পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫ ০২:৪৬ পিএম
পাথরঘাটায় ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু, জনমনে উৎকণ্ঠা
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কয়েকজনের মৃত্যু ঘটনায় জনমনে চরম উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ডেঙ্গুতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রথম মৃত্যু: ২৪ জুন মধ্যরাতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কালমেঘা ইউনিয়নের ছোট পাথরঘাটা গ্রামের গৃহবধূ সাধনা রানী (৩৫)। বরগুনা শহরে জরুরি কাজে গিয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন তিনি। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে বরিশালে পাঠানো হয়। সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার স্কুলপড়ুয়া ছেলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।
দ্বিতীয় মৃত্যু: ২৮ জুন সকালে বরিশালে নেওয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যান সিরাজুম মুনিরা (৩২)। তিনি পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দপ্তরের সহকারী (সিএ-২) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে বরিশালে নেওয়া হচ্ছিল।
তৃতীয় মৃত্যু: ৭ জুলাই ভোরে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান সাইফুল মোল্লা (৩৫)। তিনি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনুস মোল্লার ছেলে এবং স্থানীয় একটি আইস ফ্যাক্টরির শ্রমিক ছিলেন। অসুস্থ অবস্থায়ও কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন তিনি। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়।
চতুর্থ মৃত্যু: ৮ জুলাই মঙ্গলবার বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তিনি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হাবিব ডাক্তারের ছেলে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা জেলায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৫২২ জন। সরকারিভাবে ৬ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও, বেসরকারি সূত্রগুলো বলছে—মৃত্যুর সংখ্যা ৩১ জনের মতো।
পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক, যেখানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২৭টি। এই অপ্রতুল জনবল ও সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য চালু হওয়া আলাদা ওয়ার্ডেও মিলছে না পর্যাপ্ত চিকিৎসা।
চিকিৎসকদের বক্তব্য অনুযায়ী, রোগীর চাপ এতটাই বেড়েছে যে, প্রতিদিনই চরম চাপের মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে তাদের। চিকিৎসক সংকট ও সীমিত সামর্থ্যের মধ্যেও যতটা সম্ভব, রোগীদের চিকিৎসা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ফলে বেশিরভাগ রোগীকেই বরিশালে রেফার করতে হচ্ছে কিংবা ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
স্থানীয় ইমান আলী সড়কের বাসিন্দা মাওলানা জাকির হোসেনের স্কুলপড়ুয়া মেয়ে তাকওয়াও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। প্রথমে হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় তাকে বাড়িতেই চিকিৎসা দিতে হয়, পরে বরিশালে রেফার করা হয়।
পাথরঘাটা উপজেলায় গত তিন দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২০ জনেরও বেশি মানুষ। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ইতোমধ্যে বরগুনা জেলাকে ‘ডেঙ্গুর হটস্পট’ ঘোষণা করা হয়েছে।
ভোরের আকাশ/আজাসা