শিপংকর শীল
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫ ০৯:৫৯ এএম
সংগৃহীত ছবি
ঈদুল আজহার ছুটি এখনো চলছে। এর মধ্যেই রাজধানীমুখী মানুষের ফিরতি যাত্রা শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। তারপরও ঢাকা এখনও অনেকটাই ফাঁকা। নগরজীবনে ফেরেনি স্বাভাবিক গতি। বিভিন্ন সড়ক, টার্মিনাল, বাজার, এমনকি জনবহুল এলাকাগুলোতেও নেই সেই চিরচেনা ভিড়। এছাড়া শহরের গণপরিবহনগুলোতে যাত্রী সংখ্যা খুবই কম, অধিকাংশ বাসেই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার ঈদের চতুর্থ দিন রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার টার্মিনালগুলোতে দূরপাল্লার বাসগুলো আসছে ঠিকই, কিন্তু যাত্রী কম। যারা ফিরছেন, তারাও মূলত ঈদের ভিড় এড়িয়ে আগে-ভাগেই রাজধানীতে পৌঁছাতে চাইছেন।
ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতেও ছিল একই চিত্র। ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর, মতিঝিল, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর সব জায়গাতেই ঈদের ছুটির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে। যত্রতত্র গাড়ির সারি নেই, ট্রাফিক সিগন্যালে থেমে থাকার চাপ নেই, পথচারীদের ভিড়ও কম।
ভিআইপি সিটি সার্ভিস বাসের চালক বাবু বলেন, আজ সকাল থেকে রাস্তা ফাঁকা দেখেছি। যানজট তো একেবারেই নেই। ঈদের সময় শুধু এমন খালি রাস্তা দেখা যায়। যাত্রী কম থাকায় তেমন ভাড়াও পাওয়া যায়নি। খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় রহিমের সঙ্গে।
তিনি বলেন, বাড়ি থেকে ট্রেনে বিমানবন্দরে নেমে বাসে খিলক্ষেত এলাম, এখানেই বাসা। ঢাকা এখনও ফাঁকাই দেখা যাচ্ছে। বাসে কোনো ভিড় নেই। ট্রেনেও কোনো ভিড় নেই। মানুষজনের ঢাকায় আসতে আরও কয়েকদিন সময় লাগবে।
তুরাগ বাসের যাত্রী শওকত বলেন, আজ সকালেই বোর্ড বাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেই। সাধারণত এই সময়টায় বাসে তিল ধারণের জায়গা থাকত না। কিন্তু আজ চিত্রটা পুরো উল্টো। বাসে উঠে দেখি অনেক সিট খালি, দাঁড়িয়ে থাকারও প্রয়োজন হয়নি। ভালোভাবে বসেই পুরোটা পথ আসতে পেরেছি।
‘যদিও বাসে ভিড় ছিল না, তবে যাত্রীর জন্য প্রতিটি স্টপেজে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। কারণ, রাস্তায় যাত্রী নেই বললেই চলে। যাত্রী তুলতে বাসও অপেক্ষা করছে।’
এদিকে, সরকারি অফিসসহ অনেক বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম এখনো বন্ধ রয়েছে। ঈদের ছুটি চলবে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত। অফিস খুলবে ১৫ জুন। ফলে রাজধানীর প্রশাসনিক ও আর্থিক কেন্দ্রগুলো যেমন মতিঝিল, আগারগাঁও বা উত্তরা অফিস পাড়া সব জায়গায় একপ্রকার নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছুটি চলছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, বিগত দুদিন সড়কে যানবাহনের উপস্থিতি ছিল একদমই হাতে গোনা। ফলে যানবাহন সংকটে কিছুটা বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল সাধারণ মানুষের চলাচলে। তবে আজ সকাল থেকেই সড়কে যানবাহন বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন গন্তব্যগামী সাধারণ মানুষের চলাচলও।
রাজধানীর কোথাও এখন পর্যন্ত যানজটের চিত্র দেখা যায়নি। তবে বাস স্টপেজ গুলোতে গাড়ির অপেক্ষায় যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও সড়কে নিজস্ব পরিবহন, ব্যটারিচালিত অটোরিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সবমিলিয়ে ফাঁকা রাজধানীতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করে স্বস্তি প্রকাশ করছেন নগরীর বুকে থেকে যাওয়া সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর কল্যাণপুরে কথা হয় গুলিস্তানগামী যাত্রী রাহাতের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরতো এই ছুটির সময় উন্নত শহরের মতো হয়ে যায়। কোথাও কোনো যানজট নেই, বাসে ঝুলতে হয় না। ঢাকা শহরটা সবসময় এমন থাকলে বেশ ভালোই লাগতো। আমিনবাজার থেকে মৌমিতা পরিবহনের বাসে উঠেছেন আবদুল কুদ্দুস, গন্তব্য যাত্রাবাড়ী।
তিনি আরও বলেন, আমিনবাজার থেকে কল্যাণপুর আসতে সময় লেগেছে মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট। যেখানে সাধারণত যে সময় অফিস চলে সেই সময় এক ঘণ্টার ওপরেও লাগে। ঢাকা শহরের রাস্তা যদি সবসময় এমন থাকতো তাহলে মানুষের অনেক সময় বেঁচে যেত। শহরটাও উন্নত হতো।
রাজধানীর শ্যমলী বাস স্টপেজে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. আলমগীর। গন্তব্য নিউমার্কেট। তিনি বলেন, বোনের বাসায় এসেছিলাম কোরবানির মাংস দিতে। যদিও আসার সময় গাড়ি পেতে কিছুটা সময় লেগেছে, তারপরও খুব কম সময়ের মধ্যে চলে আসতে পেরেছি। গাড়িও একদম ফাঁকা ছিল। ছুটির দিনগুলোতে ঢাকা শহরে চলাচল করতে বেশ ভালোই লাগে।
বিগত দিনগুলোর তুলনায় আজ সড়কে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকটা খুশি পরিবহন শ্রমিকরা। মৌমিতা পরিবহনের চালকের সহকারী খোরশেদ আলম বলেন, আগের দুদিন তেমন কোনো যাত্রী ছিল না। আজ মোটামুটি যাত্রী আছে। রাস্তায় গাড়িও বেড়েছে। তবে সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও কোনো যানজট পাইনি।
গাবতলী লিংক পরিবহনের চালকের সহকারী মো. হাফিজুল বলেন, রাস্তায় যাত্রী কম। যাত্রী কম থাকার কারণে মালিক সবগুলো গাড়ি বের করেননি। তবে আগের দুই দিনের তুলনায় আজ যাত্রী বেড়েছে। সাধারণত ঈদের সময় মানুষ পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটে যায়। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল আর লঞ্চঘাটের সেই ঈদের ভিড়ের ছাপ এখনো এই ফাঁকা শহরে স্পষ্ট। শহরের বাসিন্দাদের বড় একটা অংশ এখন গ্রামে, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগিতে ব্যস্ত।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, ১৩ ও ১৪ জুন থেকে রাজধানীমুখী মানুষের ভিড় বাড়বে এবং ১৫ জুন থেকে ধীরে ধীরে পুরোনো চেহারায় ফিরবে রাজধানী ঢাকা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