চতুর্থ সাক্ষীর জবানবন্দি
ভোরের আকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২৫ ০৭:৩২ পিএম
সংগৃহীত ছবি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে দুইজন পুলিশকে গুলি করতে দেখেছেন বলে সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্দোলনকারী আরেক শিক্ষার্থী। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ বুধবার (৬ আগস্ট) এই সাক্ষ্য দেন বেরোবি’র মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিনা মুরমু।
জবানবন্দির একপর্যায়ে রিনা বলেন, ঘটনার দিন আমি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম, সেখান থেকে আবু সাঈদকে গুলি করতে দেখেছি। দুইজন পুলিশ তাকে গুলি করে। পরে জানতে পারি তাদের নাম আমির ও সুজন চন্দ্র।
সাক্ষী রিনা মুরমু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরো বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, ছাত্রলীগ ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের যারা গুলি করেছিল, তারা সবাই দায়ী। আমি তাদের বিচার চাই।
সাক্ষ্যগ্রহণের একপর্যায়ে রিনাকে এ বিষয়ে জেরা করা হয়। জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। বুধবার (৬ আগস্ট) ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম শুনানি করেন।
এ সময় অন্য প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়া আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এছাড়া এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল। সঙ্গে মামলায় সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য শুরু হয় গত ৩ আগস্ট। তৃতীয় দিনের মতো চতুর্থ সাক্ষ্যগ্রহণ চলে আজ।
এর আগে, গত ৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে খোকন চন্দ্র বর্মণের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করেন আদালত। এরপর ৪ আগস্ট দ্বিতীয় সাক্ষী শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও তৃতীয় সাক্ষী পারভীন সাক্ষ্য দিয়েছেন। চতুর্থজন হিসেবে তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার সাক্ষ্য দেন রিনা মুরমু।
এর আগে, গত ৩ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারিক প্যানেলে প্রথমে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনের পরপরই এই মামলায় প্রথম সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন খোকন চন্দ্র বর্মণ। আজ তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ চলে।
চলতি বছর ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হাজির হতে একটি বাংলা ও একটি ইংরেজি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন এবং পরদিন দুটি পত্রিকায় শেখ হাসিনা ও কামালকে ৭ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দিয়ে এই মামলায় অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ী শুনানি শেষে গত ১০ জুলাই এই মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এ বছর ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় অভিযুক্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে অভিযোগ গঠনের আবেদন করে প্রসিকিউশন।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনালে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এই মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরো দুটি মামলা রয়েছে।
এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামী করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচারকাজ চলছে।
ভোরের আকাশ/এসএইচ