ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫ ১০:১৭ এএম
আরেক দফা ব্যয় বাড়লো রামু-ঘুমধুম রেল প্রকল্পে
দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৪২২ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে প্রকল্পটির ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই ব্যয় বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে এই প্রকল্পের লট-২ এর পূর্ত কাজের ব্যয় ৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা বাড়ানোর অনুমোদন দেওয়া হয়। একই বৈঠকে দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সিঙ্গাপুর থেকে ১ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এছাড়া যশোরে ও কক্সবাজার ১০তলা বিশিষ্ট দুটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় মরক্কো ও কাফকো থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলেগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাব নিয়ে আসে রেলপথ মন্ত্রণালয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনে প্রকল্পের পূর্ত কাজ সিটি জয়েন ভেঞ্চার-এর সঙ্গে ৩ হাজার ২৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় ক্রয়ের চুক্তি করা হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে বাস্তবতার আলোকে নির্মাণ কাজের কিছু আইটেম হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৪২১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৫ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হলে উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, ৬০টি বক্স কালভার্টের স্থানে ১৩৬টি বক্সকালভার্ট নির্মাণ, ৫টি স্টেশনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, কালভার্টের স্পেনের দৈর্ঘ্য ৪৭৬ মিটারের পরিবর্তে ৮২৫ মিটার, ব্রিজের পাইলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধিসহ আরও বেশ কিছু কাজ অতিরিক্ত করতে হয়েছে বিধায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে গত ২৭ মার্চ অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পের একটি প্যাকেজের লট-২ এর পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে সিসিইসসি এবং ম্যাক্স। প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ছিল ৩ হাজার ৮৬৯ কোটি ৪১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৭০ টাকা। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্রে বাস্তবতার আলোকে নির্মাণ কাজের কিছু আইটেম হ্রাস বা বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৪১ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৭ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়।
সিঙ্গাপুর থেকে আসবে ৫৮৬ কোটি টাকার এলএনজি : দেশের জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সিঙ্গাপুর থেকে ১ কার্গো এলএনজি আমদানি করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮’ অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি আমদানি করা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ৫৮৬ কোটি ৪৬ লাখ ২৭ হাজার ৫৯ টাকায় এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। একই সঙ্গে বাংলাদেশ নির্বচন কমিশনের জন্য ৪০৬ কোটি ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ৮৪০ টাকার ‘ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড’ ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
যশোর ও কক্সবাজারে ১০তলা হাসপাতাল : যশোরে ও কক্সবাজার ১০তলা বিশিষ্ট দুটি হাসপাতাল ভবন নির্মাণের ব্যয় অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। একই সঙ্গে কুমিল্লার পুলিশ লাইনের ভবন নির্মাণে অতিরিক্ত ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ তিন প্রকল্পে মোট ৪৭৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৫ টাকা ব্যয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ‘এস্টাব্লিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল অ্যান্ড অ্যানসিলারি বিল্ডিং ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা অ্যান্ড নোয়াখালী (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজার জেলায় ১০তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি দরপত্র জমা পড়ে।
৪৭৭ কোটি টাকার সার কিনছে সরকার : রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় মরক্কো ও কাফকো থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন সার আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩০ হাজার টন ইউরিয়া এবং ৪০ হাজার টন ডিএপি সার রয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় মরক্কোর থেকে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দিয়েছে।
জানা গেছে, বিএডিসি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে মরক্কো থেকে ডিএপি সার আমদানি করে। এর আগে সম্পাদিত চুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ায় বিদ্যমান চুক্তির শর্তগুলো অভিন্ন রেখে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পুনরায় চুক্তি নবায়ন করা হয়।
ভোরের আকাশ/এসএইচ