ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫ ০২:৪১ পিএম
সংগৃহীত ছবি
দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ট্রাম্প এখন পর্যন্ত যে উত্তেজনাপূর্ণ অঞ্চলটির বিষয়ে তেমন একটা মনোযোগী হননি, সেটি হলো উত্তর কোরিয়া; যদিও প্রথম মেয়াদে ব্যক্তিগত কূটনীতির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং-উনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ট্রাম্প।
গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে-মিউংয়ের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প হয়তো কোরীয় উপদ্বীপে বড় ধরনের কূটনীতিক সাফল্যের সুযোগ পাবেন। লি জে-মিউং উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির পক্ষে বলে থাকেন। ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেন ইস্যুতে কোনো সমঝোতা করতে পারেননি ট্রাম্প।
মার্কিন থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ কোরিয়া চেয়ারের বিশেষজ্ঞ ভিক্টর চা মনে করেন, ট্রাম্প এমন অবস্থায় একটি বড় খবরের জন্য মুখিয়ে আছেন।ভিক্টর চায়ের সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের এশিয়া–বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনেরও অভিজ্ঞা আছে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, আলাস্কা বৈঠক থেকে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে এই বৈঠক নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী ট্রাম্প। তিনি এ বৈঠক থেকে ভালো কিছু প্রত্যাশা করছেন। প্রথম মেয়াদে কিম জং-উনের সঙ্গে তিন দফা বৈঠকের পর ট্রাম্প কিমকে খুব পছন্দ করেছিলেন। একবার তো তিনি বলেই বসেন যে তাঁরা একে অপরের প্রেমে পড়েছেন।
তবে এখন যদি দেখা হয়, ট্রাম্প হয়তো ভিন্ন এক কিমের মুখোমুখি হবেন—যিনি আগের তুলনায় আরও বেশি সাহসী ও শক্তিশালী।
পশ্চিমা ও দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে ১০ হাজারের বেশি সেনা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে। বিনিময়ে রাশিয়া থেকে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে তারা।
ভিক্টর চা বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সংলাপে বসতে না চাওয়ার পেছনে যদি একটি কারণও থেকে থাকে, তা হলো, তারা এখন রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু পাচ্ছে।সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপে বসার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে পিয়ংইয়ং সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিল।
গত এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল অভিশংসিত হলে দেশটি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছিল। পরে জুনে আয়োজিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হন লি।
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়ার শাসনব্যবস্থায় এমন পটপরিবর্তন হয়, যা কিছুটা অস্বস্তির জন্ম দেয়। তবে লির প্রশাসন শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি শুল্কচুক্তি করতে সক্ষম হয়।ক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়া সংলাপে বসতে আগ্রহী না হওয়ার অন্তত একটি কারণও যদি থেকে থাকে, তা হলো তারা এখন রাশিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু পাচ্ছে।
সাবেক শ্রমবিষয়ক আইনজীবী লি বাম ঘরানার হলেও কিছু বিষয়ে তাঁর অবস্থান দক্ষিণ কোরীয় রক্ষণশীলদের তুলনায় ট্রাম্পের সঙ্গে বেশি মেলে।লি ও ট্রাম্প - দুজনই অতীতে দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন সেনাদের মোতায়েন রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন।
প্রায় ২৮ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা সেখানে মোতায়েন রয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার নীতি গ্রহণ করেন। যেমন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছেন, যা উত্তর কোরিয়াকে ক্ষুব্ধ করেছে।
বড় ধরনের একটি প্রতীকী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে লি ওয়াশিংটন যাওয়ার আগেই জাপান সফর করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি ত্রিপক্ষীয় জোটের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। যদিও দক্ষিণ কোরিয়ার বামপন্থীরা জাপানের ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে বরাবরই সমালোচনা করে আসছেন।লি এমন সময়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন, যখন কোরিয়া উপদ্বীপে উত্তেজনা চরমে।
গত শনিবার উত্তর কোরিয়া দুটি নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। সম্প্রতি কয়েকজন উত্তর কোরিয়ার সেনা সীমান্ত অতিক্রম করামাত্রই দক্ষিণ কোরিয়ার সেনারা সতর্কতামূলক গুলি চালান।
উত্তর কোরিয়া বরাবরই পরমাণু কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে আসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালানোর পর উত্তর কোরিয়ার এ অবস্থান আরও কঠোর হয়েছে।
চলতি বছরের শুরু থেকে ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ নজিরবিহীনভাবে উত্তর কোরিয়াকে ‘পারমাণবিক শক্তিধর দেশ’ বলে সম্বোধন করেছেন; যদিও এর মানে এই নয় যে তারা উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের বৈধতা স্বীকার করেছেন।লি উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তিন ধাপের পরিকল্পনার কথা বলেছেন। তা হলো প্রথমে কর্মসূচি স্থগিত করা, পরে সীমিত করা এবং শেষে এটিকে বিলীন করে দেওয়া।
স্টিমসন সেন্টারের কোরিয়া–বিষয়ক কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ গবেষক র্যাচেল মিনইয়ং লি বলেন, উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে লির এমন নমনীয় অবস্থান ‘ট্রাম্পের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কারণ, তিনিও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সংলাপে আগ্রহী’।
মিনইয়ং লি আরও বলেন, দক্ষিণ কোরীয় সরকার মনে করে, উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সমর্থন পেলে তা হবে তাদের বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য।
এতে শুধু দুই দেশ একই পথে এগোবে না, বরং উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা থেকে সিউলকে বাদ দেওয়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। তবে উত্তর কোরিয়া কখনো পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্যে কোনো সংলাপে রাজি হবে কি না, তা নিয়ে র্যাচেল সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের পক্ষে। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে তারা দীর্ঘমেয়াদি সুযোগ হিসেবে দেখছে। তাই এ ধরনের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার কোনো কারণ নেই।
ভোরের আকাশ/তা.কা