ছবি: সংগৃহীত
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, এই বাজেটটা আমাদের যথেষ্ট সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যে স্পিরিটটা আমরা বাজেটে দেখতে চেয়েছি, সেটা দেখিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ হলে সেন্টার ফর ডেমোক্র্যাসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত ‘বাজেট সংলাপ ২০২৫’-এ তিনি এসব কথা বলেন।
থ্রি জিরো তত্ত্ব নিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, এই বাজেটে তারা বলছে তারা থ্রি জিরো বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু এটার জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। এ সরকার নির্বাচিত সরকার, তবে অন্তর্বর্তী বটে। আমাদের লুটেরা-মাফিয়াতন্ত্রওয়ালারা বলে এটা অনির্বাচিত সরকার। এই সরকারকে আমরা মেনে নিয়েছি কেন, যেহেতু আমরা মনে করি জনগণ তাদের এটা দিয়েছে। কাজেই এ সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি।
গণঅভ্যুত্থানের পরে কালো টাকা সাদা হয় কোন যুক্তিতে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, লুটপাটতন্ত্রের সবচেয়ে দৃশ্যমান বিষয় হলো কালো টাকা সাদা করা। অবশ্যই এটাকে সংশোধন করতে হবে। কালো টাকা এখন সাদা হয় কোন যুক্তি? গণঅভ্যুত্থানের পরে এটা করার কোনো যুক্তি নেই।
ফরহাদ মজহার বলেন, বাজেটে সেনাবাহিনীর জন্য আমরা কীভাবে খরচ করি তার কোনো স্পষ্ট উল্লেখ নাই। এটা হতে পারে না। আমাদের এদিকে মিয়ানমার, ওদিকে ভারত। তার মধ্যে যদি আমরা টিকে থাকতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাকে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। আর তা করতে হলে এর জন্য খরচ আছে। এটা একটা ন্যায্য খরচ। সেই খরচ আমি কোথা থেকে তুলব, কে দেবে? এটা থাকতে হবে যে টাকাটা কোথায় খরচ হচ্ছে? বাজেটে খরচ কোথায় হচ্ছে, এটা লুকিয়ে রাখা একটি খারাপ লক্ষণ।
তিনি বলেন, ৮ তারিখে (গত বছরের ৮ আগস্ট) যে সরকার গঠন করলেন, লুটপাটতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্যই কিন্তু আপনি এ সরকার করেছেন। এ সরকারের আসলে কোনো ক্ষমতা নেই। এখনো যে টিকে আছে এটা বিরাট ব্যাপার।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আর মাত্র ১২ দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে আলোচনা ফলপ্রসূ না হলে বাড়তি শুল্ক গুণতে হবে বাংলাদেশকে। শুল্ক কমানোর একটা রফা করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষি চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদলের তৃতীয় ও চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। ব্যবসায়ী সমাজে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হওয়া পণ্যসমূহ বিশেষ করে দেশের বৃহৎ রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতে এর প্রভাব কতটা পড়বে তা নিয়ে চলছে বিশ্লেষণ।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তৃতীয় দফায় সম্ভাব্য আলোচনার সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনো জানায়নি মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর (ইউএসটিআর)। শুল্ক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের ‘অবস্থানপত্র’ দেওয়া হতে পারে আজ সোমবার। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ কি কি পদক্ষেপ নেবে তা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র চূড়ান্ত হচ্ছে। আজ সোমবার ই-মেইলে সেটা পাঠানো হতে পারে।সরকারি ও বেসরকারি বিশ্লেষকদের মতে, এই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের দিকগুলো বড় আকারে সামনে এলেও বিষয়টিকে দেশটি ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য চাপ তৈরির একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পর দফায় দফায় আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এসব বৈঠকে সংশ্লিষ্টদের মতামত পাওয়ার পর বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।আলোচনায় যুক্ত বিভিন্ন বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চুক্তির প্রশ্নে মার্কিন দাবি ও শর্তের ক্ষেত্রে দুটি বিষয় স্পষ্ট। একটি বাণিজ্যসংক্রান্ত ইস্যু, অপরটি অ-বাণিজ্যসংক্রান্ত। বাণিজ্য ইস্যুগুলোর বিষয়ে বৈঠকেই সমাধান পাওয়া গেছে এবং সে অনুযায়ী বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। কিন্তু অ-বাণিজ্যসংক্রান্ত ইস্যুগুলোর বিষয়ে ইতিবাচক-নেতিবাচক উভয় দিক পর্যালোচনা করে আলোচকেরা এর জন্য সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন।