ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫ ০১:২৮ পিএম
সংগৃহীত ছবি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমানে দেশের গৃহযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংঘর্ষক্ষেত্র হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমাঞ্চলীয় এই অঞ্চলটিতে আরাকান আর্মি (এএ) বিদ্রোহীরা দ্রুত অগ্রযাত্রা করেছেন, যা জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। রাখাইনের মোট ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে বর্তমানে ১৪টি বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রদেশের রাজধানী সিত্তে এবং কৌশলগত গুরুত্বসম্পন্ন কিয়াউকফিউ, যেখানে চীনের নির্মিত গভীর সমুদ্র বন্দরের পাশাপাশি তেল-গ্যাসের পাম্পলাইন বিদ্যমান।
এএ’র এই অগ্রগতি সামরিক জান্তার জন্য বিরাট ধাক্কা হিসেবে ধরা হচ্ছে। তারা বিজ্ঞস্তার্জন করেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক যুগ থেকে পরিচালিত একটি অভ্যন্তরীন সশস্ত্র সংগ্রাম।
সামরিক বাহিনী এখন পর্যন্ত এই বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর অনেকটাই আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে পড়ে গেছে। এএ ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় জনসংখ্যার সুরক্ষা এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।
তবে অবস্থা এতটাই জটিল যে উভয় পক্ষই যুদ্ধক্ষেত্রে সাধারণ নাগরিকদের জোরপূর্বক নিয়োজিত করছে, যা মানবিক দুরবস্থা ক্রমশ বাড়াচ্ছে।
এখন প্রায় ২০ লাখ মানুষ মানবিক সঙ্কটে রয়েছে। জাতিসংঘ ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, রাখাইনের অর্ধেকেরও বেশি পরিবারের ন্যূনতম খাদ্য চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছেনা।
সামরিক হামলায় অন্তত ৪০২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী-শিশু।
উভয় পক্ষই তাদের বাহিনীতে জোরপূর্বক সাধারণ নাগরিকদের নিয়োগ দিচ্ছে। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীদের বাধ্যতামূলকভাবে অস্ত্র হাতে তোলা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট যুদ্ধে আরও জটিলতা সৃষ্টি করেছে। আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে, তবে তাদের উপর নির্যাতনের খবর গোপন নয়।
একই সঙ্গে তারা বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে জান্তা বাহিনী, যা বিদ্রোহীদের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়।
এই দ্বন্দ্বে চীন ও ভারতের কৌশলগত বিনিয়োগ বড় প্রভাব ফেলছে, যা রাখাইন রাজ্যের সামরিক ও রাজনৈতিক অবস্থানের ওপর আঞ্চলিক শক্তির নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।
বিশ্লেষকদের মতে, আরাকান আর্মি যদি পূর্ণরূপে রাখাইনের বিস্তীর্ণ উপকূল দখল করে ফেলে, তবে তারা শুধু মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহীর মধ্যেই নয়, বরং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
এর মাধ্যমে এই সংঘাতের সঙ্গে জড়িত দেশসমূহের নিরাপত্তা ও রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। পাশাপাশি, বাংলাদেশে শরণার্থী সংকট এবং সীমান্ত নিরাপত্তার দিক থেকে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
এই অবস্থা মিয়ানমারের দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতির জন্য এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে যার প্রভাব বহুলকালের জন্য স্থায়ী হতে পারে.মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি (এএ) বিদ্রোহীদের দ্রুত অগ্রযাত্রা দেশটির গৃহযুদ্ধ ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।
তারা এখন রাখাইনের মোট ১৭টি টাউনশিপের মধ্যে ১৪টি নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে প্রদেশের রাজধানী সিত্তে ও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কিয়াউকফিউ, যেখানে চীনের নির্মিত গভীর সমুদ্রবন্দর ও তেল-গ্যাসের পাইপলাইন রয়েছে।
এই অগ্রযাত্রা মিয়ানমারের সামরিক জান্তাকে বড় ধরনের পরাজয়ের মুখোমুখি করেছে। জান্তা বাহিনীর অনেক উচ্চপদস্থ সদস্য আটক ও পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। উভয় পক্ষই করে সাধারণ নাগরিকদের অস্ত্রবাহক হিসেবে সামরিক কাজে নিয়োজিত করছে।
বিদ্রোহীরা ১৮-৪৫ বছর বয়সী পুরুষ ও ১৮-২৫ বছর বয়সী নারীদের জোর করে যুদ্ধে নামাচ্ছে, আর জান্তা বাহিনী প্রায় ৭০ হাজার সৈন্য নতুন করে নিয়োগ দিয়েছে।
মানবিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। জাতিসংঘের মতে, ২০ লাখের বেশি মানুষ অনাহারের শঙ্কায়। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি অনুযায়ী রাখাইনের অর্ধেকেরও বেশি পরিবার ন্যূনতম খাবারের চাহিদা পূরণ করতে পারে না।
সামরিক হামলায় গত দেড় বছরে অন্তত ৪০২ বেসামরিক নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৯৬ শিশু।
রোহিঙ্গাদের ওপর আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠলেও তারা তা অস্বীকার করছে। তারা অভিযোগ করে জান্তা সরকারই রোহিঙ্গাদের অস্ত্র সরবরাহ করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে সংকট বাড়ছে, যা বাংলাদেশে শরণার্থী সংকটকেও প্রভাবিত করছে।
চীন ও ভারতের কৌশলগত বিনিয়োগ রাখাইন অঞ্চলের সংঘাতকে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে গড়ে তুলেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাখাইনের বিস্তীর্ণ উপকূল দখল করতে পারলে আরাকান আর্মি শুধু মিয়ানমারের প্রধান বিদ্রোহী বাহিনী নয়, বরং আঞ্চলিক শক্তি হিসেবেও আবির্ভূত হতে পারে। এর ফলে বাংলাদেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
সরকারি বাহিনীর পরাজয় ও বিদ্রোহীদের অগ্রযাত্রা মিয়ানমারে দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের নতুন অধ্যায় সূচিত করেছে, যা নিয়ে আশেপাশের দেশগুলোর সতর্কতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাখাইন রাজ্যের এই সংকট নিয়ন্ত্রণ এবং সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ মনোযোগ জরুরি হয়ে উঠেছে।
ভোরের আকাশ/তা.কা