জুলাইয়ের মধ্যে সনদ প্রণয়ন না হলে দায়ভার সরকারের: সালাহউদ্দিন
বাংলাদেশে জনগণ এখনো ‘পিআর’ (আনুপাতিক) নির্বাচনী পদ্ধতির বিষয়টি পুরোপুরি বোঝে না— এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, জুলাইয়ের মধ্যেই জাতীয় সনদ প্রণয়ন না হলে তার দায়ভার বহন করতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে বিএনপির আয়োজিত মৌন মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। মহানগর উত্তর বিএনপি আয়োজিত এই কর্মসূচি ছিল ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান’– এ শহীদদের স্মরণে আয়োজিত দলীয় কর্মসূচির অংশ।
সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, কিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের দাবি তুলে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “কেয়ারটেকার সরকার তিন মাসের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয় কেবল জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জন্য। তাদের হাতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের কোনো সাংবিধানিক দায়িত্ব নেই।”
তিনি আরও বলেন, “যারা এখন পিআর পদ্ধতি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ইত্যাদি নিয়ে মাঠ গরম করছে— তাদের উদ্দেশ্য একটাই: নির্বাচন বিলম্বিত ও অনিশ্চিত করা।”
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অতীতে যারা অবস্থান নিয়েছে, তারা এখন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। এসব অপচেষ্টা এবার ব্যর্থ হবে।”
সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি ‘ঢাকায় জন্ম হলেও দাফন হয়েছে দিল্লিতে’। তিনি আরও বলেন, “আজ যারা বিভিন্ন নামধারী দল হয়ে সংস্কার কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসছে— তাদের অনেকেই অতীতে আওয়ামী লীগের সঙ্গী ছিল। অথচ এখন তারা দলবদ্ধভাবে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে।”
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, “জুলাই মাস শেষ হওয়ার আগেই যদি জাতীয় সনদ চূড়ান্ত না হয়, তবে এর দায় বর্তাবে সংস্কার কমিশন ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর।”
বিএনপির এই নেতা বলেন, “আমরা তো ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব আগেই দিয়েছি। এই রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত করতে হলে সংবিধান, রাষ্ট্রব্যবস্থা ও প্রশাসনিক কাঠামোতে আমূল সংস্কার দরকার।”
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, “সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে একদিন অবশ্যই আমরা একটি জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব। যদিও গণতন্ত্রে শতভাগ মতৈক্য সব সময় সম্ভব নয়, তবে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য সেখানেই।”
সমাবেশের শেষদিকে তিনি ফ্যাসিবাদবিরোধী বিভিন্ন স্লোগানে অংশ নেন, যেমন: “এই দেশ আমার মুক্ত, আর দেব না রক্ত”, “ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই, বাংলায় বাংলায়” এবং “রক্তঝরা বাংলায়, ফ্যাসিবাদের ঠাঁই নাই”।
ভোরের আকাশ/হ.র
সংশ্লিষ্ট
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হবে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘গণতান্ত্রিক উত্তরণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ও সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।মঈন খান বলেন, ৫ আগস্ট যদি সত্যিই নির্বাচনের দিন ঘোষণা করা হয়, তবে সেটা যে মাসেই নির্বাচনের সময় দিক-না কেন, তা নিয়ে এত ভাবনার কারণ নাই।দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হবে। পিআর পদ্ধতির সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, পিআর পদ্ধতির গভীরে গেলে দেখা যাবে জনগণ একটি দলকে ভোট দিচ্ছে একজন ব্যক্তিকে নয়। এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে তা সংগতিপূর্ণ হবে না।তিনি বলেন, অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থা এক নয়, তাই পিআর পদ্ধতি এখানে কার্যকর করা যাবে কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে।ভোরের আকাশ/জাআ
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, স্বৈরতন্ত্রের পতন তখনই সার্থক হবে, যখন গণতন্ত্রের উত্তরণ সম্পন্ন হবে। যদি গণতন্ত্রের উত্তরণ সম্ভব না হয়, তাহলে স্বৈরতন্ত্র ফিরে আসার সম্ভাবনা থেকে যাবে। যারা আজকে বিভিন্ন অজুহাতে গণতন্ত্রের উত্তরণের যে নির্বাচন, সেই নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন বা বাধা দিচ্ছেন, তারা পক্ষান্তরে স্বৈরতন্ত্রের পক্ষেই অবস্থান নিচ্ছেন।বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।সংগঠনের সভাপতি মুক্তার আকন্দের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিক, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম কায়সার লিংকন, জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি জসিম উদ্দিন কবির প্রমুখ।সরকারের প্রতি বিএনপির সমর্থন আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপি প্রায় ১৬টি বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে। যারা আজকে স্বৈরতন্ত্রের পতনে বিএনপির ভূমিকাকে খাটো করে দেখছেন, তাদের বলব বিএনপি যখন আন্দোলন শুরু করেছিল, যাদের বয়স এখন ২৬ থেকে ২৮ এর মধ্যে, তারা তখন শিশু ছিল। হিসাব করলে দেখা যাবে, তাদের ভাতও মায়েরা খাইয়ে দিতেন। কিন্তু তারা যখন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে অস্বীকার করছেন, তখন বুঝতেই হবে, এরা অহঙ্কারী হয়ে পড়েছে।