× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

৯ মাসে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন

দুর্ভোগে ঢাকার জনজীবন

আকতার হোসেন

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ০৮:৪৯ এএম

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মেগাসিটি রাজধানী ঢাকায় যানজট নিত্যদিনের চিত্র। দৈনন্দিন প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষ যানজট, গাড়ির হর্নে ত্যক্ত-বিরক্ত। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের যৌক্তিক-অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের ভোগান্তি। একটা সময় জাতীয় প্রেস ক্লাব, কখনো শাহবাগকেন্দ্রিক আন্দোলন কর্মসূচি হলেও এখন যেন তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো নগরজুড়ে। যার যখন যেভাবে খুশি সড়কে বসে পড়ছেন দাবির লম্বা তালিকা নিয়ে।

বিশেষ করে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দাবি আদায়ের মিছিলে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়েছে ঢাকার রাজপথ। অর্থাৎ, রাজধানী ঢাকা রীতিমতো দাবির শহরে পরিণত হয়েছে। ছোট-বড় যে কোনো ইস্যুতে মুহূর্তেই উত্তাল হয়ে উঠছে রাজপথ। প্রায় প্রতিদিনই হচ্ছে মিছিল, সমাবেশ, অবরোধ, ঘেরাও ও আলটিমেটাম দেওয়ার মতো কর্মসূচি। শুধু রাজপথই নয়, প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরও এর বাইরে নেই। এসব কর্মসূচি ঘিরে ব্যস্ততম নগরীজুড়ে সৃষ্টি হচ্ছে একরকম অচলাবস্থা। যানজট যেন নগরবাসীর নিত্যদিনের সঙ্গী। চরমে উঠেছে জনকষ্ট।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র। কখনো থেমে থেমে আবার কখনো বিরতিহীনভাবে পালিত হয় এসব কর্মকাণ্ড। কিন্তু একরকম নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। যদিও এগুলো থামাতে একাধিকবার দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। আন্দোলনকারীদের দমাতে রবার বুলেট, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, লাঠিচার্জসহ নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। কিন্তু আসেনি কোনো ইতিবাচক ফল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, ঠিক তখনই চাপের মুখে নতি স্বীকার করছে সরকার। তড়িঘড়ি করে মেনে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ দাবি। 

অথচ আন্দোলনের শুরুতে উদাসীনতা না দেখিয়ে সহজেই করা যেত সমস্যার সমাধান। আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনে তেমন কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। ফলে পরিস্থিতি শান্ত হচ্ছে না। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠান। আবার উত্তপ্ত হচ্ছে রাজপথ। এমন হযবরল অবস্থা যেন রাজধানীর ‘স্থায়ী সংস্কৃতি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সবশেষ গতকাল একাধিক আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। এদিন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তার অনুসারী আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ছাত্রদল।

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করছেন গার্মেন্ট শ্রমিকেরা। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাতিল ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা।

৯ মাসে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) হিসাবে, ঢাকায় গড়ে প্রতিদিন কমপক্ষে তিনটি আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। সে হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে পাঁচ শতাধিক আন্দোলন হয়েছে ঢাকার বুকে। আন্দোলনে যুক্ত সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবীরা যেমন রাস্তায় দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন, সমান গতিতে সরকারি চাকরিজীবীরাও দফতরের ভেতরে-বাইরে আন্দোলন করে নগরবাসীর দুঃখ বাড়াচ্ছেন। ডিএমপির পক্ষ থেকে দুর্ভোগ এড়ানো এবং নিরাপত্তার স্বার্থে আন্দোলন না করতে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, এলাকা নির্দিষ্ট করে দফায় দফায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও আন্দোলনকারীদের থামাতে যাচ্ছে না।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ঢাকায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলন করেছে। কেউ সফল হয়েছে। কেউ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশনে নিবৃত হয়েছে। কেউ আবার সরকারি নিয়ম ভেঙে চাকরিচ্যুতও হয়েছেন। তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত আগস্টে নতুন সরকার দায়িত্বে আসার পর থেকে অটোরিকশা থেকে শিক্ষার্থীদের অটোপাস, আনসার থেকে চাকরিচ্যুত পুলিশ।

