ভোরের আকাশ প্রতিবেদন
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫ ০২:৪৪ পিএম
সংগৃহীত ছবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একাধিক পদক্ষেপ নিলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
বারবার মার্কিন দূত পাঠানো, বৈঠকের আয়োজন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ট্রাম্প নিতে ভোলেননি। এর পরও তার কূটনৈতিক বিজয় ধরা দিচ্ছে না। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজ সিদ্ধান্তে এখনও অটল। তাঁর দেওয়া শর্ত পূরণ না হলে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দখলীয় অঞ্চল ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তি আলোচনা কোন দিকে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম এনবিসি রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ইউক্রেনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই কিসলিয়েতসার সঙ্গে কথা বলেছে।
সেখান থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, শান্তি আলোচনা নিয়ে ট্রাম্প-পুতিন যতটা না কাছাকাছি অবস্থানে ছিলেন, ভ্যান্স ও ল্যাভরভ ততটাই দূরে ছিলেন।
ল্যাভরভের সঙ্গে কথা বলেছে এনবিসি।
এ সময় তিনি জানান, পুতিন ও জেলেনস্কি সরাসরি বৈঠক আয়োজনের সময় এখনও আসেনি। তাঁর দাবি, রাশিয়া নয়, ইউক্রেনই শান্তিচুক্তির অগ্রগতিতে বাধা দিচ্ছে। তিনি আসল কথা না বলে নাটকীয় বক্তব্য দিচ্ছেন বারবার।
ল্যাভরভ বলেন, ‘আমরা এমন একজনের সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে পারি, যিনি নিজেকে বড় নেতা হিসেবে জাহির করতে চাচ্ছেন। তবে ইউক্রেনের কিসলিয়েতসা এনবিসির সঙ্গে কথা বলার সময় কিছুটা মধ্যপন্থা অবলম্বন করেছেন। তিনি দুই দেশকে আলোচনায় বসানোর ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কাজের প্রশংসা করেন। তবে তিনি মস্কোর কিছু বক্তব্যকে ‘উগ্র’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
তিনি মনে করেন, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। অর্থপূর্ণ আলোচনার জন্য পুতিনের কোনো আগ্রহ তিনি দেখতে পান না।
কিসলিয়েতসা বলেন, ইউক্রেনের জনসাধারণ স্পষ্টতই শান্তির জন্য নিজ ভূমি রাশিয়ার হাতে তুলে দিতে রাজি নয়। এটি শুরুতেই জেলেনস্কি পুতিনকে জানিয়ে দিয়েছেন।
তবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স সবচেয়ে আশাবাদী সুরে অভিনয় করেন। তিনি স্বীকার করেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেনের উল্লেখযোগ্য ছাড়ের বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেন।
তিনি বলেন, আমরা কোনো পক্ষকে এমন চাপে ফেলতে চাই না, যে চাপ তারা সহ্য করতে পারবে না।
নিষেধাজ্ঞার হুমকি ট্রাম্পের: দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানে কোনো অগ্রগতি না হলে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। পুতিন-জেলেনস্কির মধ্যে কোনো বৈঠকের পরিকল্পনা নেই’ রাশিয়ার এমন বক্তব্য সামনে আসার পর তিনি এই হুমকি দিলেন।
ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে বলেন, আমরা কী করব, সে সম্পর্কে আমি সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে চলেছে। এটি বিশাল নিষেধাজ্ঞা বা বিশাল শুল্ক নিষেধাজ্ঞা যাই হোক।
ট্রাম্প বলেন, এই সপ্তাহে ইউক্রেনের একটি আমেরিকান কারখানায় রাশিয়ার হামলায় তিনি অসন্তুষ্ট। যার ফলে আগুন লেগেছে এবং কিছু কর্মচারী আহত হয়েছেন।
এর আগে সোমবার আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি পুতিন-জেলেনস্কি বৈঠকের ব্যবস্থা শুরু করেছেন। যুদ্ধের অবসানের জন্য এই আলোচনাই একমাত্র উপায়।
ভূখণ্ড ছাড়ের প্রস্তাব পুতিনের ফাঁদ: ইইউ- শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূমি ছাড় দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কূটনীতিক কায়া কাল্লাস।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, এটি পুতিনের সাজানো ফাঁদ, যাতে আমাদের পা দেওয়া উচিত হবে না।
দোনবাস অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চলছে। রাশিয়ার আগ্রাসনে গত এক দশকে দেড় মিলিয়নের বেশি ইউক্রেনীয় ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। ইউক্রেন বরাবরই এই অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তি আলোচনায় ভূখণ্ড বিনিময়ের কথা তুলেছে
ভোরের আকাশ/তা.কা