আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৫ ১২:৪৬ এএম
সিরিয়ার সুইদায় ফের বেদুইন-দ্রুজ সংঘর্ষ, উত্তেজনা চরমে
সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ সুইদায় আবারও বেদুইন ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধবিরতির একদিন পর শুক্রবার (১৮ জুলাই) নতুন করে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ শুরু হয় বলে জানিয়েছে আল জাজিরা।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, সুইদায় কোনো সরকারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নুরউদ্দিন আল-বাবা রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। প্রচারিত তথ্যগুলো সম্পূর্ণ অসত্য।”
তিনি জানান, সরকারি বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ইউনিট সুইদা অঞ্চলে পাঠানো হয়নি।
এর আগে এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, দক্ষিণ-পশ্চিম সিরিয়ার চলমান সহিংসতা বিবেচনায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুইদায় সিরিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর সীমিত উপস্থিতিতে সম্মতি দিয়েছে ইসরায়েল।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও সুইদায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল, যা সিরিয়া সরকার তাদের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ হিসেবে অভিহিত করে। এ হামলাকে দেশটিতে অস্থিরতা ও বিভ্রান্তি তৈরির অপচেষ্টা বলেও উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা 'সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস' জানায়, শুক্রবার ফের সংঘর্ষ শুরু হয় সুইদা শহরের পশ্চিমাঞ্চলে। একদিকে রয়েছে সরকারি-সমর্থিত বেদুইন ও উপজাতীয় যোদ্ধারা, অন্যদিকে দ্রুজ যোদ্ধারা। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিও দুই পক্ষের গোলাগুলির সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায় এবং সংঘর্ষ এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন হতে দেখা যায়। একটি ভিডিওতে বেদুইন নেতা আবদুল মুন্নিম আল-নাসিফ তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “জাতিগত নিধন থেকে আমাদের জনগণকে রক্ষা করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের উপজাতীয়দের সুইদায় ছুটে আসতে হবে।”
বুধবার ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পর স্বল্প সময়ের শান্তি থাকলেও সংঘর্ষ আবার ছড়িয়ে পড়ে স্থানীয় মিলিশিয়া, সরকারপন্থী ও উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে।
সিরিয়ান নেটওয়ার্ক ফর হিউম্যান রাইটস-এর তথ্য অনুযায়ী, রোববার থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে অন্তত ৩২১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৭০ জনের বেশি এবং উদ্ধার করা হয়েছে ৮৭টি মরদেহ।
দুর্যোগ ও জরুরি সেবা বিষয়ক মন্ত্রী রায়েদ আল-সালেহ জানিয়েছেন, সহিংসতা কবলিত অঞ্চল থেকে বহু পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সুইদার দ্রুজ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্যই তাদের বিমান হামলা চালানো হয়েছিল। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও বর্তমান সংঘর্ষ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আল জাজিরার দামেস্ক প্রতিনিধি জেইনা খোদর জানান, “এই সংঘর্ষ সিরিয়ার জন্য একটি ভয়াবহ ও সংকটজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত। দীর্ঘ গৃহযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশটি একটি ভঙ্গুর স্থিতিশীলতার মধ্যে রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বেদুইন ও দ্রুজদের মধ্যে পুরনো বিরোধ থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার বেদুইনরা নিজেরাই রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা চায়, যা আগের ঘটনাগুলো থেকে আলাদা।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েলের জন্য এটি একটি কৌশলগত দ্বন্দ্ব—কারণ তারা পূর্বেই জানিয়েছিল দক্ষিণে সিরিয়ান সরকারি বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নেবে না।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক লাবিব আল-নাহাসের মতে, “ইসরায়েলের মিত্ররা যখন হুমকির মুখে, তখন তারা হয়তো সংঘর্ষ ঠেকাতে সাময়িকভাবে সরকারপন্থী বাহিনীর উপস্থিতি সহ্য করবে।”
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, সুইদায় সংঘাতে অংশগ্রহণকারী সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। বিবৃতিতে বলা হয়, “বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, লুটপাট ও ঘরবাড়ি ধ্বংসের মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আলোকে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে।”
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (UNHCR) বলেছে, সহিংসতার কারণে সুইদায় তাদের মানবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সংস্থার মুখপাত্র উইলিয়াম স্পিন্ডলার বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কাজ চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা সব পক্ষকে মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি।”
ভোরের আকাশ/হ.র