ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৪ মে ২০২৫ ০৫:৩৭ পিএম
সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আগামীকাল রোববার বৈঠক করবেন। এদিন বিকালে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার বিকালে প্রধান উপদেষ্টা দপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা সব রাজনৈতিক দলের একজন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির সঙ্গে যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার আলাদা আলাদা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের পরামর্শের পর সর্বদলীয় বৈঠকের পথেই হাঁটলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সরকার কাজ করতে পারছে না বলে অভিযোগ এনে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বৈঠকের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা এ বৈঠক ডেকেছেন। এরই মধ্যে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বৈঠকে আমন্ত্রণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, একজন উপদেষ্টা ফোন দিয়ে বলেছেন আগামীকাল রোববার সর্বদলীয় বৈঠক হবে, থাকতে পারব কিনা। বিকাল ৫টা থেকে এই বৈঠক হতে পারে বলেও জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সামাজিকমাধ্যমে আলোচিত বিভিন্ন আইডি থেকে ‘নিশ্চিত’ তথ্য বলে ছড়ানো হয় যে, প্রধান উপদেষ্টা সরে যেতে চাইছেন। পরে সন্ধ্যায় গণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় গিয়ে ইউনূসের সঙ্গে এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এই গুঞ্জন যে সত্য, তা প্রমাণ হয়।
দুই নেতা সেই বৈঠকে গিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধ করতে। শুরুতে সংবাদমাধ্যমকে দুই পক্ষ থেকেই নাম প্রকাশ না করে বক্তব্য দেওয়া হয়। পরে বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলামই নিজেই বলেন সব কিছু।
পরে জানা যায়, উপদেষ্টা পরিষদের নির্ধারিত বৈঠক শেষে উপদেষ্টারা নিজেরাও এ নিয়ে দীর্ঘ কথা বলেছেন। সেই বৈঠকের বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমে নানা কিছু এসেছে। কিন্তু কোন বিষয়ে সরকার কাজ করতে পারছে না, সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য আসেনি। সেদিনেই জামায়াতের আমির প্রধান উপদেষ্টাকে সর্বদলীয় বৈঠক আয়োজনের আহ্বান জানান। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান গত বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে প্রধান উপদেষ্টাকে পরামর্শ দেন।
দলটির কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের এক বার্তায় বলা হয়, দলের ‘জরুরি’ এই বৈঠকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিষদ আলোচনা করা হয়। সেখানেই সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানানো হয়। নিজের ভেরিফায়েড ফেইসবুক পাতায় এক পোস্টে জামায়াতের আমিরও ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ সব পক্ষকে ‘মান, অভিমান ও ক্ষোভ একদিকে’ রেখে জাতীয় স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি লেখেন, জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য আন্তরিকভাবে অনুরোধ জানাই। যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি।
ঢাকায় এক আয়োজনে জামায়াতের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, এই সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গেও আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপির প্রতিনিধি এবং রাত সাড়ে ৮টায় জামায়াত ইসলামীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক হয়। বড় দুই দলের সঙ্গে পৃথক পৃথক বৈঠকের পর এনসিপির সঙ্গেও বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া আজ উপদেষ্টা পরিষদ থেকেও একটি বিবৃতিতে দেওয়া হয়েছে। এতে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার তিন দিন পর ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। জুলাই আন্দোলনের ঐক্য মাস কয়েক বজায় থাকলেও প্রথমে ছাত্রদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। তারপর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের দূরত্ব তৈরি হয়। এরপর নতুন দল এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হতে শুরু করে।
এর মধ্যে বিএনপি ও এনসিপি পাল্টাপাল্টি করে কয়েকজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেন। গত বুধবার সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে খবর প্রকাশ পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের’ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
তবে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের ‘অনির্ধারিত বৈঠক’ শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস ‘অবশ্যই’ সরকারে থাকবেন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