নিয়োগ বঞ্চিত বিসিএস ক্যাডার থেকে বিদ্রোহে যোগ দেওয়া বিডিআর সদস্য কিংবা সাত কলেজ পৃথকীকরণ থেকে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন দেখেছে ঢাকার রাজপথ। কখনো আবার পলিটেকনিক্যালের শিক্ষার্থীদের অবরোধ, কখনো হয়েছে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন। রেলের কর্মচারীরা আন্দোলন করতে গিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে গত ৯ মাসে। মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কিছুটা সহনীয় অবস্থা দেখা গেলেও বেশ কিছুদিন ধরে আবারও উত্তাল ঢাকা। সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলোচনায় ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। এই কর্মসূচি ঘিরে বিএনপি একেবারে চুপচাপ থাকলেও এনসিপি, জামায়াত, শিবির ও ধর্মভিত্তিক একাধিক দলের ব্যাপক সমর্থক মাঠে ছিলেন।

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা থেকে শুরু করে এক পর্যায়ে সড়কে সমাবেশ, পরবর্তী সময়ে শাহবাগ অবরোধের মধ্য দিয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠে সেই আন্দোলন। একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায় সরকার। আওয়ামী লীগ নিয়ে আন্দোলন শেষ না হতেই দেশের সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে মাঠে নামে নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে তারা। এক পর্যায়ে সড়ক ছেড়ে যায় এসব আন্দোলনকারী।

অন্যদিকে ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে গত সপ্তাহে রাজধানীর কাকরাইল মোড় অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। যমুনার দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় বুধবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয় পুলিশের। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ওই কর্মসূচিকে ঘিরে উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ওপর বোতল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। আন্দোলন রূপ নিয়ে ভিন্ন দিক। অবশেষে শুক্রবার তাদের দাবি মেনে নেওয়ায় গণঅনশন ভেঙে ক্লাসে ফিরে যান শিক্ষার্থীরা। মাঝে অবশ্য ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে মার্চ টু গাজার কর্মসূচিতে মানুষের ঢল নামে। ইসরায়েলের বর্বোরচিত হামলার এই প্রতিবাদে অবশ্য মানুষের অংশগ্রহণ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত।

এদিকে সবশেষ গতকাল একাধিক আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে ঢাকা। এদিন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তার অনুসারী আন্দোলনকারীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ছাত্রদল।

বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করছেন গার্মেন্ট শ্রমিকেরা। ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাতিল ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা।

এর আগে গত রোববার চাকরিচ্যুত সেনাসদস্যদের জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি, দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে ইশরাকের শপথের ব্যবস্থা করাতে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ, সাম্য হত্যার বিচারের দাবিতে শাহবাগ থানা ঘেরাও, শাহবাগ মোড় অবরোধ এবং অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে খুনিদের খুঁজে বের করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় সাদা দল।

এছাড়া জাতীয়করণের দাবিতে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি, বেতনের দাবিতে মাউশি ঘেরাও, বিজয়নগরে বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের ঘোষণা না দিলে দেশ অচলের ঘোষণা শ্রমিকদের, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের কাফনের কাপড় নিয়ে মিছিল, হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। সবমিলিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য স্পষ্টতই সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ও অদক্ষতা প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে নগরবাসীকে জিম্মি করে দিনের পর দিন চলছে আন্দোলন। অন্যদিকে দিনভর মাইক ব্যবহার করে স্লোগানে মুখরিত করে তোলায় বাড়ছে শব্দ দূষণও। আবার জুলাই অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে নানা কারণে মনোবল ভেঙে যাওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও বেগ পেতে হচ্ছে এসব আন্দোলন সামাল দিতে। আন্দোলন থামাতে গিয়ে বিভিন্ন বাহিনীর জনশক্তি বাড়াতে হচ্ছে, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নগরীর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা দেখভালে প্রভাব পড়ছে বলে জানা গেছে।

