লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৫ ১১:৩৭ এএম
সংগৃহীত ছবি
প্রকৃতি প্রেমিক না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সবুজের ঘ্রাণ আমাদের সবাইকে কাছে টানে, আর একটু সবুজের ছোঁয়া পেলে মন স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে। ইট পাথরের এই শহরে আমাদের প্রিয় ঘরটাকে নিজের মত করে অনেক ভাবেই সাজাতে পারি। বিভিন্ন ধরণের ইনডোর প্লান্ট বা বাহারি ফুলের গাছ আমাদের ঘরটিকে করে তোলে আরও সুন্দর।
বাড়ি মানেই কেবল বসবাসের জায়গা নয়। এটি এখন একান্ত নিজস্বতার প্রকাশ, রুচি ও চিন্তার প্রতিফলন। শহরের যান্ত্রিক জীবনে ক্লান্ত মানুষ এখন গৃহসজ্জায় খুঁজে নিচ্ছেন প্রশান্তি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ছোঁয়া। তাই বদলে যাচ্ছে গৃহসজ্জার ধারা, আসবাবপত্র থেকে শুরু করে রঙ ও আলোকসজ্জা পর্যন্ত সব জায়গাতেই বাড়ছে নান্দনিকতা ও ব্যক্তিগত স্টাইলের প্রাধান্য।
প্রকৃতি এখন ঘরের অন্দরে
শুধু দেয়ালে নয়, ছাদ, জানালা ও আসবাবেও প্রকৃতির ছোঁয়া আনার চেষ্টা করছেন অনেকেই। ঘরের কোণায় ছোট গাছ, দেয়ালে ভিনটেজ বা প্রাকৃতিক দৃশ্যপটে তৈরি চিত্র, এবং বাঁশ-খড়ের তৈরি শো-পিস এখন ঘরের আবশ্যিক অংশ হয়ে উঠেছে। মানুষ এখন গৃহসজ্জায় প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা চায়। প্লাস্টিক আর চকচকে জিনিসের চেয়ে কাঠ, ক্যানভাস, বাঁশ বা কাচের তৈরি জিনিসের চাহিদা অনেক বেড়েছে।
রঙে রুচির ছোঁয়া
গত কয়েক বছর ধরেই ম্লান ও হালকা রঙের (নিউট্রাল টোন) দেয়াল জনপ্রিয়। বিশেষ করে অফ হোয়াইট, স্যান্ড, গ্রে এবং স্যালমনের মতো রঙ এখন আধুনিক গৃহসজ্জায় ব্যবহৃত হচ্ছে বেশি। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এক্সেন্ট ওয়াল (Accent Wall) অর্থাৎ ঘরের একটি দেয়ালকে আলাদা রঙ বা ডিজাইনে সাজানোর প্রবণতাও বেড়েছে।
আলোকসজ্জায় নাটকীয়তা
সাধারণ সিলিং লাইটের পরিবর্তে এখন ঝুলন্ত লাইট, ট্র্যাক লাইটিং ও ওয়ার্ম লাইট বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ঘরের মেজাজ ও পরিবেশ পরিবর্তনে আলো যে কতটা ভূমিকা রাখতে পারে, তা এখন আর অজানা নয়। ডেকোরেটিভ ল্যাম্প, হ্যান্ডমেইড লাইট শেড কিংবা কাচের ঝাড়বাতি দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আধুনিক ও প্রাকৃতিক এক মিশ্র আবহ।
ছোট ঘরের বড় পরিকল্পনা
মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে ছোট বাসা বা অ্যাপার্টমেন্টের চাহিদা বাড়ায় গৃহসজ্জাতেও এসেছে পরিবর্তন। বহুমুখী আসবাব (যেমন: সোফা-বেড বা ফোল্ডিং টেবিল), দেয়ালে ঝুলন্ত স্টোরেজ, আয়না দিয়ে ঘর বড় দেখানোর কৌশল, এসব এখন নতুন বাড়ির ডিজাইনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সজ্জা সামগ্রী জনপ্রিয় হচ্ছে
পুনর্ব্যবহারযোগ্য (recyclable) ও পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি আসবাব ও শো-পিসের দিকে আগ্রহ বাড়ছে। ফার্নিচারে ব্যবহৃত হচ্ছে ন্যাচারাল ফিনিশিং যেমন অল্প পালিশ করা কাঠ, রট আয়রন, হ্যান্ডক্রাফটেড ফ্যাব্রিক ইত্যাদি।
স্থানীয় শিল্পীর কাজের কদর বাড়ছে
নকশা, চিত্রকলা, হস্তশিল্প এবং দেশীয় বয়নশিল্প এখন গৃহসজ্জায় নতুন মাত্রা যোগ করছে। বিশেষ করে ঢাকায় অনেকেই এখন স্থানীয় শিল্পীর আঁকা ক্যানভাস, জামদানি মোটিফ বা নকশিকাঁথার নকশা ব্যবহার করছেন দেওয়াল বা কুশনে।
গৃহসজ্জা এখন কেবল সাজসজ্জা নয় এটি মানসিক প্রশান্তি, পরিচ্ছন্নতা ও স্বকীয়তা প্রকাশের মাধ্যম। প্রযুক্তি, পরিবেশ-চেতনা ও রুচির মিশেলে গৃহসজ্জায় আসছে বৈচিত্র্য। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে ঘরের ভেতরের পৃথিবী আর সেই পরিবর্তনেই ফুটে উঠছে বসবাসকারীর মনের জানালা
বিশেষ টিপস:
ছোট ঘরে বড় আয়না ব্যবহার করুন, ঘরকে দেখাবে প্রশস্ত।
আলোর উৎস যত বেশি প্রকৃতির, তত বেশি প্রশান্তি।
প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি জিনিস বেশি দিন টিকে, পরিবেশবান্ধবও বটে।
ভোরের আকাশ/তা.কা