নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫ ০৯:০১ পিএম
গণঅভ্যুত্থানে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ওপর গত ৯ মাসে ৩৬ হামলা
গত ৫ আগস্টের পর জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ওপর গত ৯ মাসে অন্তত ৩৬টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন নিহত এবং ৮৯ জন আহত হয়েছেন।
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) ফ্যাক্টচেক, মিডিয়া গবেষণা ও বিশ্লেষণী উইংয়ের ‘বাংলাফ্যাক্ট’ পরিচালিত গবেষণায় উঠে এসেছে। রোববার (৪ মে) এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে ‘বাংলাফ্যাক্ট’।
প্রতিবেদনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের ওপর হামলার বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
যেখানে বলা হয়, আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুরে গুলিবিদ্ধ হন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক জসিম উদ্দিন হাওলাদার। ঘটনার ১০ দিন পর ২৯ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরবর্তীতে পটুয়াখালীর দুমকীর গ্রামের বাড়িতে তাকে সমাহিত করা হয়।
তবে বাবার কবর জিয়ারত করতে গিয়ে গত ১৮ মার্চ শহিদ জসিমের মেয়ে (১৭) ধর্ষণের শিকার হন। এমন ঘটনায় দীর্ঘ মানসিক পীড়নে ভোগার পর গত ২৬ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন শহিদ জসিমের মেয়ে।
‘বাংলাফ্যাক্টের’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পটুয়াখালীর এ ঘটনার পরদিন নোয়াখালীর মাইজদীতে জুলাই আন্দোলনের আরেক শহিদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর ছোট ভাই শাহরিয়ার হাসানকে (১৬) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। ওই হামলার ঘটনার পর জাতীয় একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী জেলা সমন্বয়ক আরিফুল ইসলাম বলেছেন- ‘কিশোর গ্যাংটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে। শহিদ জসিম ও শহীদ রিজভীর পরিবার একা নন।’
গত ৯ মাসে বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে বাংলাফ্যাক্ট জানায়, ৫ আগস্টের পর থেকে হওয়া ৩৬ হামলার মধ্যে ৩৩টিই ঘটেছে আন্দোলনে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। বাকি ৩টি জুলাইয়ে শহিদ পরিবারের সঙ্গে ঘটেছে। এরমধ্যে শাহরিয়ার হাসানের ওপর হামলা ছাড়া অন্য দুটি ঘটনার ক্ষেত্রে হামলাকারীদের সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে জুলাইয়ের শহিদদের কবরে হামলার একাধিক ঘটনার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে বলেও জানিয়েছে বাংলাফ্যাক্ট।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত হওয়া ৩৬ হামলায় জড়িতদের মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশে রয়েছে আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের (ছাত্রলীগ বা যুবলীগ) নেতাকর্মীরা। মোট ৩৬টি ঘটনার মধ্যে ১৩টিতেই তাদের যোগসূত্র ছিল।
বাংলাফ্যাক্ট জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক কর্মীকে আটক করে পুলিশে দেয়ার সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২ সমন্বয়কের ওপর হামলা করে দলটির নেতাকর্মীরা। ওই সময় দুইজন সাংবাদিকও আহত হন।
এদিকে হামলার ঘটনাগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের পরে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা জড়িতদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অংশে রয়েছে। তারা ৯টি ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গ সংগঠনগুলোর হামলা বাদে আরও ৯টি হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বাংলাফ্যাক্ট। যদিও এসব হামলার ধরন ও পারিপার্শ্বিক আলামত দেখে ধারণা করা যায়, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এসব হামলা হতে পারে। তবে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় হামলাকারীদের সন্ত্রাসী, দুর্বৃত্ত বা ছিনতাইকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাফ্যাক্টের গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, হামলার ৩৬টি ঘটনায় সবমিলিয়ে অন্তত ৮৯ জন আহত হয়েছেন। আর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িকেন্দ্রিক সংঘর্ষের সময়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়। ওই ঘটনায় ১৭ জন আহত হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আবুল কাসেম (২০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়।
ভোরের আকাশ/এসআই