ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০১:৪০ পিএম
ছবি: ভোরের আকাশ
গাজীপুরের শ্রীপুরে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন বাহিনীর ৫টি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। এসময় তল্লাশি চালিয়ে একটি শর্টগান ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
এসব টর্চার সেলে বিনা অপরাধে মানুষকে এনে বেঁধে শারীরিক নির্যাতনের পর আদায় করা হতো মোটা অংকের টাকা। রাতভর চলতো মাদকের আড্ডা। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে করা হতো নির্যাতন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন মোটরসাইকেল যোগে দলবেঁধে চলাচল ছিলো সুমন বাহিনীর। পুলিশী অভিযানে অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক, নড়নল, কোষাদিয়া, বরকুল ও নান্দিয়া সাঙ্গুন গ্রামের ৫টি টর্চার সেল ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। টর্চার সেলগুলো থেকে একটি শর্টগান ও দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোঁটা উদ্ধার করেছে পুলিশ।
সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা যায়, বরমী ইউনিয়নের পাঠানটেক গ্রামে একটি টিন শেডের একটি ঘরে রয়েছে কাঠের ফার্নিচার, চেয়ার টেবিল, বাঁশ কাঠ। ইউনিয়নের বড়নল গ্রামের বাঁশতলা এলাকায় টর্চার সেলে রয়েছে একটি চৌকি, চৌকির চারপাশে রঙিন কাপড়ে ঢেকে রাখা রয়েছে। বিছানো রয়েছে তোষক। চৌকির উপরে কাঠের সঙ্গে বাঁধা রয়েছে রশি। ঘরের ভেতর এক কোণে রয়েছে বাঁশের লাঠি লোহার পাইপ। একই গ্রামের অপর একটি টর্চার সেল নির্জন স্থানে মতির বাড়ী। একটি টিন শেডের ঘরে রাতভর চলে মাদকের আড্ডা। ঘরের ভেতর সুকেচ ডেসিন টেবিল খাট রয়েছে। বিভিন্ন হোটেল রেস্তোরাঁর খাবার প্যাকেট রয়েছে প্রচুর। পাশে পরে ছিলো ফেনসিডিলের খালি বোতল।
কাওরাইদ ইউনিয়নের ত্রিমোহনী ব্রিজের নিচে কলাবাগানে রয়েছে সুমন বাহিনীর আরও একটি টর্চার সেল। সেখানে নিয়ে বহু মানুষকে নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও বরমী বাজারের কাঠ মহলে কালো কাপড়ে ঢেকে নির্যাতন করা হতো মানুষকে।
বরকুল গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছেলে সিএনজি চালক সুরুজ মিয়া বলেন, ২০২২ সালে সুমন বাহিনীর সদস্য রাসেল পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পরপরই আমাকে দোষারোপ করতে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় সুমন বাহিনী আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় পাঠানটেক গ্রামের চিতাশালের পিছনে তাদের টর্চার সেলে। সেখানে নিয়ে দুটি লোহার রডের সঙ্গে হাত বাঁধা হয়। এরপর শুরু করে নির্যাতন। অজ্ঞান হওয়ার পর পানি ঢেলে জ্ঞান ফেরানোর পর আবার নির্যাতন চালায়। এক পর্যায়ে গলায় ধারালো ছুরি ধরে স্বীকারোক্তি আদায় করে। বাবা বাবা বলে তাদের নির্যাতন থেকে মুক্তি মেলেনি। ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। জীবন বাঁচানোর জন্য ৪০ হাজার টাকায় মুক্তি পায়। এক সপ্তাহ ঘরে আবদ্ধ করে রাখে তাকে। নির্যাতনের কারনে কিছুদিন ওঠে দাঁড়াতে পারিনি তিনি।
মোক্তার হোসেন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ২০২৪ সালে আমাকে মোটরসাইকেল যোগে বড়নল গ্রামের বাঁশতলা এলাকার টর্চার সেলে নেয়। হাত-পা বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন। এরপর চাওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। দিতে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এরপর আমার স্ত্রী পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে আমাকে উদ্ধার করে আনে। পুলিশ আসার খবর পেয়ে সুমন বাহিনী পালিয়ে যায়। আজও সেই টর্চার সেল রয়েছে।
ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান বলেন, সামান্য তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুমন বাহিনী আমাকে তুলে নেয় কলেজের পশ্চিম পাশে একটি ঘরে। সেখানে নিয়ে রশিতে আমাকে বাঁধা হয়। হাত পা বেঁধে পায়ের কাছে দেয় কয়েকজন। এরপর আমাকে ইচ্ছেমতো কিল ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। শুধুমাত্র আমার অপরাধ একজনের টাকার জামিন হয়ছি। এরপর বাড়িতে খবর পাঠিয়ে টাকা দিলে মুক্তি মিলে।
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, সুমনরা পাঁচ ভাই। তাদের সবাই সন্ত্রাসী। এলাকার মানুষ তাদের অনেক ভয় পায়। সবার বড় খোকন শেখ সে বরমী বাজার নিয়ন্ত্রণসহ মাইক্রোস্ট্যান্ড, বাসস্ট্যান্ডে নিয়ন্ত্রণ করতো। যদিও তার কোন বাস মাইক্রোবাস ছিলো না। রোকন শেখ মাদকের গডফাদার। সে আশপাশের এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণ করতো। সুমন শেখ তার নামের পাঁচ ভাই ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। রাজিব রাসেল দুইভাই বরমীসহ আশপাশের এলাকায় রামরাজত্ব কায়েম করে। মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করে। বালু মহাল ইট ভাটা জবরদখলে নেতৃত্ব দেয় তারা।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, গ্রেপ্তারকৃত সুমন শেখদের কয়েকটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়ে সেগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। টর্চার সেলগুলো থেকে একটি বন্দুক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কৌশলগত কারনে আপাতত নাম প্রকাশ করা যাবে না।
ভোরের আকাশ/তা.কা