সিরাজুল ইসলাম
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৫ ১০:০৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে রাজনৈতিক দলগুলো ও জনগণ। আওয়ামী লীগের শাসনকালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে ‘ভোট না দিতে পারা’র আক্ষেপও তারা আগামী নির্বাচনে ঘোচাতে চান। কিন্তু সেই নির্বাচন নিয়েই বার বার সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেননি। ১২ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে শর্তসাপেক্ষে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রশ্নে যৌথ ঘোষণা দেন সরকারপ্রধান। সেই ঘোষণার পর বিএনপি নেতারা ধরে নিয়েছিলেন নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে গেছে; ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হচ্ছে।
কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একান্ত বৈঠকের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এমএম নাসির উদ্দিন বলেছেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়নি। এরপর থেকেই নির্বাচন কবে হবে, আদৌ হবে কি না- তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ক্ষমতার একেবারে কাছে পৌঁছে যাওয়া বিএনপি সরকারকে দুষলেও ধৈর্য ধরে নির্বাচন আদায় করতে চাচ্ছে। এরই মধ্যে নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
বিএনপি বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে। অন্যদিকে ইসলামপন্থি, বাম দলগুলো ও এনসিপি ভোটের সমানুপাতিক হার (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইছে। তবে সন্দেহ থাকলেও সব দলেই নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচন বিলম্বের ইচ্ছা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন একাধিক উপদেষ্টা।
জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করছে। দেশের অন্যতম বড় দল বিএনপির অনেক নেতা গণসংযোগ শুরু করেছেন। তারা নিয়মিত সভা-সমাবেশের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনেরও তারা খোঁজখবর নিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র নেতৃত্বের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সারাদেশে পদযাত্রা, সমাবেশ-গণসংযোগের কর্মসূচি পালন করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নির্বাচন প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো এখনো সরকারের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। এরই মধ্যে এসেছে নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা নাকি সরাসরি ভোট- এ নিয়ে দলগুলো পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি এবং এর মিত্র কিছু দল সংসদীয় আসনে সরাসরি ভোটের বিদ্যমান ব্যবস্থার পক্ষেই রয়েছে। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থি বিভিন্ন দল ও কিছু বামপন্থি দলও সংখ্যানুপাতিক হারে ভোট এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিকে সামনে এনেছে।
আর এমন প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, সরকারের অবস্থান এখনো অস্পষ্ট। একইসঙ্গে দলগুলোর মতপার্থক্য বা পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কারণে রাজনীতিতে অস্থিরতা এবং নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
নতুন করে সন্দেহ কেন : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের যৌথ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে দলটি ও এর মিত্র দলগুলোর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়েছিলেন। যৌথ ঘোষণায় সরকারের পক্ষে কিছু শর্ত দেওয়া হয়। বলা হয়, সংস্কার ও গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের বিচারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলে রোজার আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে।
এরপর, নির্বাচন নিয়ে সংকট কেটে গেছে এবং আগামী বছর রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে ধরে নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা নির্বাচনমুখী তৎপরতাও শুরু করেন। তবে লন্ডন বৈঠক থেকে ‘একটি দলের নেতার সঙ্গে সরকার প্রধানের যৌথ ঘোষণা’ নিয়ে এনসিপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন দল প্রশ্ন তুলেছে। কিন্তু কোনো দলই বসে নেই। নির্বাচন লক্ষ্য রেখে দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করছে। এরপরও প্রশ্ন উঠছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হচ্ছে কি না? এমনকি নির্বাচন হবে কি না- এ ধরনের আলোচনাও রয়েছে রাজনীতিতে।
বগুড়া, রাজশাহী, বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা- এসব জেলায় বিএনপির শক্ত সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে। এই জেলাগুলোর বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা নির্বাচন প্রশ্নে সংশয় বা সন্দেহের পেছনে সরকারের ভূমিকাকে দায়ী করেন। লন্ডন বৈঠকের পর তিন সপ্তাহ হলেও প্রধান উপদেষ্টা বা সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে কোনো ইঙ্গিত বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির তৃণমূলের ওই নেতারা। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতাও অনানুষ্ঠানিক আলাপে তৃণমূলের সঙ্গেই সুর মিলিয়েছেন। কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। সেই সাক্ষাতে নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি, কোনো পক্ষ থেকেই।
বরং ঘটনার কয়েকদিন পর গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তার সাক্ষাতে নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই পরিস্থিতিটাকে ধোঁয়াশা, অস্পষ্টতা বলে বর্ণনা করছেন বিএনপি নেতাদের অনেকে। তারা বলছেন, এ ধরনের পরিস্থিতির কারণে নির্বাচন নিয়ে তাদের সংশয়, সন্দেহ তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে আগে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছিল।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে এবং সেজন্য সরকার ব্যবস্থা নেবে, এটি তারা বিশ্বাস করেন। বিএনপি নেতাদেরই কেউ কেউ মনে করেন, লন্ডন বৈঠকের কারণেও সরকারের সঙ্গে একটা শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রেখে এগোনোর একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এরপরও নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের ক্ষেত্রে বিএনপির তৃণমূল থেকে কেন্দ্র, সব পর্যায়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। বিএনপির মিত্র দলগুলোও পরিস্থিতিটাকে একইভাবে দেখছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা সাইফুল হক বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করার ব্যাপারে সরকারের মধ্যে দোলাচল বা দোটানা আছে। সেকারণে ধোঁয়াশা রাখা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। একজন বিশ্লেষক বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোসহ বিভিন্ন পক্ষকে এক জায়গায় আনতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকে এখনো শক্তভাবে দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করা যাবে কি না, এ প্রশ্ন থাকে। আর সেজন্যই রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বাড়ছে বলে ওই বিশ্লেষক মনে করেন।
আরেকজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে, সেকারণে সন্দেহ বা অনিশ্চয়তার কথা আসছে। তিনি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করা হচ্ছে। এসব দাাবি নিয়েই ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এসব দাবি সামনে আনার বিষয়কেও বিএনপি নেতারা নির্বাচন নিয়ে তাদের সন্দেহের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে তুলে ধরছেন।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে বিভক্তি : জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থার দাবি নিয়ে একটা অবস্থান তুলে ধরতে চাইছে। এর সঙ্গে নুরুল হক নূরের গণঅধিকার পরিষদও রয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচনেই পিআর পদ্ধতি চালুর দাবি তারা করছেন।
আরও কিছু দল এই পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি তুলে সরকার ও একইসঙ্গে বিএনপির ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছেন। তারা বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার চিন্তাও করছেন। সম্প্রতি আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করা ও আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঢাকা একটি সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ ইসলামি দলগুলোর নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তারা অংশ নিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ও এর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ওই সমাবেশে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসলামী আন্দোলন।
দলটি বলেছে, বিএনপি যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠ বা আনুপাতিক ভোটের দাবির পক্ষে নয়, সেজন্য তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতারা বলছেন, ভোটের এ পদ্ধতি তারা কোনোভাবে মেনে নেবেন না। বিশ্লেষকেরা দলগুলোর এই পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে রাজনীতিতে বিভক্তি হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করেন, এর প্রভাবে রাজনীতিতে অস্থিরতা বাড়ছে, যে কারণে নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা আসছে ।
বর্তমানে প্রভাবশালী দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টিও রয়েছে। এই দলটি অবশ্য সংসদের উচ্চকক্ষ বাস্তবায়ন করা হলে, তার ভোট চাইছে আনুপাতিক পদ্ধতিতে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, তারা সংসদের নিম্নকক্ষে চলমান ব্যবস্থায় অর্থাৎ আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটের পক্ষে রয়েছেন।
ইসলামি দলগুলো বলছে, আনুপতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতিতে একটি নির্বাচনে দেওয়া প্রত্যেকটি ভোট কাজে লাগে এবং প্রতিটি ভোট সংসদে সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। তাছাড়া একটি নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ও হারের ভিত্তিতে সংসদে আসন বণ্টন হয়।
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, পিআর পদ্ধতিতে স্বৈরাচার বা কর্তৃত্ববাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু সরাসরি ভোটের ব্যবস্থায় কোনো দল ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে যদি সরকার গঠন করে, ওই দল তখন ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া অন্য দলগুলোকে বাদ দিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে। সেজন্য তারা এর পরিবর্তন চান। কিন্তু এখন পদ্ধতি পরিবর্তনের দাবি তোলার পেছনে নির্বাচন প্রলম্বিত করা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বল বিএনপিসহ বিভিন্ন দল যে সব অভিযোগ করছে, সে অভিযোগ মানতে রাজি নন জামায়াত আমির।
দলটির আরেক নেতা সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের বলেন, কোনো দল সর্বনিম্ন এক শতাংশ ভোট পেলেই সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পাবে, এই প্রস্তাব তারা করেছেন। ফলে বেশিরভাগ দল প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবে বলে তারা মনে করছেন। ফলে ছোট দলগুলোর এই পদ্ধতি আগ্রহ বেশি। কারণ এমন অনেক দলের আসনভিত্তিক সরাসরি ভোটে জিতে আসা কঠিন। বামপন্থি বিভিন্ন দলও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের পক্ষে।
আনুপাতিক পদ্ধতির ভোটে ব্যালটে প্রার্থী থাকবেন না। দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। একটি দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই অনুপাতে আসন বণ্টন হবে। তবে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলো বলছে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এ পদ্ধতি চালু করতে আরও অনেকে সময় প্রয়োজন।
সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) বা আনুপাতিক ভোট আরও বেশি স্বৈরতন্ত্রের দিকে ঠেলে দেবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার ভাষায়, এতে স্থানীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব গড়ে ওঠার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। গতকাল দুপুরে রংপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আজকে নানা কথা সামনে আনা হচ্ছে- আনুপাতিক ভোট। কেন আনুপাতিক ভোট? এটা তো এলাকার নেতৃত্ব গঠনের পথ রুদ্ধ করবে। কেউ যদি দীর্ঘদিন এলাকায় থেকে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নেতা হন, তাকেও তো তখন দলীয় সিদ্ধান্তে বাদ দেওয়া হতে পারে।
এতে আরও বেশি স্বৈরশাসনের দিকে যাওয়া হবে। দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেছেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে আমরা যদি সেই পিআর পদ্ধতি যাই, এতে নিজেদের মধ্যে একটি বড় ধরনের বিভেদ-বিভাজন তৈরি হবে। ফ্যাসিস্ট এখানে বড় সুযোগ পেয়ে যাবে।
সরকারের আলোচনায় নেই পিআর পদ্ধতি : ভোটের পিআর পদ্ধতি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি বলে একাধিক উপদেষ্টা জানান। তারা বলছেন, ঐকমত্য কমিশনে দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে যে সব প্রস্তাব চূড়ান্ত হবে, সেগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে নির্বাচন প্রলম্বিত করার কোনো চিন্তা সরকারের নেই।
নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মতপার্থক্যের কোনো মীমাংসা সম্ভব হবে, এ ব্যাপার রাজনীতিকদেরই সন্দেহ আছে। এছাড়া রাজনীতিকদেরই অনেকে বলছেন, সরকারের প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে। সমন্বিত পরিকল্পনা না হওয়ায় নানা ইস্যু সামনে আসছে এবং সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আর এ পরিস্থিতিই নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