× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আইএমএফের ঋণ

জনগণকে স্বস্তি দিতে নত হচ্ছে না ঢাকা

তাকী মোহাম্মদ জোবায়ের

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫ ১১:২৭ এএম

জনগণকে স্বস্তি দিতে নত হচ্ছে না ঢাকা

জনগণকে স্বস্তি দিতে নত হচ্ছে না ঢাকা

আইএমএফের শর্তে এখন পর্যন্ত নত হয়নি ঢাকা। সামনেও নত না হওয়ার বিষয়ে বেশ দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার পাবে কি না- সেটি নির্ভর করছে আইএমএফ তাদের শর্ত থেকে কতটা সরে আসে সেটির ওপর। এজন্য আগামী ১২ মে পর্যন্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে আবারও বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এই বৈঠকে দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে বলে দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থাটির আগ্রহেই ৫ ও ৬ মে দুই দফা ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছেন অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারা। কোন সমাধান না আসা এই দুই বৈঠকের আগে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিলের মধ্যে ওয়াশিংটনে দুই দফা বৈঠক হয়েছিল।

বৈঠকগুলোতে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ডালারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার জন্য সংস্থাটি চাপ দিচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার ও ডলার কেনা-বেচার মধ্যকার পার্থক্যসীমা বেঁধে দিতে পারবে না। চাহিদা ও সরবরাহের অনুপাতে ডলারের দাম বাজারে স্বাধীনভাবে ওঠানামা করবে। এই শর্তে বাংলাদেশ কোনও ভাবেই রাজি নয়। কারণ এভাবে ডলারের দাম বাজারে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা ভালো নয়।

আইএমএফের শর্ত মেনে ডলারের দর বাজারে ছেড়ে দেওয়ার পর ২৭০ রুপিতে এক ডলার কিনতে হয়েছে। শ্রীলঙ্কায় এটি ৩শ রুপি পার হয়েছিল। বাংলাদেশও যখন পরীক্ষামূলকভাবে ডলার বাজারভিত্তিক করে তখন হঠাৎ করে ডলারের বিনিময় হার আশির ঘর থেকে একশ বিশের ঘর পার হয়ে যায়। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময় হার বেধে দিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ভোরের আকাশের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, বাংলাদেশও যদি ডলার বাজারভিত্তিক করে তাহলে আমরা জানিনা ঠিক কোন জায়গায় গিয়ে ডলারের দাম ঠেকবে। ডলারের এই দর বৃদ্ধির চাপ আমাদের জনগণ সামাল দিতে পারবে না। এমনিতেই গত কয়েকবছর ধরে মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের সাধারণ মানুষ পিষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বেড়ে গেলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের আরও বাইরে চলে যাবে। তাই বাংলাদেশ কোনভাবেই এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তে যাবে না বলে সবগুলো বৈঠকেই আইএমএফকে জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এর প্রেক্ষিতে ডলারের বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশকে একটি রিজার্ভ ফান্ড তৈরির পরামর্শ দেয় আইএমএফ। এটিতে রাজি হলেও এজন্য পর্যাপ্ত সময় চায় ঢাকা। কারণ বৈদেশিক দায় শোধ করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত রিজার্ভ সংরক্ষণ করেই এই নতুন ফান্ড তৈরি করতে হবে। এতে বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। ডলারের বিনিময় হার বাজারমুখী করা ছাড়াও বিভিন্ন খাতে সরকারের ভর্তুকি কমানোর জন্য শর্ত দিয়ে আসছিল আইএমএফ। এই মুহূর্তে শর্ত দুটির কোনটিই বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে আইএমএফকে ৫ ও ৬ তারিখের ভার্চুয়াল বৈঠকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ।

বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা ভোরের আকাশ’কে বলেন, আমাদের যা বলার স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি। এখন মূলত ঋণের কিস্তি নির্ভর করছে সংস্থাটির বোর্ড সভার ওপর। আমরা এখনও ঋণের কিস্তির বিষয়ে আশাবাদি। তারা হয়তো বাংলাদেশের পরিস্থিতি বুঝতে পারবে, বলেন ওই কর্মকর্তা।