নগরবাসীরা বলছেন, গত ১৬ বছর যারা চুপ ছিলেন তারা নতুন সরকার আসার পর নিজেদের স্বার্থ আদায়ে বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। অন্যদিকে সরকারও আন্দোলনকারীদের ছাড় দিয়ে কিংবা দ্রুত দাবি পূরণ করায় অন্যরাও উৎসাহিত হচ্ছেন।

আর নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, নগরীতে সভা-সমাবেশ করার ক্ষেত্রে আইন আছে। আবার নীরব এলাকায় বিকট শব্দে মাইক বাজানোর ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আছে। এসব বিষয়ে আয়োজকদের অসচেতনতা এবং আইনের কঠিন প্রয়োগ না হওয়ার কারণে দিনের পর দিন এভাবে চলে আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই কঠোর হতে হবে।

ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি ইশরাক সমর্থকদের : বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর মধ্য দিয়ে গতকালের মতো কর্মসূচি শেষ করেছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে ঢাকা অচলের মতো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে নগর ভবনের সামনে অবস্থিত অস্থায়ী মঞ্চ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান এ ঘোষণা দেন।

মশিউর রহমান বলেন, আজ বুধবার সকাল ১০টায় নগর ভবনের সামনে আমরা হাজির হবো। দাবি না মানলে অবস্থা বুঝে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা জাতির সঙ্গে প্রতারণা, গণতন্ত্রের সঙ্গে প্রতারণার শামিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল সোমবার এই উপদেষ্টা ফেসবুক পোস্টে বলেন, গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে।

এ সময় কর্মসূচি ঘোষণার মঞ্চে এই আন্দোলন ও দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। ইউনিয়নগুলো আজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে দাবি মানা না হলে এর পর থেকে পরিচ্ছন্নতাসেবা, ময়লা পরিবহনসেবা, বিদ্যুৎ সেবাসহ সব ধরনের নাগরিক সেবা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়। সংগঠনগুলো হলো স্ক্যাভেঞ্জার অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, পরিবহন চালক ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি, ৪র্থ শ্রেণি কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতি।

ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র পদে শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে গত বুধবার থেকে আন্দোলনে নেমেছেন তার সমর্থকেরা। এরই ধারাবহিকতায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এই আন্দোলনের ফলে বন্ধ রয়েছে ডিএসসিসির সব নাগরিক সেবা। সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন অনেক মানুষ।

সাম্য হত্যার বিচার চেয়ে ছাত্রদলের শাহবাগ অবরোধ, তীব্র যানজট : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্যর হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছে ছাত্রদল। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে অবরোধ করেন। অবরোধের ফলে শাহবাগ মোড় দিয়ে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অবরোধ স্থলে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন নাসির উপস্থিত রয়েছেন। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘বিচার চাই বিচার চাই, সাম্য হত্যার বিচার চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।

গত ১৩ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার মৃত্যুর পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ এবং প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন ছাত্রদল নেতারা। প্রতিদিনই তারা কর্মসূচি পালন করছেন। সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। এর আগে তারা আরেকদিন দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করে সাম্য হত্যাকাণ্ডে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বিচারে দাবি জানান। এ সময় যমুনা ঘেরাওয়ের হুমকিও দেন তারা।

যমুনা অভিমুখে পোশাকশ্রমিকদের মিছিল, পুলিশি বাধায় কাকরাইলে অবস্থান : বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করছেন গার্মেন্ট শ্রমিকেরা। গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। তবে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। পরে সেখানেই তারা অবস্থান নেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে থেকে শ্রমিকেরা মিছিল বের করেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তারা ‘যাব না রে, যাব না, বেতন ছাড়া যাব না’, ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও, নইলে গদি ছাইড়া দাও’ নানা স্লোগান দেন।

টিএনজেড গ্রুপের বেতন বোনাসের দাবি আদায়ের শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৯ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমাদের কথা হয়েছে। তারা আমাদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু বেতন বুঝিয়ে দিতে পারেননি। ফলে আজকে আমরা বাধ্য হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের অভিমুখে এসেছি। বেতন নেওয়া ছাড়া আমরা এখান থেকে যাব না।’

