উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