এ বিষয়ে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান গত শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। তারা একটু সময় চেয়েছে। এ কারণে আমরা শুল্ক চুক্তি ইস্যুতে যে বিষয়ের ওপর চূড়ান্ত আলোচনায় যাব, তার চূড়ান্ত অবস্থানপত্র রোববারের পরিবর্তে সোমবার পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পারস্পরিক শুল্ক সংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের বিষয়ে দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের (ইউএসটিআর) সঙ্গে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরুর আগে দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন মন্ত্রণায়ের মতামত নেওয়ার পাশাপাশি-বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসারত মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর শুল্কের হার কমানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করবে বাংলাদেশ। সবার মতামত নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তৃতীয় দফায় বৈঠকে বসার প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তুতি হিসেবে গত বুধবার একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠিত হবে আরেক দফা বৈঠক। ওই বৈঠক হবে আরও কিছু নতুন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। যেখান থেকেই বাংলাদেশের কাছে চাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধা ও তাদের দেওয়া শর্ত কতটুকু মানা সম্ভব তা নির্ধারণ করবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বাণিজ্য প্রতিনিধিরা। এরপর বেশি স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্যদের পরামর্শ নেওয়া হবে বলে জানা গেছে।অর্থনীতিবিদেরা যা বলেন : ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা- বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।গতকাল রোববার একটি গোলটেবিল আলোচনায় তিনি বলেন, বাংলাদেশ আগামী দিনে কোথায় যাবে- তা নির্ধারণে এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশেষ করে পণ্য বহুমুখীকরণ, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরির ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত।যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিষয় প্রকাশ না-করা প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিষয়টি ইতিহাসে এই প্রথম দেখলাম-একটি বিষয়কে নন-পেপার না করে সরাসরি এনডিএ করা হয়েছে। যার ফলে এটি এখন একটি বাধ্যবাধকতায় পরিণত হয়েছে। এখন যদি বাংলাদেশ কোনো লবিস্ট নিয়োগ করে, তার কাছেও এই তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।তিনি আরও বলেন, কোনো দুর্বল এবং অসমন্বিত সরকারের যদি রাজনৈতিক বৈধতা না থাকে, তাহলে তাদের সফলভাবে দর কষাকষি করার নজির বিরল।সিপিডি’র সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে সরকার ভেবেছিল, আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করে ফেলবে। এ নিয়ে সরকারের এক ধরনের কৃতিত্ব নেওয়ার মানসিকতা ছিল। দরকষাকষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ভেবেছিলেন, পাল্টা শুল্ককে ১০ শতাংশ বা শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনতে পারবেন। সরকারি পর্যায়ে এমন আত্মবিশ্বাস ও অতি আত্মবিশ্বাসের খেসারত দিচ্ছি।তিনি বলেন, আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলো শুল্ক আলোচনায় কোন অবস্থায় থাকছে, সেটি আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি অশুল্ক বাধা ও ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের নানা ইস্যু আছে। সেখানে আমাদের সার্বভৌমত্ব, অন্য দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক- এসব আমরা কতটুকু করতে পারব, কতটুকু পারব না, তা-ও বিবেচনায় আনতে হবে।বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের দরকষাকষির অভিজ্ঞতা নেই। পাল্টা শুল্ক বিষয়ে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দরকষাকষি হতাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে তাতে বোঝা যায়, তারা ডব্লিউটিও’র নিয়ম খুব একটা মেনে চলছে না।এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একে আজাদ বলেন, আমার ৪০ বছরের ব্যবসা জীবনে এমন সংকট আর আসেনি। আমরা যখন সরকারের সঙ্গে কথা বললাম, লবিস্ট নিয়োগ করার জন্য বললাম, প্রধান উপদেষ্টার অফিসে মেসেজ পাঠালাম, আমাদের এক পর্যায়ে বলা হলো ৯৫ শতাংশ সমাধান হয়ে গেছে।রোববার আমাকে একটা ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে মেইল পাঠানো হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আগামী ১ তারিখ থেকে যে প্রোডাক্ট তৈরি করা হবে, সেখানে নতুন ট্যারিফ থাকলে আমি (সরবরাহকারী) কত শতাংশ শেয়ার করব, সেটি তাকে জানানোর জন্য। ওই ক্রেতার কাছে আমার রপ্তানি ৮০ মিলিয়ন ডলার। সেখানে আমি ইনকাম করি ১.৩৭ মিলিয়ন ডলার। ৮০ মিলিয়ন ডলার থেকে যদি ৩৫ শতাংশ শেয়ার করি, তাহলে আমার কী থাকবে?বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, সরকার কী করছে বা হালনাগাদে কী অগ্রগতি আছে, তা ব্যবসায়ীরা জানতে পারেনি। ওই সময় (এপ্রিল মাসে) সরকার থেকে বলা হলো তারা (সরকার) চেষ্টা করছে। কিন্তু সরকার কী করছে বা হালনাগাদে কী অগ্রগতি আছে, সেগুলো আমরা জানতে পারিনি।তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দরকষাকষিতে বেসরকারি খাতের পক্ষ থেকে গত এপ্রিলেই সরকারের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছি। ওই সময় আমরা দেশের বাইরের লবিস্ট ফার্মের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা মনে করেছি, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্য দেশ যা করবে, বাংলাদেশের সেটা করা উচিত। শুল্ক আলোচনায় বিভিন্ন খাতের অংশীজনদের সম্পৃক্ত করতে হবে।লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার ট্যারিফ ইস্যুতে কোন পথে যাচ্ছে তা নিয়ে আমরা কনফিউজড।’গত ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে। দুই শতাংশ কমিয়ে বাংলাদেশের জন্য এখন ৩৫ শতাংশ করায় সব মিলিয়ে ১ আগস্ট থেকে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর মোট শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।সংশ্লিষ্টদের মতে, ১ আগস্ট আসতে বাকি মাত্র ১২ দিন। এ সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে ভালোভাবে দরকষাকষি করতে পারলে শুল্কহার কমতে পারে। অন্যথায় ঘোষিত হারই কার্যকর হবে। সেক্ষেত্রে বিপদের শেষ থাকবে না।এর আগে বাংলাদেশের পক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে ৩ মাসের জন্য ২ এপ্রিলের ঘোষণা করা শুল্ক স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ওই সময়ের মধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়ে ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তাদের শীর্ষ পণ্যের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ কমানোর কথা বলেছিল বাংলাদেশ।মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৩৬ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এর বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এই হিসাবে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য-ঘাটতির পরিমাণ ৬১৫ কোটি ডলার।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক কমানোর শর্ত হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশ আমদানি করে সেসব পণ্যে পর্যায়ক্রমে শুল্ক, ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি হ্রাস চেয়েছে। এরই অংশ হিসাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।বিশেষ করে সরকারি খাতে ফুড ড্রিংক, বোয়িং বিমান ও মিলিটারি ইক্যুইপমেন্ট কেনার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও চীন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি সুবিধা পাবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পাকিস্তানও পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাচ্ছে। ফলে এটা সুস্পষ্ট যে, তিনটি দেশের তুলনায় তৈরি পোশাকে বাংলাদেশকে বেশি প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
ব্যাংকার মিজানুর রহমান শরিয়াহ-ভিত্তিক ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি-তে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি ব্যাংকিং খাতে ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।যোগদানের পূর্বে তিনি ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসি-তে সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসইভিপি) পদে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু হয় ১৯৯২ সালে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-তে প্রবেশনারি অফিসার হিসেবে। দীর্ঘ ২১ বছর তিনি ওই ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা ও জোনের প্রধান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।মিজানুর রহমান ফেনী, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় মোট ৮টি শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি, এজেন্ট ব্যাংকিং, মাইক্রোফাইন্যান্স, ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা এবং ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং সেবার সম্প্রসারণেও ছিল তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান।শিক্ষাজীবনে মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জনপ্রশাসনে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া তিনি এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।তিনি দেশ ও বিদেশে ব্যাংক ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তি, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক ব্যাংকিং সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, যা তাঁর পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
