নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫ ০৯:১৫ এএম
নানা জটিলতায় রাখাইনে মানবিক করিডোর
সহসাই কাটছে না রাখাইনে মানবিক করিডোর জটিলতা। নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়টি কেবল বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সরকার তথা দেশটির সেনাবাহিনীর সম্মতি থাকতে হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত বিরোধিতামূলক অবস্থান তো রয়েই গেছে। ‘করিডোর’ ইস্যুটি রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশটির রাজধানী এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি আরাকান আর্মির অস্ত্রসহ অন্য রসদ সরবরাহের পথও জান্তা বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়া ‘করিডোর’ ইস্যু বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার-দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও যেকোনো সংঘাত লেগে যেতে পারে।
নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। গত রোববার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে গত মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আঞ্চলিক রাজনীতি জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতজনিত পরিস্থিতি বিবেচনার বাইরেও রাখাইনে চীন ও ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ রয়েছে।বঙ্গোপসাগরের আশপাশে চীন ও ভারতের তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ভালোভাবে না নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশ দুটি হয়তো চাইবে না বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে করিডোর যাক বা তৃতীয় কোনো পক্ষ এ অঞ্চলে এসে পড়ুক।
করিডোর বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা : জাতিসংঘের পক্ষ থেকে করিডোর দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব সহজেই এই করিডোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেননা এই করিডোরের জন্য মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি উভয়পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। এক পক্ষ রাজি না থাকলে এই করিডোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এখন উভয়পক্ষ রাজি হবে কিনা সেটা কেউ নিশ্চিত নন। এটা আলোচনার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে করিডোর হলে সেখানে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এখন মিয়ানমার সরকার যদি দেখে এই করিডোরের ফলে আরাকান আর্মি লাভবান হচ্ছে। তখন তারা কি বসে থাকবে? তখনই সমস্যাটা তৈরি হবে। তখন এই করিডোরই আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগর এলাকা দিয়েও রাখাইনে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তাসামগ্রী পাঠানো সম্ভব। তাহলে কেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই করিডোর দেয়া হবে?
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শর্তগুলো প্রকাশ করেনি। শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ কী চেয়েছে কিংবা সেই একই করিডোর দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগ থাকবে কিনা- সেটা জানা জরুরি। এছাড়া এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা এমন আরো কোনো শক্তি যুক্ত আছে কিনা বা হবে কিনা, সেটাও জানা জরুরি। মিয়ানমারকে নিয়ে এমনিতেই আমরা ঝামেলায় আছি। আবার নতুন করে যেন এ প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, আমার জিনিস থেকে কিংবা জাতিসংঘের সহায়তা আমি পৌঁছে দিচ্ছি কিনা আরাকানে-আমি তো আরাকানের বর্ডার পর্যন্ত দিতেই পারি। আমার নিরাপত্তাবাহিনী আরাকানে ঢুকবে কিনা, সেটা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এখান থেকে জাতিসংঘ যদি যেতে চায় এবং আরাকান আর্মি যদি রাজি থাকে, এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ওই জাতিসংঘের কর্মীদের নিরাপত্তায় জড়িত কিনা, সেটা নিয়েই জটিলতা।
রাজনীতিতে উত্তাপ : রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে দেশের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করিডোর দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, এক্ষেত্রে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি ঠিক হয়নি। উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া। এই করিডোর দেওয়ার ফলে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকি’র মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তাজনিত বিষয় জড়িত থাকতে পারে।’ গত সোমবার বিকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’
সবার সঙ্গে কথা বলেই মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত : জাতিসংঘ উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোরে রাজি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘করিডোরের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে সবার সঙ্গে কথা বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘মানবিক করিডোরে আমরা রাজি যদি জাতিসংঘ এটার উদ্যোগ নেয়। এই পুরো জিনিসটা হবে দুটি দেশের সঙ্গে কথা বলে। জাতিসংঘ যখন কাজ করে তারা সেখানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অর্থাৎ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলবে, আমাদের সঙ্গেও কথা বলবে। বলে তারপরই তো সিদ্ধান্তে আসবে।’
মানবিক করিডোর নিয়ে সাম্প্রতিক নানা আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যে শফিকুল আরো বলেন, ‘রাখাইনে এটা (মানবিক করিডরের) কথা আসছে, কারণ সেখানে গৃহযুদ্ধের মতো একটি সহিংসতা চলছে। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যারা আছে, রাখাইনে যারা আছে, সেখানে মানবিক একটা সংকট হয়েছে।’
করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যকে ‘প্রিম্যাচিউর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সর্বসম্মতিক্রমে হবে। আর আমরা মনে করি যে এখনো এটা অনেক অনেক দূরের বিষয়। আমরা তো বলেছি, এটা যখন চূড়ান্ত বিষয়ে আসবে তখন সবার সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ
নিখিল মানখিন
প্রকাশ : ৩ ঘন্টা আগে
আপডেট : ৩ ঘন্টা আগে
নানা জটিলতায় রাখাইনে মানবিক করিডোর