শ্রমিকেরা জানান, টিএনজেড গ্রুপের কাছে তাদের পাওনা ৫৪ কোটি টাকা। ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রত্যেক শ্রমিক ৯ হাজার ১০০ টাকা পান। বাকি টাকা গত মাসের ৮ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা টাকা পাননি। 

ড্যাপ বাতিলের দাবিতে ভূমি মালিকদের রাজউক ঘেরাও : ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাতিল ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করেছেন ঢাকার বিভিন্ন স্থানের ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা। তারা বলেন, যে ড্যাপ কৃষি জমি ধ্বংস করে, জলাধার ধ্বংস করে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনে সেই ড্যাপ বাতিল চাই। আমাদের দাবি আদায় না হলে রাজপথ ছেড়ে যাব না। এ সময় সেখানে ভূমি মালিক, প্রকৌশলী, আবাসন খাত সংশ্লিষ্টসহ কয়েক হাজার ব্যক্তি অবস্থান নেন।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টার দিক থেকে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত রাজউকের প্রধান কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালনকালে এসব দাবি জানান তারা। দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনসহ কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন, রাজউক একই এলাকায় ভবন নির্মাণে বৈষম্য করছে এবং এটি দুর্নীতির আখড়া। তারা ভূমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই নতুন আইন প্রণয়নের সমালোচনা করেন।

ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ বলেন, নতুন ড্যাপের কারণে ভূমি মালিকরা ভবন নির্মাণে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে পাড়া-মহল্লার রাস্তাঘাটগুলো অপ্রশস্তই থাকছে। ফাঁকা জায়গা, সেমিপাকা জায়গা, জরাজীর্ণ ভবনগুলো অস্থাস্থ্যকর অবস্থায় থেকে যাচ্ছে। সেখানে মাদকসেবন এবং অবৈধ কার্যকলাপসহ পরিবেশ বিপর্যয়কর ও অসামাজিক কাজ হয়ে থাকে। ঢাকা শহরের ৮০% এলাকাকে অপরিকল্পিত রেখে নগরবাসীকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা ও উত্তরা ছাড়া ঢাকা শহরের সব জায়গায় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে উচ্চতা এবং আয়তন প্রায় ৫০% কমিয়ে দেওয়া হয়। এভাবে জনগণের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেজাউল হোসেন বলেন, রাজউক জনস্বার্থের পরিপন্থী আইন তৈরি করছে এবং অর্থের বিনিময়ে নকশা অনুমোদন করছে। গুলশান ও বারিধারার জন্য এক আইন এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ভিন্ন আইন বৈষম্যমূলক। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকেরা কৃষিজমি ধ্বংসকারী ও জলাধার আইন ভঙ্গকারী ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাতিলের দাবি জানান। তাদের দাবি না মানলে রাজউকের চেয়ারম্যানের পদত্যাগও দাবি করেন তারা।

আন্দোলনকারীরা বলেন, দাবি আদায় না হলে লাখ লাখ জমির মালিক নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। নতুন ড্যাপের কারণে দুই লক্ষাধিক ভূমি মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অ্যাসোসিয়েশন দাবি করেছে। এর আগেও তারা কয়েকবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছেন।

ভোরের আকাশ/এসএইচ

  • শেয়ার করুন-
জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা

জবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা

তেজগাঁও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

তেজগাঁও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ

 আগামী মাসে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে: গভর্নর

আগামী মাসে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে: গভর্নর

সংশ্লিষ্ট

আ.লীগের দোসর ৯৪ আমলা চিহ্নিত

আ.লীগের দোসর ৯৪ আমলা চিহ্নিত

আরেক দফা ব্যয় বাড়লো রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পে

আরেক দফা ব্যয় বাড়লো রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পে

‘অস্বাস্থ্যকর’ তালিকাতেই আবদ্ধ ঢাকা!

‘অস্বাস্থ্যকর’ তালিকাতেই আবদ্ধ ঢাকা!

দুর্ভোগে ঢাকার জনজীবন

দুর্ভোগে ঢাকার জনজীবন