প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধি রেখেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটা ছেলে প্রতিনিধি হিসেবে পুলিশ নিয়ে গুলশানের একটি বাড়ি থেকে ৫০ লাখের ১০ লাখ টাকা নিয়ে এসেছে। যখন আরও ৪০ লাখ টাকা আনতে গেছিল, তখন সে ধরা পড়ে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবহার করে, পুলিশকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে, এটা তো আপনি জানেন। এই যে আপনি ছাত্রদেরকে আপনার মুরুব্বি বানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষ বানিয়েছেন, শিক্ষা ব্যবস্থা আপনি ধ্বংস করে ফেলেছেন, এর একটু দায় আপনারও নেওয়া উচিত।তিনি আরও বলেন, আমরা আপনার (প্রধান উপদেষ্টা) সমালোচনা করি, আপনি যাতে একটি ভালো নির্বাচন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণে সহায়তা করেন। না হলে অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। সে জন্য যেকোনোভাবে, যেকোনো উপায়ে আপনাকে ডিসেম্বর টু ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনসম্পন্ন করতে হবে, আর তা যদি সম্ভব না হয়, বাংলাদেশে কোনো স্বৈরতন্ত্র কিন্তু ভালো নির্বাচন ছাড়া রেহাই পায়নি। এখনো পর্যন্ত আপনার পথ খোলা আছে। আপনি ভালো নির্বাচন দেবেন, এটা জাতি প্রত্যাশা করে, আমরাও প্রত্যাশা করি।চাঁদাবাজদের উদ্দেশ্যে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, যারা চাঁদাবাজি করছেন, দল গঠন করছেন এবং বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলছেন, তাদের আমি বলব, এই সময় সময় না, আরও সময় আছে। আপনাদের পরিণতি কী হবে, সেটা যদি না ভাবেন, তাহলে ভুল হয়ে যাবে। এটা একবার মাথার মধ্যে নেন। এখন আপনাদেরকে ব্যবহার করে যারা উপদেষ্টামণ্ডলী সদস্য এবং ক্ষমতা ব্যবহার করছেন, তারা কিন্তু আপনাদেরকে সেই সময়ে সহায়তা করবে না, এটাই বাস্তব।ভোরের আকাশ/আআ
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, দুই কোটি টাকার চাঁদাবাজদের ধরেছেন, ভালো কথা। কিন্তু ২ হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজদের খবরও আপনাদের কাছে আছে। তাদের নাম প্রকাশ করুন অতিসত্বর। গত ১১ মাসে কে কী করেছে, সেটাও প্রকাশ করুন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় আসার ১১ মাস পার হলেও এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি, যা জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থি।বুধবার (৩০ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী নাগরিক পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।সংগঠনের সভাপতি ডা. এম ইসলাম বাদল তালুকদারের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল, তাঁতি দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনিরসহ প্রমুখ।ফারুক বলেন, দেশের প্রতিটি গ্রামগঞ্জ, চা দোকান, মহল্লায় এখন একটি প্রশ্ন– আপনারা তো কারো পক্ষের লোক না, তাহলে কেন এখনো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হচ্ছে না? শাহাবুদ্দিন আহমেদ মাত্র তিন মাসের মাথায় এরশাদের ১০ বছরের দমন-নিপীড়নের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচন দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ ১১ মাসেও নির্বাচন বিলম্বিত হচ্ছে।তিনি বলেন, আমরা তো রাজনৈতিক পরিবার থেকে এসেছি। আমাদের নেতা শহীদ জিয়া দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। আমাদের নেত্রী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। স্বাধীনতার ঘোষকের সন্তান ১৬টি বছর দেশের বাইরে থেকে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করছেন। আমাদের তরুণ প্রজন্মের নেতাদেরকে দিয়ে আন্দোলন সংগ্রামকে ত্বরান্বিত করে আপনাদেরকে সহায়তা করে হাসিনাকে বিদায় করেছে। সেই বিদায়ের ফল কি আজকে ১১ মাসে আমরা পেয়েছি?বিএনপি চেয়ারপারসনের এ উপদেষ্টা বলেন, জামায়াতে ইসলামী, আপনারা কোনো একসময় আমাদের বন্ধুও ছিলেন। অবহেলা করি না, করতেও চাই না। কিন্তু মনে দুঃখ হয়, যখন দিল্লির বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, সে লড়াইয়েও আপনারা এক সময় আমাদের বন্ধু ছিলেন। কিন্তু ঠিক যেই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষ একটি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু রাজনৈতিক দল নানা অজুহাত দিচ্ছে। কখনো বলছে পিআর, কখনো বলছে সংবিধান সংশোধন না হলে নির্বাচনে যাবে না। এসব অজুহাত জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।ফারুক বলেন, বিএনপি কোনো অন্যায়ের পক্ষপাতী নয়। আমাদের কর্মীরা যদি ভুল করে, তারেক রহমান নিজে ব্যবস্থা নিয়েছেন, বহিষ্কারাদেশ দিয়েছেন। তারপরও আমাদের বদনাম দেওয়া হচ্ছে। অথচ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ।ভোরের আকাশ/এসএইচ
দলের ভেতরে সংঘাত ও হানাহানি সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা চরমভাবে লঙ্ঘন করায় বিএনপির ৫ নেতাকে প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বহিষ্কারকৃত নেতারা হলেন- চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্যসচিব গাজী নিজাম উদ্দিন, বারৈয়ারহাট পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক দিদারুল ইসলাম মিয়াজী, যুবদল নেতা সিরাজুল ইসলাম ও কামাল উদ্দিন।ভোরের আকাশ/এসএইচ