সহসাই কাটছে না রাখাইনে মানবিক করিডোর জটিলতা। নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করিডোর বাস্তবায়নের বিষয়টি কেবল বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সরকার তথা দেশটির সেনাবাহিনীর সম্মতি থাকতে হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অব্যাহত বিরোধিতামূলক অবস্থান তো রয়েই গেছে। ‘করিডোর’ ইস্যুটি রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইনে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হলেও দেশটির রাজধানী এখনো সরকারি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাশাপাশি আরাকান আর্মির অস্ত্রসহ অন্য রসদ সরবরাহের পথও জান্তা বাহিনী বন্ধ করে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সম্মতি ছাড়া ‘করিডোর’ ইস্যু বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার-দুই দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ও যেকোনো সংঘাত লেগে যেতে পারে।
নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধে জর্জরিত মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। গত রোববার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে গত মঙ্গলবার মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
আঞ্চলিক রাজনীতি জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং সংঘাতজনিত পরিস্থিতি বিবেচনার বাইরেও রাখাইনে চীন ও ভারতের বিপুল অর্থনৈতিক বিনিয়োগ রয়েছে।বঙ্গোপসাগরের আশপাশে চীন ও ভারতের তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ভালোভাবে না নেয়ার সম্ভাবনা বেশি। নিরাপত্তার প্রশ্নে দেশ দুটি হয়তো চাইবে না বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে করিডোর যাক বা তৃতীয় কোনো পক্ষ এ অঞ্চলে এসে পড়ুক।
করিডোর বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা : জাতিসংঘের পক্ষ থেকে করিডোর দেওয়ার প্রস্তাব থাকলেও তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, খুব সহজেই এই করিডোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেননা এই করিডোরের জন্য মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মি উভয়পক্ষের সম্মতি প্রয়োজন। এক পক্ষ রাজি না থাকলে এই করিডোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এখন উভয়পক্ষ রাজি হবে কিনা সেটা কেউ নিশ্চিত নন। এটা আলোচনার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে করিডোর হলে সেখানে নিরাপত্তাঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এখন মিয়ানমার সরকার যদি দেখে এই করিডোরের ফলে আরাকান আর্মি লাভবান হচ্ছে। তখন তারা কি বসে থাকবে? তখনই সমস্যাটা তৈরি হবে। তখন এই করিডোরই আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গোপসাগর এলাকা দিয়েও রাখাইনে ত্রাণ ও খাদ্য সহায়তাসামগ্রী পাঠানো সম্ভব। তাহলে কেন বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এই করিডোর দেয়া হবে?
চীনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শর্তগুলো প্রকাশ করেনি। শর্ত হিসেবে বাংলাদেশ কী চেয়েছে কিংবা সেই একই করিডোর দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার সুযোগ থাকবে কিনা- সেটা জানা জরুরি। এছাড়া এ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা ভারত কিংবা এমন আরো কোনো শক্তি যুক্ত আছে কিনা বা হবে কিনা, সেটাও জানা জরুরি। মিয়ানমারকে নিয়ে এমনিতেই আমরা ঝামেলায় আছি। আবার নতুন করে যেন এ প্রতিবেশীর সঙ্গে কোনো সংকট তৈরি না হয়, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, আমার জিনিস থেকে কিংবা জাতিসংঘের সহায়তা আমি পৌঁছে দিচ্ছি কিনা আরাকানে-আমি তো আরাকানের বর্ডার পর্যন্ত দিতেই পারি। আমার নিরাপত্তাবাহিনী আরাকানে ঢুকবে কিনা, সেটা স্পষ্টভাবে বলতে হবে। এখান থেকে জাতিসংঘ যদি যেতে চায় এবং আরাকান আর্মি যদি রাজি থাকে, এটা নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী ওই জাতিসংঘের কর্মীদের নিরাপত্তায় জড়িত কিনা, সেটা নিয়েই জটিলতা।
রাজনীতিতে উত্তাপ : রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে দেশের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করিডোর দেয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ থেকে ‘মানবিক করিডোর’ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের যে ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ নিয়েছে তাতে দেশের ‘স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির’ মুখে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার মতে, এক্ষেত্রে সরকার এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এটি ঠিক হয়নি। উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া। এই করিডোর দেওয়ার ফলে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকি’র মুখে পড়বে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘রাখাইনের সঙ্গে মানবিক করিডোরের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এ বিষয়টি জাতির সামনে স্পষ্ট করা দরকার। কারণ এর সঙ্গে অনেক নিরাপত্তাজনিত বিষয় জড়িত থাকতে পারে।’ গত সোমবার বিকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘের অনুরোধে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে রাখাইনে করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। এর নিন্দা জানায়। আমরা এর প্রতিবাদ জানাব।’
সবার সঙ্গে কথা বলেই মানবিক করিডোরের সিদ্ধান্ত : জাতিসংঘ উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশ মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোরে রাজি হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘করিডোরের বিষয়টি চূড়ান্ত হলে সবার সঙ্গে কথা বলে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পরে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, ‘মানবিক করিডোরে আমরা রাজি যদি জাতিসংঘ এটার উদ্যোগ নেয়। এই পুরো জিনিসটা হবে দুটি দেশের সঙ্গে কথা বলে। জাতিসংঘ যখন কাজ করে তারা সেখানে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে অর্থাৎ মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলবে, আমাদের সঙ্গেও কথা বলবে। বলে তারপরই তো সিদ্ধান্তে আসবে।’
মানবিক করিডোর নিয়ে সাম্প্রতিক নানা আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যে শফিকুল আরো বলেন, ‘রাখাইনে এটা (মানবিক করিডরের) কথা আসছে, কারণ সেখানে গৃহযুদ্ধের মতো একটি সহিংসতা চলছে। সেখানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যারা আছে, রাখাইনে যারা আছে, সেখানে মানবিক একটা সংকট হয়েছে।’
করিডোর নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর বক্তব্যকে ‘প্রিম্যাচিউর’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটা সর্বসম্মতিক্রমে হবে। আর আমরা মনে করি যে এখনো এটা অনেক অনেক দূরের বিষয়। আমরা তো বলেছি, এটা যখন চূড়ান্ত বিষয়ে আসবে তখন সবার সঙ্গে কথা বলে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
ভোরের আকাশ/এসএইচ