৩১ মে'র মধ্যে অপসারণের আল্টিমেটাম
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১১:৩১ এএম
আ.লীগের দোসর ৯৪ আমলা চিহ্নিত
সচিবালয়ে থাকা আওয়ামী লীগের দোসর আমলাদের তালিকা প্রকাশ করেছে ‘জুলাই ঐক্য’। মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘সচিবালয়ে ও প্রশাসনে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরে কর্মরত ৪৪ জন আমলার তালিকা এবং প্রশাসনের ৫০ জন কর্মকর্তার তালিকা প্রকাশ করে।
এ সময় তারা সচিবালয়ে কর্মরত আওয়ামী লীগের দোসরদের আগামী ৩১ মের মধ্যে চাকরিচ্যুতের দাবিসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে মার্চ টু সচিবালয় কর্মসূচি পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুলাই ঐক্য প্ল্যাটফর্মটির সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ।
প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয় এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে কর্মরত স্বৈরাচারের দোসর ৪৪ জন কর্মকর্তা হলেন- পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ; কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান; ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান (সচিব) মুহম্মদ ইব্রাহীম; আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবাররক; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. মুশফিকুর রহমান; অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. আব্দুর রহমান খান; অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান মজুমদার; পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. রুহুল আমিন; দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন; বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান; বিপিএটিসি সাইদ মাহবুব খান; বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মুকাব্বির হোসেন; স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান; জাতীয় উন্নয়ন প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) ড. মো. শহিদুল্লাহ; বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমির রেক্টর (সচিব) ড. মো. ওমর ফারুক; শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব এ.এইচ.এম শফিকুজ্জামান; জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান (সচিব) নাসরিন আফরোজ; বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) মোহাম্মদ জয়নুল বারী; সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান (চুক্তিভিত্তিক) মো. মুসলিম চৌধুরী; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন; মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশরাত চৌধুরী; বিশ্ব ব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক (সচিব) শরিফা খান; মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের; স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী; মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন; ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদেও সিদ্দিকী; পরিকল্পনা কমিশনের সিনিয়র সচিব এ এম আকমল হোসেন আজাদ; পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন; জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমির মহাপরিচালক (সচিব) সুকেশ কুমার সরকার; মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ; প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত সচিব মোহাম্মদ মাহমুদুল হোসাইন; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান; ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সাইদুর রহমান; যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মহম্মদ সাইফুজ্জামান; বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান ডক্টর লিপিকা ভদ্র; জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. আব্দুল কাইয়ূম; জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে চুক্তিভিত্তিক মহাপরিচালক সালেহ আহমেদ মোজাফফর; মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেয়া খান; জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ বশিরুল আলম; ওয়াশিংটন ডিসির ইকোনমিক মিনিস্টার মেহেদী হাসান; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুর রউফ; সরকারি কর্মচারী কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক কাজী এনামুল হাসান এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান।
লিখিত বক্তব্যে জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, গত ১০ মে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিকে সামনে রেখে গত ৬ মে ৩৫টি সামাজিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়ে জুলাই ঐক্যের আত্মপ্রকাশ হয়। বর্তমান ৮০টি সংগঠন জুলাই ঐক্যের শক্তি। আমাদের আত্মপ্রকাশের পর থেকে আওয়ামী নিষিদ্ধের দাবিতে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে জুলাই ঐক্য। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম যেভাবে নিষিদ্ধ করেছে তা আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করিনি। তারপর সরকারকে আমরা এই উদ্যোগের জন্য স্বাগত জানিয়েছি।
তিনি বলেন, সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে যে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে সে অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম এবং ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ সরকার নেয়নি। গ্যাজেট অনুযায়ী ১৪ দলের শরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। জুলাই-আগস্টে শুধু নয় গত সাড়ে ১৫ বছর সচিবালয়ের আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেভাবে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করেছিল তারা এখনো সচিবালয়সহ বিভিন্ন স্থান নিয়ন্ত্রণ করছে।
তিনি আরও বলেন, ২ হাজার প্রাণ ও ৩১ হাজার আহত ছাত্রজনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকার পেলেও আমাদের ব্যর্থতা বিপ্লবী সরকার গঠন করতে না পারা। যে সুযোগটি নিয়েছে আওয়ামী লীগের দোসররা। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন সহযোগিতা করছে কিছু আমলা ও প্রশাসনে থাকা কর্মকর্তারা। আমরা দেখেছি একদিন আগেও ঢাকার একাধিক স্থানে মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রশাসন যদি সবর থাকত তাহলে তারা এই মিছিল করতে সাহস পেত না। এখনো আওয়ামী লীগের অনেক এমপি মন্ত্রী দেশে আছে। সরকারের সেই আমলারাই তাদের সেফ এক্সিট দিচ্ছে। সর্বশেষ আব্দুল হামিদ তার প্রমাণ।
মোসাদ্দেক আলী বলেন, আমরা অনেক ধৈর্য ধারণ করেছি। আমরা দেখছি জুলাইয়ের শক্তিগুলোকে কীভাবে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। আমরা জুলাইয় ধারণ করে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছি। আমাদের বেঁচে থাকার একটাই উদ্দেশ্য, জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখা। জুলাই না বাঁচলে আমরাও বাঁচব না। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই জুলাইয়ের শক্তিদের নিয়ে আমাদের জুলাই ঐক্য। আমরা আজকে সচিবালসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান এবং জুলাই আগস্টের আন্দোলনের সময় যে সব ম্যাজিস্ট্রেট গণছাত্র-জনতার বুকে গুলি করেছে রক্তাক্ত করেছে আমার জন্মভূমি, আমরা তাদের আংশিক তালিকা প্রকাশ করেছি। এটা প্রাথমিক তালিকা। আমরা খুব শিগগিরই আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকল সেক্টরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পরবর্তী পদক্ষেপ তুলে ধরে জুলাই ঐক্যের সংগঠক এবি জোবায়ের বলেন, আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কালচারাল ফ্যাসিস্ট, শিক্ষাঙ্গন, চিকিৎসাঙ্গন, আইনাঙ্গন এবং গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সেক্টরে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের তালিকা প্রকাশ। সরকারের কাছে দাবিগুলো হচ্ছে- আগামী ৩১ মে এর মধ্যে তালিকায় উল্লিখিত সন্ত্রাসী দল আওয়ামী লীগের সকল দোসরদের বাধ্যতামূলক অবসর দিতে হবে। তিন সরকারি কর্ম দিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে দৃশ্যমান কাজের অগ্রগতি দেশের জনগণকে দেখাতে হবে। দেশের তথ্য পাচারকারী ছাত্রজনতার বুকে গুলি চালানো, নির্দেশকারী এবং সহযোগিতাকারী সকল আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরিবারসহ সকলের ব্যাংক হিসাব ও অবৈধ সম্পদ জব্দ করতে হবে। স্বৈরাচারের দোসর আমলা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আগামী ৩৬ শে জুলাইয়ের (৫ আগস্ট) মধ্যে এখন পর্যন্ত চিহ্নিত সকল স্বৈরাচারের দোসরদের শ্বেতপত্র সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। আইনের ১৩২ ধারার কারণে থানায় খুনি পুলিশদের নামে মামলা নেওয়া হয় না। আগামী ৩১ মে ২০২৫ খ্রি. মধ্যে এই ধারা বাতিল অথবা সংশোধন করতে হবে। আগামী ৩১ মে এর মধ্যে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রকাশ করতে হবে। তারা এখন কোথায় আছে এবং কত জন কার সহযোগিতায় দেশ ছেড়েছে তাদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