আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৫ ১২:৪৫ এএম
ইরানে মোসাদের গোয়েন্দা অভিযানের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে
ইরানের পরমাণু স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলা নিয়ে যখন আলোচনার ঝড় বইছে, ঠিক তখনই আরেকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে—বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূত্র ও গোয়েন্দা বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের অভ্যন্তরে বহু বছর ধরেই গোপনে মোসাদ (ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা) গড়ে তুলছিল একাধিক গোপন ঘাঁটি। এসব ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও রিমোট-চালিত অস্ত্রের ভয়ঙ্কর সব অভিযান।
ভেতর থেকেই হামলার ছক!
বিশ্লেষকদের দাবি, ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলার সূচনা হয়েছে বাইরে থেকে নয়, বরং ভেতর থেকেই। দীর্ঘ সময় ধরে তৈরি করা মোসাদ নেটওয়ার্ক এই অভিযানের কেন্দ্রে ছিল। স্থানীয় এজেন্ট, চোরাই অস্ত্র, থ্রিডি প্রিন্টার, এমনকি গোপন কর্মশালার মাধ্যমে এসব ঘাঁটি ছিল অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাব।
ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানে তিনতলা একটি ভবনেই তৈরি করা হচ্ছিল আত্মঘাতী ড্রোন! সেখানে মিলেছে বিপুল যন্ত্রাংশ, স্যাটেলাইট-নিয়ন্ত্রিত গাইডেন্স সিস্টেম, লঞ্চার ও বিস্ফোরক। গত ১৬ জুন এই অভিযানের সঙ্গে জড়িত দুই মোসাদ এজেন্টকে গ্রেফতারও করা হয়।
ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও স্মার্ট অস্ত্রের মরণফাঁদ
এ হামলার এক ভিন্ন মাত্রা হলো রিমোট-কন্ট্রোলড স্মার্ট অস্ত্রের ব্যবহার। ইরানের অভিযোগ, ইসরায়েলের স্পাইক মিসাইল ও আত্মঘাতী ড্রোনগুলো পরিচালিত হচ্ছিল উপগ্রহ ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ২০২০ সালে ঠিক এমনভাবেই একজন শীর্ষ ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছিল। এবারও একই কৌশলের পুনরাবৃত্তি দেখা গেছে।
প্রতিরক্ষা ধ্বংস ও নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু
এই হামলায় প্রথমে আঘাত হানা হয় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর। ড্রোন, ইলেকট্রনিক জ্যামিং ও ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত আক্রমণে রাডার ও সিস্টেমগুলো অকেজো করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি লক্ষ্য করা হয় ইসলামি বিপ্লবী গার্ডের গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজমি ও তাঁর ডেপুটিকে।
ভেঙে পড়ছে সাইবার নিরাপত্তা?
হামলার পর ইরানে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সাধারণ নাগরিকদেরও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তি ব্যবহার কমানোর। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি ইঙ্গিত দেয়, ইরানের গোয়েন্দা ও সাইবার প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় গভীর ফাঁক তৈরি হয়েছে।
বহুবছরের অপারেশন: প্রযুক্তিনির্ভর ধ্বংসযজ্ঞ
যদিও ইসরায়েল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায় স্বীকার করেনি, তথাপি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা রিপোর্ট ও প্রমাণ বলছে—ইরানের ভেতরেই গড়ে তোলা গোপন নেটওয়ার্ক, সাইবার অস্ত্র, স্মার্ট ড্রোন ও স্থানীয় সহযোগীদের মাধ্যমে এই হামলা ছিল বহুবছরের পরিকল্পনার ফসল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ছিল সামরিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন, “তৃতীয় প্রজন্মের” গোপন হামলা, যা একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে থেকেই তাকে দুর্বল করে দেয়।
সূত্র: বিবিসি, আল-মনিটর, মিডল ইস্ট আই
ভোরের আকাশ//হ.র