নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৪১ এএম
ছবি : আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ, ইনসেটে আবরার
কান্না ভেজা চোখে শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার ছেলের দোষ কী ছিল? সে শুধু আগ্রাসনবিরোধী লেখালেখি করেছিল।’ তিনি বলেন, আবরার বলেছিল— ‘আমার রুমের আশেপাশে সবাই ছাত্রলীগের ছেলে। কেউ এলে ওরা আমাকে মারতে দেবে না।’
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় আবরার ফাহাদের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে একযোগে প্রামাণ্যচিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শন করা হয়।
আবেগঘন বক্তব্যে বরকত উল্লাহ বলেন, সে শুধু আগ্রাসনবিরোধী লেখালেখি করেছিল। শুরুতে আমরাও জানতাম না সে এমন লিখে। পরে জানতে পেরে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তখন সে বলেছিল— ‘আমি খারাপ কিছু লিখি না, কেউ আমাকে কিছু বলবে না।’ সে আরও বলেছিল— ‘আমার রুমের আশেপাশে সবাই ছাত্রলীগের ছেলে। কেউ এলে ওরা আমাকে মারতে দেবে না।’ কিন্তু আমার ছেলে যেদিন ছুটি শেষে হলে ফিরে গেল, তার পরের দিনই ছাত্রলীগের ছেলেপেলে তাকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলে।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের দোষ ছিল— সে দেশের পক্ষে লেখালেখি করেছে। দেশের ক্ষতি হচ্ছিল যেগুলোতে, সে সেগুলো তুলে ধরত। তার ফেসবুকে লিখেছিল— ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর কলকাতা বন্দর ব্যবহার না পেয়ে বাংলাদেশ গোলাপপোর্ট চালু করে, এরপর থেকেই ইলিশ কমে যায়। সে আরও লিখেছিল, পানি চুক্তিতে ভারত আমাদের সময়মতো পানি দেয় না, অথচ আমরা বিনা শর্তে দিয়েছিলাম ১ লাখ ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। এই ধরনের স্ট্যাটাসের কারণেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীর ছেলেরা ও তার রুমমেট মিজান মিলে ওকে ‘শিবিরের ছেলে’ তকমা দেয়। এই মিথ্যা অভিযোগেই ছুটি শেষে হলে ফিরে আসার পরের দিন রাত ৮টা থেকে সারারাত নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।
আবরারের বাবা আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমার ছেলে খুব ভীত ছিল। যদি ওদের কেউ বলত ‘লিখবে না’— তাহলে সে কখনো হলে ফিরে যেত না। কিন্তু ওরা তার কোনো কথা শোনেনি। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিল কে কে শিবির করে, অথচ সে কোনো দলের ছিল না। যারা আমার ছেলের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল, আল্লাহ তাদের বিচার করেছেন।
তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমার ছেলের মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন আছে। এ বিচার যেন দ্রুত শেষ হয়।
আবরারের বাবা আরও বলেন, ২০১৯ সালে আবরার ফাহাদ শহীদ হওয়ার পর থেকে প্রতি বছরই তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ পালন করতে গিয়ে গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনের কর্মীসহ সাধারণ মানুষ অনেকেই নির্যাতন, নিপীড়ন, এমনকি জেল খেটেছেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর এই প্রথম সারা দেশে সবাই একসঙ্গে এ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে— এজন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন— বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। কিন্তু সেই তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি। আমি চাই, তালিকাটি দ্রুত তৈরি ও প্রকাশ করা হোক।
শেষে তিনি বলেন, আবরার ফাহাদসহ জুলাই-আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন, আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক শেখ রেজাউদ্দিন আহমেদ স্ট্যালিন, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক দীপক কুমার গোস্বামীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে শহীদ আবরার ফাহাদের স্মরণে প্রামাণ্যচিত্র ‘ইউ ফেইলড টু কিল আবরার ফাহাদ’ প্রদর্শিত হয়।
ভোরের আকাশ/মো.আ.