খুলনায় কমিউনিটি ব্যাংকের মাধ্যমে কেএমপি'র ট্রাফিক মামলার ফাইন কালেকশনের উদ্বোধন করা হয়েছে। গত ১৪ জুলাই কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি. -এর মাধ্যমে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক মামলার ফাইন কালেকশনের উদ্বোধন করা হয়। এই উপলক্ষে খুলনা ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।খুলনা মেট্রোপলিটনের পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্, সভাপতি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ এবং কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) জনাব কিমিয়া সাআদত চুক্তিটিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর শেষে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ্ ট্রাফিক মামলার ফাইন কালেকশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন।অনুষ্ঠানে কেএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ রশিদুল ইসলাম খান বিপিএম সেবা, পিপিএম বার; কেএমপি’র ডিসি ট্রাফিক সুদর্শন কুমার রায়; কেএমপি’র ডিসি হেড কোয়ার্টার মুহাম্মদ শাহনেওয়াজ খালেদ, পিপিএম সেবা; কেএমপি’র ডিসি উত্তর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; কেএমপি’র ডিসি প্রসিকিউশন শফিকুল ইসলাম; কেএমপি’র ডিসি সিটি এসবি আবুল বাশার মোহাম্মদ আতিকুর রহমান; কেএমপি’র ডিসি ডিবি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।কমিউনিটি ব্যাংকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন, কমিউনিটি ব্যাংকের হেড অব এডিসি ও হেড অব এমডি’স কো-অর্ডিনেশন টিম মোঃ মামুন উর রহমান; কমিউনিটি ব্যাংকের এসএভিপি ও শাখা ব্যবস্থাপক মোঃ রোকনুজ্জামান, খুলনা শাখা ও স্যার ইকবাল রোড (কালীবাড়ী) উপ-শাখার কর্মকর্তাসহ ব্যাংকের উর্ব্ধতন কর্মকর্তারা।ভোরের আকাশ/এসএইচ
তৈরি পোশাক খাতে ব্যবহৃত তুলাসহ একাধিক কাঁচামালে উৎসে কর (ট্যাক্স অ্যাট সোর্স) তুলে নিয়েছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রজ্ঞাপনটি স্বাক্ষর করেন এনবিআরের করনীতি সদস্য এ কে এম বদিউল আলম।প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আয়কর আইন, ২০২৩ অনুযায়ী এবং উৎসে কর বিধিমালা ২০২৪ এর সংশ্লিষ্ট বিধির আওতায় আমদানিকৃত নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর উৎসে কর হার শূন্য শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব পণ্যে এখন আর আগাম আয়কর (এআইটি) প্রযোজ্য হবে না।করমুক্ত সুবিধাপ্রাপ্ত পণ্যের তালিকায় রয়েছে বাছাইকৃত ও আঁচড়ানো তুলা, সিনথেটিক স্ট্যাপল ফাইবার, অ্যাক্রেলিক ও আর্টিফিশিয়াল স্ট্যাপল ফাইবারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের শুরুতে তুলা আমদানিতে দুই শতাংশ এআইটি আরোপ করে এনবিআর, যা নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল।বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ)-এর তথ্যমতে, দেশে ১,৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং, ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা রয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত সুতা ও কাপড়ের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে স্থানীয় বস্ত্র খাত থেকে।নতুন এই সিদ্ধান্তে দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তাঁদের মতে, আগাম কর আরোপের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শিল্প খাতের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও হ্রাস পাচ্ছিল। কর প্রত্যাহার কার্যকর হলে টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিলগুলোর মূলধনের ওপর চাপ কমবে এবং তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে।এনভয় টেক্সটাইলসের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বিষয়টিকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এটি শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। একই ধরনের অভিমত দিয়েছেন এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া। তিনি বলেন, এটি শুধুমাত্র একটি কর ছাড় নয়, বরং একটি কৌশলগত পদক্ষেপ—যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং টেকসই শিল্প গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।উল্লেখযোগ্য যে, প্রজ্ঞাপনে ৫২০১ থেকে ৫৫০৭ পর্যন্ত এইচএস কোডসমূহকে ছাড়ের আওতায় আনা হয়েছে। এসব কোডের অধীনে থাকা তুলা ও সিনথেটিক ফাইবার গার্মেন্টস শিল্পে স্পিনিং কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এনবিআরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে।বিটিএমএ দীর্ঘদিন ধরেই এই কর অব্যাহতির দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের বক্তব্য, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কর অব্যাহতির আওতায় থাকায় আগাম করের কারণে ইনপুট ও প্রকৃত আয়ের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হচ্ছিল। নতুন সিদ্ধান্তে এই অসামঞ্জস্য অনেকটাই দূর হবে বলে মনে করছে খাত সংশ্লিষ্ট মহল। ভোরের আকাশ/হ.র