ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক
এম. সাইফুল ইসলাম
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫ ০২:০৩ এএম
রাজনৈতিক কৌশলেই অংশ নেয়নি জামায়াত
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় পর্যায়ের বৈঠকে গতকাল অংশ নেয়নি জামায়াত ইসলামী। এই অংশ না নেয়াকে রাজনীতির কৌশল হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকগন। অনেকেই বলছেন, লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে অসন্তোষ রয়েছে জামায়াতের। আবার অনেকে বলছেন,নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলে সরকারকে চাপে রেখে নিজেদের হিসাব-নিকাশ বুঝে নিতে চায়। অনেকের ধারণা এটি সরকার ও জামায়াতের বিশেষ কোনো কৌশলও হতে পারে।
জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, আমরা আজকের সংলাপে অংশ নেয়নি। অংশ নেবে কি না সে বিষয়ে দলের নায়েবে আমির ডা. আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আব্দুল লতিফ মাসুম দৈনিক ভোরের আকাশকে বলেন, বৈঠকে না যাওয়া নিয়ে নানা কারণ থাকতে পারে। নির্দিষ্ট করে বলাটা কঠিন। তবে, লন্ডন বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে সরকার যে একটি দলকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে সেটি পাবলিকলি প্রমাণের দরকার ছিল না। সেটি পাবলিখলি হয়ে গেছে। যা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারে। জামায়াত হয়তো সেই জায়গা থেকে ভেবে বৈঠকে অংশ নেয়নি।
তিনি বলেন, ওই বৈঠকের পর যে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে সেখানেও কিছুটা হলেও ভাঙন ধরেছে। যদিও বিএনপি সবচেয়ে বড় দল। তারপরও বিষয়টি অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। সরকার এ বিষয়েটিতে আরো কৌশলী হয়ে সামলাতে পারতো।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দিনের সংলাপে জামায়াতের অনুপস্থিতিকে বয়কট বলা যাবে না। তারা আজ বুধবার বৈঠকে যোগ দেবেন বলে নিশ্চিত করেছেন দলটির নেতারা। তবে মঙ্গলবার কেন যোগ দেয়নি সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কারণ জানায়নি।
লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার যৌথ বিবৃতির নিয়ে জামায়াত ও এনসিপি’র উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, এতে সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয় না। এটা সব দেশেই আছে।
জানা গেছে, রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের মুলতবি বৈঠক শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ের আলোচনায় অনেক বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য হলেও মৌলিক সংস্কারের কিছু প্রস্তাব নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। সেসব প্রস্তাবে ঐকমত্যে পৌঁছাতে গত ২ জুন দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। পরের ৩ জুন দিন বিষয়ভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্যায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
তিনটি বিষয়ে (সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন ও নারী প্রতিনিধিত্ব) আলোচনার পর ওই দিন অধিবেশন মুলতবি করা হয়। সেই মুলতবি বৈঠক গতকাল শুরু হলেও হয়েছে। সেখানে অংশ নেয়নি জামায়াত ইসলামী।
অনেকেই বলছেন, নিরপেক্ষাতার প্রশ্ন তুলে সরকারকে চাপে রেখে দাবি-দাওয়া আদায় করতে চায় জামায়াত। এছাড়া নিজেদের দলের অবস্থান জানান দেওয়ারও বিষয়ও এখানে রয়েছে। আবার কেউ মনে করছেন, এটি সরকার ও জামায়াতের বিশেষ কৌশল হতে পারে। তারা বলছেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই।
সংস্কার প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয় এবং গত ২০ মার্চ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করে কমিশন। গত ১৯ মে পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, সিপিবি, নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে আলোচনা করেছে কমিশন। সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ৩ জুন।
ভোরের আকাশ/এসএইচ