আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫ ০৩:১৪ এএম
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কচাপে ভারত, সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে ভয়াবহ চাপে পড়েছে ভারত। রাশিয়া থেকে তেল ও অস্ত্র আমদানির কারণে দেশটির ওপর নতুন করে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে ওয়াশিংটন। আগে থেকেই ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর থাকায় এবার তা দাঁড়াল ৫০ শতাংশে। আগামী ২৭ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অতিরিক্ত শুল্কভার ভারতকে এশিয়ার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ করযুক্ত বাণিজ্য অংশীদারে পরিণত করবে। কার্যত এটি নিষেধাজ্ঞার মতো প্রভাব ফেলবে। এর ফলে ভারতের রপ্তানিমুখী শিল্প বড় ধাক্কা খেতে পারে এবং দেশটির প্রবৃদ্ধি অর্ধ শতাংশের বেশি কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
ইতিমধ্যেই এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা ভারতীয় কারখানাগুলোতে দেওয়া অর্ডার বাতিল করছেন একের পর এক। কেউ কেউ আবার অর্ডার অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছেন। ভারতের তৈরি পোশাক, চামড়া ও ভোগ্যপণ্যের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে যেত। কিন্তু নতুন শুল্ক আরোপে এসব পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
এক ভারতীয় ব্যবসায়ী আনন্দবাজারকে বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রে আর প্রতিযোগিতা করতে পারছি না। যেখানে বাংলাদেশের শুল্ক ২০ শতাংশ, সেখানে আমাদের দিতে হচ্ছে ৫০ শতাংশ। ফলে ক্রেতারা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকছেন।”
অর্ডার হারিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা এখন বিকল্প পথ খুঁজছেন। সেই সমাধান হিসেবে তাঁরা দেখছেন বাংলাদেশকে। দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্ববাজারে সুনাম কুড়িয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্ক মাত্র ২০ শতাংশ, যা ভারতের তুলনায় অনেক কম।
ফলে ভারতের বাতিল হওয়া বিপুল অর্ডার চলে আসছে বাংলাদেশে। মার্কিন ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছেন বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে। এমনকি ভারতের অনেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার উদ্যোগও নিচ্ছেন।
তাদের পরিকল্পনা শুধু স্বল্পমেয়াদি নয়। দীর্ঘ মেয়াদে মার্কিন বাজার ধরে রাখতে ভারতীয় উদ্যোক্তারা বাংলাদেশকে ‘মধ্যবর্তী সেতু’ হিসেবে ব্যবহার করতে চান। অর্থাৎ সরাসরি নয়, বরং বাংলাদেশের কারখানার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য পাঠানোর কৌশল গ্রহণ করতে চাইছেন তারা।
বাংলাদেশি পোশাক কারখানাগুলো ইতোমধ্যেই বাড়তি অর্ডারের চাপে পড়েছে। মালিকরা জানাচ্ছেন, গত বছরের তুলনায় এবার তাদের অর্ডার কয়েক গুণ বেড়েছে। হঠাৎ চাপ সামলাতে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে ইতিবাচক দিক হলো—এতে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।
এক শীর্ষ রপ্তানিকারক বলেন, “যেসব ক্রেতা আগে ভারতে অর্ডার দিতেন, এখন তারাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অর্ডার এত বেড়েছে যে, সময়মতো ডেলিভারি দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।”
অর্থনীতিবিদদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হলেও বাংলাদেশকে এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়ানো এবং নতুন বাজার দখলের এ সময়কে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের শিল্পখাত দীর্ঘমেয়াদে শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারবে।
সব মিলিয়ে প্রশ্ন এখন একটাই—বাংলাদেশ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতের আর টিকে থাকার উপায় কী?
ভোরের আকাশ//হ.র