এদিকে আইএমএফের ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতার পেছনে ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কোনও কারণ আছে কি না- সেটি নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে। আলোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু এগ্রেগেটর প্রতিষ্ঠান, যারা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রবাসীদের ডলার সংগ্রহ করে বাংলাদেশে পাঠায়, তারা এখানে প্রভাব বিস্তার কারার চেষ্টা করে থাকতে পারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের এক বক্তব্যেও এর ইঙ্গিত মিলেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে মুদ্রানীতি ঘোষণা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকেন্দ্রিক এগ্রেগেটর প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশের মুদ্রা বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে কি না? ওই প্রশ্নের উত্তরে আহসান এইচ মনসুর দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘যে যাই চেষ্টা করুক, আমরা কারো কাছে নত হবো না। আমাদের কাছে অনেকে অনেক ধরনের প্রস্তাব নিয় আসে। আমরা এগুলো স্পষ্টভাবে না করে দিয়েছি।’ এদিকে গুঞ্জন রয়েছে ভূরাজনৈতিক কারণেরও।

এ প্রসঙ্গে অর্থনীতি বিশ্লেষক মো. মাজেদুল হক বলেন, বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ চলছে। এই পরিস্থিতিতে চায়নার নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বাংলাদেশকে একশ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। এ বিষয়টি হয়তো ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্ষুব্ধ করতে পারে। আর এ কারণে আইএমএফ হয়তো বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিব্রত হতে পারে। কারণ, বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসনের বিষয়ে আইএমএফ সচেতনভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আইএমএফকে সরাসরি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করতে বলছেন। এতদিন সংস্থাটি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও ফেডারেল রিজার্ভের সঙ্গে যোগাযোগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। এই কারণগুলো বাংলাদেশের ঋণের কিস্তি প্রাপ্তিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারনা ওই অর্থনীতি বিশ্লেষকের।

জানা গেছে, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বৈদেশিক দেনার চাপ সামাল দিতে ২০২২ সালে আইএমএফের দারস্থ হয় বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাত কিস্তিতে এই ঋণ দেওয়ার কথা। যথাসময়ে প্রথম তিন কিস্তির ২৩১ কোটি ডলার ঋণ পায় বাংলাদেশ। সর্বশেষ কিস্তি পায় ২০২৪ সালের জুনে। চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল ডিসেম্বরে। কিন্তু নানা শর্তে সেই ঋণ আটকে যায়।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করলে চলতি বছরের মার্চে ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাবে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় ঘোষণা আসে, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একত্রে চলতি বছরের জুনে দেওয়া হবে। এ নিয়ে আলোচনার জন্য গতমাসে বাংলাদেশে আসে আইএমএফ মিশন। ওই সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায়, বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকের অবসরে আবারও আলোচনা হওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ছাড়ে সংস্থাটির প্রতিনিধি দল। ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বৈঠকের অবসরে আইএমএফ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনার টেবিলে বসেন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। 

ওই আলোচনায় দুই পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় বাংলাদেশে ফিরে পৃথক বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্ট ও গভর্নর বলেছেন, শর্ত মেনে আইএমএফের ঋণ নিতেই হবে এমন অবস্থানে নেই বাংলাদেশের অর্থনীতি।

এদিকে আইএমএফের ঋণের শেষ দুই কিস্তি না পেলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। বৈদেশিক মুদ্রার সংকট, রিজার্ভের চাপ এবং আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্যহীনতার প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়া বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সংস্থাটি ঋণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাংলাদেশের ঋণমান (ক্রেডিট রেটিং) কমে যেতে পারে। এতে আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং লেনদেন ব্যাহত হতে পারে। আমদানি-রপ্তানি ঋণপত্রের (এলসি) খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)সহ অন্যান্য দাতা সংস্থা থেকে ঋণ প্রাপ্তি কঠিন হতে পারে। তবে ভিন্ন মতও আছে। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, আইএমএফের ঋণ স্বল্পমেয়াদে সহায়তা করলেও এর শর্ত যেমন বিভিন্ন খাতে সরকারি ভর্তুকি কমানো, সুদের হার বাড়ানোর মতো বিষয়গুলো সাধারণ মানুষকে দীর্ঘমেয়াদে কষ্টে ফেলতে পারে। তারা সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ আইএমএফের ঋণ নেওয়ার পর সংকটে পড়েছিল, যা বাংলাদেশকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
 যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিলেন হাসনাত

যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিলেন হাসনাত

 বৌদ্ধ পূর্ণিমায় সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

বৌদ্ধ পূর্ণিমায় সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে

 দেশের বাজারে সোনার দাম কমলো

দেশের বাজারে সোনার দাম কমলো

সংশ্লিষ্ট

দেশের বাজারে সোনার দাম কমলো

দেশের বাজারে সোনার দাম কমলো

১৭ ও ২৪ মে খোলা থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

১৭ ও ২৪ মে খোলা থাকবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান

ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

ইসলামী ব্যাংক সিকিউরিটিজের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

জনগণকে স্বস্তি দিতে নত হচ্ছে না ঢাকা

জনগণকে স্বস্তি দিতে নত হচ্ছে না ঢাকা