চীন-যুক্তরাষ্ট্র স্নায়ুযুদ্ধ
নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১২:৩৫ এএম
ছবি: সংগৃহীত
দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে বিশ্ব মোড়ল চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ। চলছে পরস্পরের প্রতি হুমকি ও শক্তি প্রদর্শন। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাজোটের বিরুদ্ধে ভারত, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে নিয়ে নতুন বলয় গড়ছে চীন। শুধু তাই নয়, প্রতিপক্ষ শক্তির সঙ্গে বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কূটনৈতিক সখ্যতা গড়তে আগ্রহী যেকোনো দেশকে সতর্কবার্তা দিতেও দ্বিধা করছে না চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে চরম বিপাকে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণ, দুটি দেশকেই বাংলাদেশের সমানভাবে দরকার রয়েছে।
চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন অঘোষিত জোটের বিপরীতে রয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। গড়ে উঠছে নতুন মেরুকরণ। একটি কৌশলগত ও প্রতিরোধমূলক নিরাপত্তা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও)। তিন মহারথী চীন, রাশিয়া ও ভারত-এই প্ল্যাটফর্মের প্রাণ। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ‘নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশনের (ন্যাটো) বিকল্প হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা জাগাচ্ছে এসসিও।
সম্প্রতি সমাপ্ত হওয়া ‘এসসিও’ সম্মেলনে চীন ও রাশিয়া নানাভাবে এটাকে ‘ন্যাটো’ এর বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে এই সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। আর এই মোড়ল দেশগুলোর মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতার বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। কিন্তু চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের বলয়কেন্দ্রিক স্বার্থ ও সিদ্ধান্ত অনেকটাই সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশকে বিব্রত পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বতা : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ স্বার্থ রয়েছে। দেশটির মূল রপ্তানি পণ্য রেডিমেড গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাকের একক বৃহত্তম বাজার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র (ব্লক হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন)। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ, বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য জিএসপি-সুবিধা বহাল ও সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি স্থানান্তর, গবেষণা সহযোগিতা, গভীর সমুদ্রেসম্পদ আহরণ-এসব বিষয়ও রয়েছে। এসব বিবেচনায় অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থ সুরক্ষা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন, আন্তসীমান্ত মাদক চোরাচালান ও মানব পাচার রোধ, মিয়ানমার ও ভারতীয় সীমান্তে নানামুখী হুমকি ও অস্থিরতার মতো ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য কৌশলগত মিত্র হয়ে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে শক্তি-সাহস জোগান দিতে পারে।
বাংলাদেশের কাছে চীনের গুরুত্ব : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ চীনের বন্ধুত্ব ৫০ বছরের। দুদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে কখনো ভাটা পড়েনি, উল্টো দিন দিন গভীর হয়েছে অংশীদারত্ব। চীন বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার এবং অবকাঠামো খাতে অন্যতম বৃহৎ বিনিয়োগকারী। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় বাংলাদেশের বন্দর, সেতু ও বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে চীনের অর্থায়নে। এ বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরের সময় চীন বাংলাদেশকে মোট ২ দশমিক ১ বিলিয়ন মূল্যের ঋণ, বিনিয়োগ ও অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ভূ-রাজনীতি ও বাংলাদেশ : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের নানামুখী কূটনৈতিক ও কৌশলগত তৎপরতায় উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোরালো রাজনৈতিক সমর্থন, বন্দর ও পানি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হওয়া, সর্বোপরি বিএনপিসহ ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে টেকসই অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বেইজিং।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের এই তৎপরতাকে মার্কিন নীতিনির্ধারকরা আগ্রাসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে যা তাদের ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থের জন্য বড় হুমকি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এবং অন্যান্য কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা বাংলাদেশকে জানানোর পাশাপাশি চীনের প্রভাব বলয় থেকে ঢাকাকে বেরিয়ে আসতে নানাভাবে চাপ তৈরি করছে ওয়াশিংটন। সম্প্রতি ট্রেড নেগোসিয়েশনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার পেছনে চায়না ফ্যাক্টরই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। ট্রেড নেগোসিয়েশনের সময়ে চীন থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কমানোর জন্য বাংলাদেশকে রীতিমতো চাপ দেওয়া হয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে সচেতন রয়েছে চীন।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এ ব্যাপারে বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢাকার সঙ্গে জোরালো অংশীদারত্ব অব্যাহত রাখবে বেইজিং। তিনি বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশকে তার প্রকৃত বন্ধু চিনে নেওয়ার।
কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অঞ্চলে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাংলাদেশকে জটিল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছে। চীন তার বেন্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের দেশগুলোকে তাদের বলয় করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিযোগী দুই পরাশক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য রীতিমতো চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
বিষয়টি স্বীকার করে পররষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কূটনৈতিক আমার দেশকে বলেছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি অবস্থান এবং বাংলাদেশের জন্য তৈরি হওয়া চ্যালেঞ্জের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায় রয়েছে বলে মনে করছেন কোনো কোনো বিশ্লেষক।
বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) এম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থান তুলে ধরতে পারেনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা কিছুটা লুকোচুরি করেছে। যার ফলে পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান জোট নিয়ে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট নয়।
এদিকে বাংলাদেশে প্রভাব বিস্তারে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি অবস্থান এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান বলেছেন, ‘সাময়িক অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের কথা বিবেচনা করে আমাদের অবশ্যই চীনের দিকে ঝুঁকতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা পাকিস্তান মডেলকে অনুসরণ করতে পারি। তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর।
তিনি বলেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র একটি এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। অন্যদিকে চীনেরও একটি এজেন্ডা রয়েছে। বাংলাদেশের উচিত হবে না কারো এজেন্ডার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়া। বরং দুই দেশের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া উচিত বাংলাদেশের।’
জে-১০ সি ফাইটার জেট কেনার প্রস্তাব মার্কিন প্রশাসনে উদ্বেগ তৈরি করে। এ ব্যাপারে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুনেছি বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান কিনতে যাচ্ছে। এটা যদি সত্য হয় তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ। বাংলাদেশ কেন এই মুহূর্তে জে-১০ সির মতো যুদ্ধ বিমান কিনতে যাচ্ছে তা একটি বড় প্রশ্ন।
তিনি আরো বলেন, এটা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ।
এদিকে গত ১৯ জুন চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- বাণিজ্য, বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য একটি ত্রিদেশীয় ফোরাম গঠনের জন্য একমত হয়েছে তিন দেশ। এই খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই ধরনের কোনো ফোরাম গঠনের কথা অস্বীকার করা হলেও বিষয়টি নিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে রীতিমতো ব্যাখ্যা চেয়ে বসেন।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মার্কিন দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা এসে বৈঠক করে গেছেন। ত্রিদেশীয় জোটের ব্যাপারে তারা তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এখানে ঠিক কি হচ্ছে তা জানতে চান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয়, বিষয়টি পত্রপত্রিকায় যেভাবে এসেছে আসলে বিষয়টি তেমন নয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কৌশলগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক ও অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে অব্যাহত তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে চীন। বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠকের পাশাপাশি দলগুলোর নেতৃবৃন্দকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। তবে চীন ইস্যুতে ইউনূস সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে দ্বিধা করছে না মার্কিন প্রশাসন। বহুল আলোচিত ট্রেড নেগোসিয়েশনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নানা শর্ত মেনে চুক্তি করতে না পারলে আগামী ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর মনে করছেন, ট্রেড নেগোসিয়েশনে যা আলোচনা হচ্ছে সেখানে ট্রেডের তুলনায় ভূ-রাজনীতিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা-ওয়াশিংটন ট্রেড নেগোসিয়েশনে থার্ড পার্টি হিসেবে চীন বসে আছে। সাদা চোখে সেটা হয়তো দেখা যাচ্ছে না।
একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়েছে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে বাংলাদেশকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি চীন থেকে আমদানি কমাতে হবে। বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে চীনা নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে আসতে ঢাকার ওপর ওয়াশিংটনের চাপ বাড়ছে। বাংলাদেশের বন্দর, জেটি এবং জাহাজে ব্যবহৃত চীনের তৈরি লজিস্টিকস সিস্টেম ‘লগিঙ্ক’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে চীনের প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি নিজেদের প্রভাব বজায় রাখতে জোরালোভাবে তৎপর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর মার্কিন কূটনীতিকদের তেমন কোনো তৎপরতা চোখে পড়েনি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন কূটনীতিকদের ব্যাপক তৎপরতা দৃশ্যমান। সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে নিয়মিত মতবিনিময় করছেন মার্কিন কূটনীতিকরা।
চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা এবং মার্কিন প্রশাসনের উদ্বেগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াং ওয়েন বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে ঢাকার সঙ্গে জোরালো অংশীদারত্ব বজায় রাখবে বেইজিং। বাংলাদেশের সামনে সময় এসেছে তাদের প্রকৃত বন্ধু চিনে নেওয়ার।
বাংলাদেশ প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্র-চীন কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন নেগোসিয়েশনের নামে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে যা করছে তাকে কোনোভাবেই কূটনীতিক বলা যাবে না। এটা স্রেফ মাস্তানি। তারা রীতিমতো হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের সাময়িক অসুবিধা হলেও দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঝুঁঁকতে হবে।
তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, ভূ-রাজনীতি খুব দ্রুত বদলাচ্ছে। তাই যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে খুবই সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন আলাদা আলাদা এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। কারো এজেন্ডার সঙ্গেই বাংলাদেশের সরাসরি যুক্ত হওয়া ঠিক হবে না। দুই দেশই আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। তারা অনেক কিছুই চাইবে। কিন্তু আমরা সবকিছু দিতে পারব না। এই বিষয়টি দুই দেশকেই আমাদের সততার সঙ্গে জানানো উচিত। তাদের বলা উচিত আমরা এতটুকু করতে পারব, বাকিটা পারব না।
বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আমাদের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
ভোরের আকাশ/এসএইচ