নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:২৯ এএম
আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)
আজ ১২ রবিউল আউয়াল। মুসলিম উম্মাহ আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন করছে। এই দিনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও পরবর্তীতে ওফাতের স্মরণ করা হয়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আরবের মক্কা নগরের কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
নবীজীর বাবা ছিলেন আবদুল্লাহ এবং মা আমিনা। জন্মের আগেই তিনি বাবাকে হারান, আর ছয় বছর বয়সে মাতৃহারা হন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে তিনি ওফাত লাভ করেন। মুসলিমরা দিনটি সিরাতুন্নবী (সা.) বা ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ দিন কোরআন তিলাওয়াত, দরুদ পাঠ, দান-খয়রাত ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করেন। অনেকে নফল রোজাও রাখেন।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দিনটি উপলক্ষ্যে বাণী দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সারা দেশে ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে দিনটি উদযাপিত হবে। আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সশস্ত্র বাহিনীর সব স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। ঢাকা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কদ্বীপ ও লাইটপোস্টে জাতীয় পতাকা এবং ‘কালিমা তায়্যিবা’ অঙ্কিত ব্যানার টানানো হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, মহানবী (সা.) একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তাঁর প্রতিটি কথা, কর্ম ও জীবনাদর্শ মুসলমানদের জন্য অনুসরণীয়। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেছেন যে, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সবার মাঝে অপার শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য সুসংহত হোক।
প্রধান উপদেষ্টা তার বাণীতে উল্লেখ করেছেন, মহানবীর জীবন ও আদর্শ অনুসরণ করলে আমাদের ইহকাল ও পরকালীন জীবনের কল্যাণ ও মুক্তি নিশ্চিত হবে।
তারেক রহমান তার বাণীতে বলেছেন, এই দিনটি মহানবীর দুনিয়াতে আগমনের আনন্দ উদযাপন ও তাঁর জীবন থেকে শিক্ষাগ্রহণের দিন। তিনি মানবজাতিকে পরিশোধন ও কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন। তারেক রহমান আশা প্রকাশ করেছেন যে, সবাই যেন মহানবীর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমা জীবনে প্রতিফলিত করতে পারে।
ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন পক্ষকালব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। শুক্রবার বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পূর্ব সাহানে অনুষ্ঠান শুরু হয়। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক প্রধান অতিথি হিসেবে উদ্বোধন করেন। ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে ওয়াজ মাহফিল চলবে, যেখানে দেশবরেণ্য আলেম ও উলামা বয়ান করবেন।
পবিত্র দিনটি উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে সিরাত স্মরণিকা, যার মধ্যে আলেম, ইসলামি স্কলার, লেখক ও গবেষকদের লেখা সংকলিত। এছাড়া জাতীয় মসজিদের পূর্ব ও দক্ষিণ সাহানে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান ও লেবাননের প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে। এবারের মেলা বৃহৎ পরিসরে আয়োজন করা হয়েছে, প্রায় ২০০টি স্টল থাকছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে।
ঢাকার স্কুল, কলেজ, আলিয়া ও কওমি মাদরাসা, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ইসলামি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আগারগাঁও কার্যালয়ে অনুষ্ঠান হবে। ১৮ সেপ্টেম্বর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
১১ সেপ্টেম্বর বাদ মাগরিব কিরাত মাহফিল, ১৭ সেপ্টেম্বর হামদ-নাত, এবং ১৮ সেপ্টেম্বর বাদ আসর রাসুল (সা.)-এর শানে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর অনুষ্ঠিত হবে। এতে দেশের প্রখ্যাত কারি, কবি ও শিল্পীরা অংশ নেবেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫৬টি ইসলামিক মিশন ও ৮টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে ওয়াজ মাহফিল ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
সরকার সারা দেশে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শান্তিপূর্ণ উদযাপনের জন্য সর্বাত্মক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা ও রাজশাহীর মতো শহরে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষত বড় মসজিদ ও ধর্মীয় স্থানে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
সংবেদনশীল স্থানগুলোতে নজরদারি ও টহল জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে জনসমাগম ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভক্ত ও দর্শকদের নির্বিঘ্ন চলাচলের জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ওপরও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
ভোরের আকাশ/হ.র